এখনো অনলাইন জুয়ায় অর্থ পাচারের তদন্ত শুরু করেনি সিআইডি
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পরা অনলাইন বেটিং সাইটগুলোর মাধ্যমে অর্থ পাচারের প্রমাণ পেলেও এখনো এ বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করেনি অর্থপাচার আইনে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার সম্প্রতি জুয়ার সাইট বেটউইনারের ৩ বাংলাদেশি এজেন্টকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা জানিয়েছে, বেটউইনার সাইপ্রাসভিত্তিক মারিকিট হোলিডংস লিমিটেডের একটি অনলাইন জুয়া সাইট, যা রাশিয়া থেকে পরিচালিত হয়। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের এজেন্টরা জমাকৃত টাকা তুলে ওই টাকা বাইন্যান্স নামক মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাপের মাধ্যমে মার্কিন ডলারে কনভার্ট করেন। পরে বাইন্যান্সের মাধ্যমে এই টাকা বিভিন্ন দেশে পাচার হয়।
৪ মাসে এই গ্রেপ্তারকৃত তিন এজেন্ট ৪ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।
তবে এখনো এ পাচারের বিষয় সামনে রেখে অর্থ পাচার আইনে অনুসন্ধান শুরু হয়নি বলে টিবিএসকে জানিয়েছেন সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহম্মদ রেজাউল মাসুদ।
অনলাইন বেটিং সাইটের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আসছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি)। ডিবি-সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ ২০২০ সালে শিলং তীর নামে একটি অনলাইন জুয়া পরিচালনাকারী ৪ এজেন্টকে গ্রেপ্তার করে। এ মামলার তদন্ত শেষ করে সম্প্রতি আদালতে চার্জশিট দিয়েছেন তারা।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঢাকায় অবস্থান করে জুয়ার এই এজেন্টরা সেলসম্যনদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা মোবাইল ফিন্যন্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে সিলেটের জাফলংয়ে পাঠাতেন। এরপর ওখান থেকে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে ভারতের শিলংয়ে পাচার করেছেন।
ডিএমপি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের গোয়েন্দা শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন, "আমরা অনলাইন বেটিং সাইটের মামলার তদন্ত করতে গিয়ে কয়েকটির বিরুদ্ধে অর্থপাচারের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছি। এর সাথে সন্দেহজন বেটিং সাইটগুলোর তথ্য আমরা সিআইডিতে পাঠিয়েছি। তবে এখনো কোন বেটিং সাইটের বিরুদ্ধে অর্থপাচার আইনে অভিযোগ আনা হয়নি।"
অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার এবং ডিবি-সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ মোট ৬টি মামলার তদন্ত করছে।
এতে ওয়ানএক্সবেট, মসবেট, বেটবাজ ডট ৩৬৫, বেট৩৬৫এনআইসহ বিভিন্ন জুয়ার সাইট রয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা টিবিএসকে জানিয়েছেন, সব বেটিং সাইটগুলোর বিরুদ্ধে শতশত কোটি টাকা পাচারের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা হুন্ডি, ক্রিপ্টোকারেন্সিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা পাচার এবং লেয়ারিং করেছে। অর্থপাচারের তদন্তের জন্য নির্ধারিত ইউনিট সিআইডির ফিন্যন্সিয়াল ক্রাইম। তদন্তে অর্থপাচারের প্রাথমিক প্রমাণের তথ্য তাদেরকে পাঠানো হয়েছে।
তবে এসব জুয়ার সাইটের বিরুদ্ধে কোন অনুসন্ধান ফিন্যন্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট করেনি বলে টিবিএসকে জানিয়েছেন সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, "সাইবার পুলিশ সেন্টার জুয়ার সাইটের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছেন এবং তদন্তের কাজ করছে। অর্থপাচারের অনুসন্ধানও তারাই করবেন।"
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেছেন, ২০২০ সাল থেকে দেশে অনলাইন জুয়া ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এর অন্যতম প্রভাব আসক্তদের অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি এবং অর্থপাচার।