আশুগঞ্জ মোকামে ধানের সংকট, বেচাকেনা কমেছে ৬০ শতাংশ
- সংকটের কারণে ধানের দাম মণ প্রতি বেড়েছে ১০০ টাকার বেশি
- সংকট দীর্ঘ হলে চালের দাম বাড়বে, বন্ধ হবে অনেক চালকল
- ধানের সংকট থাকতে পারে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত
- সংকটের কারণে বেচাকেনা কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ধানের মোকামে তীব্র হচ্ছে ধানের সংকট। ফলে ক্রমেই বাড়ছে ধানের দাম। সংকট আর মূল্যবৃদ্ধির ফলে ধানের বেচাকেনা কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ।
ধানের এই সংকট আরও অন্তত ১ মাস থাকবে বলে জানিয়েছেন মোকাম সংশ্লিষ্টরা। তবে সংকট প্রকট হলে চালের দাম বাড়ার পাশাপাশি অনেক চালকল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চালকল মালিকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শত বছরেরও বেশি সময় ধরে আশুগঞ্জের মেঘনা নদীর ভিওসি ঘাটে ধানের হাট বসছে। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই হাটে কয়েক কোটি টাকার ধান বেচাকেনা হয়। এই হাটকে দেশের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ধানের মোকাম হিসেবে ধরা হয়। মূলত এই মোকামই জেলার আড়াইশ চালকলে ধানের যোগান দেয়।
আশুগঞ্জ মোকামে কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও সিলেটসহ অন্তত ৭ জেলা থেকে ধান নিয়ে আসেন বেপারীরা। ধানের মৌসুমে মোকামে প্রতিদিন ১ লাখ মণেরও বেশি ধান বেচাকেনা হয়। আর বাকি সময় বেচাকেনা হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার মণ ধান। তবে অক্টোবর মাসের শুরু থেকেই ধানের সংকট দেখা দিয়েছে মোকামে। এর ফলে সব জাতের ধানের দামই বেড়েছে।
মোকামে এখন বিআর-২৮ জাতের ধান প্রায় ১০০ টাকা বেড়ে প্রতি মণ কেনাবেচা হচ্ছে ১৩৫০ থেকে ১৩৮০ টাকা। বিআর-২৮ জাতের ধান ৭০ টাকা বেড়ে বেচাকেনা হচ্ছে ১৩২০ থেকে ১৩৫০ টাকা দামে। আর মোটা ধানের প্রতি মণের বাজার দর প্রায় ১০০০ টাকা।
চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় মোকামে বেচাকেনা প্রায় ৬০ শতাংশ কমে এখন দিনে ২০ হাজার মণের কিছু বেশি ধান বেচাকেনা হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চালকলগুলো থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকার কয়েকটি জেলায় চাল সরবরাহ করা হয়।
এদিকে, ধানের দাম বাড়ায় ইতোমধ্যে চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তা প্রতি ২০ টাকা বেড়ে বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ২৬০০ টাকা এবং বিআর-২৯ চাল বিক্রি হচ্ছে ২৫৫০ টাকায়।
আশুগঞ্জ মোকামের বেপারী মো. শাহজাহান জানান, তিনি হাওরাঞ্চলের কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে এনে আশুগঞ্জ মোকামে বিক্রি করেন। এখন কৃষকের গোলায় ধান নেই। এর ফলে চাহিদার তুলনায় যোগান কম থাকায় ধানের দাম বেড়েছে। এই সংকট আগামী নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত থাকতে পারে। আসন্ন আমন মৌসুমের ধান মোকামে আসার পর বাজার স্থিতিশীল হবে বলে জানান তিনি।
আল হায়াত নামে এক খরিদদার (মিল মালিকদের জন্য ধান কিনেন) জানান, ধানের বাজারের সাথে চালের দর মিলছে না। সব জাতের ধানের দাম বেড়েছে। ধানের সংকট প্রকট হলে বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তখন চালের দরও বাড়বে।
মোবারক হোসেন নামে এক চালকল মালিক জানান, ধানের বাজার দর যেভাবে বাড়ছে, চালের দাম সেভাবে বাড়ছে না। এতে করে লোকসান গুণতে হচ্ছে। ধানের সাথে সমন্বয় করতে গেলে চালের দাম বস্তা প্রতি আরও অন্তত ১০০ টাকা বাড়াতে হবে। তবে ধানের সংকট না কাটলে চালকল বন্ধ করে দিতে হবে।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা অটো রাইসমিল মালিক সমিতির সদস্য হাসান ইমরান বলেন, 'মোকামে পর্যাপ্ত ধান না পাওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে আমাদের অনেক চালকল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে করে লোকসান গুণতে হচ্ছে চালকল মালিকদের। এছাড়া আরও কয়েকটি চালকল বন্ধের পথে। এ অবস্থায় সংকট দীর্ঘ হলে বাধ্য হয়ে চালের দাম বাড়াতে হবে। তবে আসন্ন আমন মৌসুমের আগে ধানের সংকট নিরসন হবে বলে মনে হচ্ছে না'।