ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা না দিতে ইসরাইলকে হুঁশিয়ারি রাশিয়ার, কিয়েভে ব্যাপক ড্রোন হামলা
রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট এবং দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে ইসরাইলকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। খবর সিএনএন ও বিবিসির
বিস্তারিত ব্যাখ্যা না দিয়ে সামাজিক মাধ্যম টেলিগ্রামে তিনি লিখেছেন, 'মনে হচ্ছে কিয়েভের শাসকদের অস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল। এটি হবে অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত। আমাদের দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক এতে সমূলে বিনাশ হবে।'
এবিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করেছে সিএনএন, তবে মেদভেদেভের দাবির বিষয়ে সেখান থেকে কিছু বলা হয়নি।
এর আগে রোববার ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা পাঠানোর পক্ষে সমর্থন করে এক টুইটার পোস্ট করেন ইসরায়েলের অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী নাখম্যান শাই।
টুইটে তিনি লিখেছেন, 'আজ সকালে জানতে পারলাম ইরান রাশিয়ায় ব্যালেস্টিক মিসাইল পাঠাচ্ছে। তাই এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতে ইসরাইল কোন পক্ষ নেবে তা নিয়ে আর সংকোচের অবকাশ নেই। ঠিক যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো দেশগুলি দিচ্ছে, সেভাবে (ইসরাইল থেকেও) ইউক্রেনের সামরিক সহায়তা পাওয়ার সময় এসেছে।'
কিয়েভে ব্যাপক ড্রোন হামলা
সোমবার (১৭ অক্টোবর) ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে অন্তত চারটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির অফিসের প্রধান আন্দ্রি ইয়ারমাকের দাবি, রাশিয়ার পাঠানো 'কামিকাজে ড্রোন' দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে জায়গাগুলোতে। খবর বিবিসির।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো জানান, আজ সোমবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শেভচেনকিভস্কি এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
সপ্তাহখানেক আগেও কিয়েভে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি করেছিল ইউক্রেন, যেখানে অন্তত ১৯ জন নিহত হওয়ার দাবি করা হয়।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্থানীয় সময় সোমবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ বিস্ফোরণগুলো ঘটে। এ সময় শহরের বিভিন্ন জায়গায় চার থেকে পাঁচটি বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যায়। সর্বশেষ বিস্ফোরণটি ঘটে স্থানীয় সময় সকাল ৮ টা বেজে ১০ মিনিট নাগাদ।
এরমধ্যে দুটি বিস্ফোরণ ঘটে শহরের একদম কেন্দ্রের কাছাকাছি। এ সময় পুরো শহরজুড়ে সাইরেন এবং জরুরি সেবার গাড়ির অ্যালার্ম শোনা যাচ্ছিল।
রয়টার্সের একজন সাংবাদিক হামলায় ব্যবহৃত ড্রোনের একটি টুকরো দেখেছেন, যেখানে 'বেলগোরোদের জন্য' লেখা ছিল বলে দাবি করেন তিনি।
এর আগে, ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী রাশিয়ার বেলগোরোড শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করে রাশিয়া। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে কিয়েভ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ড্রোনগুলোর লক্ষ্যবস্তু কী ছিল তা এখনও নির্ধারণ করা যায়নি; তবে মেয়রের কার্যালয় বলছে, হামলায় বেশকিছু আবাসিক ও অনাবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া, কিয়েভের প্রধান রেলওয়ে স্টেশনের কাছেও বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানিয়েছেন শহরের রেলওয়ে কর্মকর্তারা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে মেয়র ক্লিটসকো চারটি বিস্ফোরণের কথা লিখলেও শহরের বাসিন্দারা পাঁচ বা ছয়টি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেতে পেয়েছেন বলে জানান বিবিসিকে।
এ সময় কিয়েভ প্রশাসন জনগণকে বিমান হামলা থেকে বাঁচতে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেয়।
এর আগে, সোমবার কিয়েভ এবং ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় এয়ার অ্যালার্ম বাজিয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হয়েছিল।
এদিকে, সপ্তাহের শুরুতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছিলেন, ইউক্রেনের ওপর আর বড় আকারের হামলার প্রয়োজন নেই। মূল লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আঘাত হানা হয়েছে।
তিনি বারবারই বলছেন, দেশটিকে (ইউক্রেন) ধ্বংস করা কখনই রাশিয়ার লক্ষ্য নয়।
কামিকাজে ড্রোন কী?
কামিকাজে ড্রোন হল, ছোট আকারের 'এয়ার ওয়েপন' বা বিমান হামলায় ব্যবহার করা হয় এমন অস্ত্র। এই ড্রোনের বিশেষত্ব হলো, লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সঙ্গে সঙ্গে এটি ধ্বংস হয়ে যায়। অন্যান্য ড্রোনের মতো লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র ফেলে আবারও ফিরে আসে না।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় জাপানের কিছু পাইলট স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে আত্মঘাতী মিশনে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। মূলত তাদের কাছ থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে এই ড্রোনের নামকরণ করা হয়েছে।