গা গরমের ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে বেহাল দশা বাংলাদেশের
একই আঙিনায় অন্য দলগুলোর সঙ্গে কতো বৈপরীত্য বাংলাদেশের! অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ক্রিকেট দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দেয় নামিবিয়া। দ্বিতীয় দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দিয়েছে স্কটল্যান্ড। পরের ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে চোখ ধাঁধানো ব্যাটিং করেছেন জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজা। কিন্তু এমন দারুণ সব খবরের ভীড়ে বাংলাদেশের খবরটা ঠিক উল্টো। প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে নেমেও হতাশায় ডুবলো সাকিব আল হাসানের দল।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সরাসরি সুপার টুয়েলভে খেলবে বাংলাদেশ। এর আগে ম্যাচ খেলে শেষবারের মতো নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ মিলেছে সাকিব আল হাসানের দলের। গা গরমের ম্যাচ, কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই ম্যাচ খেলতে নেমে গা পুড়লো বাংলাদেশের। ভালো প্রস্তুতি তো হলোই না, সঙ্গী হলো কেবলই হতাশা। ব্রিসবেনের অ্যালান বোর্ডার ফিল্ডে আফগানদের বিপক্ষে ব্যাটিং, বোলিংয়ে ছন্নছাড়া বাংলাদেশকে দেখা গেল।
২০ ওভারের ম্যাচটিতে ৬২ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। এই ম্যাচের ফল নিশ্চয়ই বিবেচ্য নয়। এই ম্যাচ খেলে প্রস্তুতি সেরে নেওয়াটাই মূখ্য। কিন্তু কোনো বিভাগেই সেই প্রস্তুতি নেওয়া হলো না। বল হাতে গড়পড়তা থাকার পর ব্যাটসম্যানরা যেভাবে আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দেন, তাতে বিশ্বকাপ মিশন শুরুর কয়েক দিন আগে গভীর চিন্তাতেই পড়ে যাওয়ার কথা বাংলাদেশের।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে আফগানিস্তান। ইব্রাহিম জাদরান ও অধিনায়ক মোহাম্মদ নবীর ব্যাটে ৭ উইকেটে ১৬০ রান তোলে তারা। জবাবে ফজল হক ফারুকী, মুজিব-উর-রহমান, নবীদের বোলিংয়ের সামনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধুঁকেছে বাংলাদেশ। দলের কেউ ৩০ রানের গন্ডিও পেরোতে পারেননি, সর্বোচ্চ ইনিংস ২৯ রানের। টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাটিং করতে ব্যর্থ হওয়া সাকিবের দল ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ৯৮ রান তোলে।
লক্ষ্য তাড়া করতে নামা বাংলাদেশ বরাবরের মতো এদিনও উদ্বোধনী জুটি নিয়ে বিপাকে পড়ে। নাজমুল হোসেন শান্ত ও মেহেদী হাসান মিরাজ মিলে দলকে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি। দলীয় ১৯ রানে শান্তর স্টাম্প উপড়ে নেন আফগান পেসার ফজল। ৯ বলে ২টি চারে ১২ রান করেন ফেরেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
সৌম্য সরকার কয়েক মুহূর্ত টিকতে পেরেছেন। আফগানিস্তানের তারকা অফ স্পিনার মুজিবের বলে আউট হওয়ার আগে ৪ বলে ১ রান করেন তিনি। এখান থেকে যে ভাঙন শুরু হয়, তা আর থামেনি। পঞ্চম ওভারে বাংলাদেশকে পথ ভুলিয়ে দেন ফজল। বাঁহাতি এই পেসার পরপর দুই বলে ফিরিয়ে দেন সাকিব ও আফিফ হোসেন ধ্রুবকে। সাকিব ৪ বলে ১ রান করেন, আফিফ রানের খাতা খুলতে পারেননি।
এরপর ইয়াসির আলীও আফিফের মতো গোল্ডেন ডাকে সাজঘরে ফেরেন। ২৮ রানেই নেই ৫ উইকেট। এর মাঝে একেবারে ধীর গতিতে ব্যাট চালিয়ে নিজের উইকেট বাঁচিয়ে রাখেন মিরাজ। তার সঙ্গে যোগ দেওয়া নুরুল হাসান সোহানকে সাবলীল মনে হলেও উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান বেশি পথ পাড়ি দিতে পারেননি। ৮ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৩ রান করে আউট হন তিনি।
১ রান পরই মিরাজের স্টাম্প ভেঙে দেন আরেক আফগান পেসার নাভিন-উল-হক। ৩১ বলে একটি চারে ১৬ রান করেন মিরাজ। মিরাজের মতো ধীর গতিতে ব্যাট চালান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৩৩ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ২৯ রান করেন, যা বাংলাদেশের ইনিংসের সর্বোচ্চ। তাসকিন ৬ ও মুস্তাফিজ ১০ রান করেন। এদিন লিটন কুমার দাস ব্যাটিং করেননি।
ফজল ৪ ওভারে ৪২ রানে ৩টি উইকেট নেন। ফরিদ আহমেদ ৩ ওভারে এক মেডেনসহ ৯ রানে ২ উইকেট পান। নাভিন ২ ওভারে ৬ রানে একটি উইকেট নেন। নবীও ছিলেন কৃপণ, ৩ ওভারে ১১ রানে এক উইকেট নেন আফগান অধিনায়ক। সবচেয়ে বেশি কিপ্টে বোলিং করেন মুজিব। ডানহাতি এই অফ স্পিনার ৩ ওভারে একটি মেডেনসহ মাত্র ৫ রানে একটি উইকেট পান।
এরআগে ব্যাটিং করা আফগানিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন ইব্রাহিম জাদরান। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৩৯ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৪৬ রান করেন। শেষ দিকে ১৭ বলে একটি চার ও ৫টি ছক্কায় ৪১ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন নবী। এ ছাড়া হযরতউল্লাহ জাজাই ১৫, রহমানউল্লাহ গুরবাজ ২৬ ও দারবিশ রাসুলী ১২ রান করেন।
ব্যাট হাতে উল্টো বাংলাদেশ বল হাতেও খুব একটা ভালো প্রস্তুতি সারতে পারেনি। তাসকিন আহমেদ ৪ ওভারে ৩০ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন। আরেক পেসার হাসান মাহমুদ ৪ ওভারে ২৪ রানে পান ২ উইকেট। অধিনায়ক সাকিবও নেন ২ উইকেট, তবে তিনি খরুচে ছিলেন। ৪ ওভারে সর্বোচ্চ ৪৬ রান দেন বাঁহাতি এই স্পিনার। মুস্তাফিুজর রহমান ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন। ২ ওভারে ১৭ রান দেওয়া নাসুমও উইকেট পাননি। সৌম্য এক ওভারে ৬ রান দেন, মোসাদ্দেক এক ওভারে খরচা করেন ৪ রান।