রাতে পাঁচ ঘণ্টার কম ঘুমালে দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, বলছে গবেষণা
বয়স পঞ্চাশের কোঠায় পা রাখার সাথে সাথেই মানুষের শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে নানা রোগ এবং অনে্কের ক্ষেত্রেই তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন রাতে অন্তত পাঁচ ঘণ্টা ঘুমালে দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা থেকে দূরে থাকা যায়। রুগ্নদেহে ঘুম ভালো হয় না এটা যেমন সত্যি, কিন্তু ভালো ঘুম না হলে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি আরও বেশি।
ঘুম মানুষের শরীর-মনের অবসন্নতা কাটিয়ে চাঙ্গা হয়ে ফিরে আসতে সাহায্য করে তা সবারই জানা। কিন্তু সর্বনিম্ন কত ঘণ্টা ঘুমানো অত্যাবশ্যক, সেই 'গোল্ডেন স্লাম্বার নাম্বার'টি কেন গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ এখনো স্পষ্ট নয়।
পিএলওএস মেডিসিন পরিচালিত একটি গবেষণার আওতায় যুক্তরাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের ঘুম ও স্বাস্থ্যজনিত বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৮০০০ জনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল- রাতে তারা গড়ে কত ঘণ্টা ঘুমান। কেউ কেউ আবার স্লিপ-ট্র্যাকিং রিস্টওয়াচ পরেও ঘুমাতে যেতেন।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও হৃদরোগসহ দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক অসুস্থতাও পরীক্ষা করা হয়। দুই দশক ধরে নিয়মিত পরীক্ষার মধ্যে থাকার পর যে ফলাফল দেখা যায় তা হলো-
* পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়সের যেসব ব্যক্তি রাতে পাঁচ ঘণ্টা বা তার কম ঘুমিয়েছেন, তাদের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি যারা সাত ঘণ্টা ঘুমিয়েছেন, তাদের চাইতে বেশি।
* ঘুমের সময় পাঁচ ঘণ্টার চেয়েও সংক্ষিপ্ত করে আনলে মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
'বিশেষজ্ঞরা সাধারণত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর পরামর্শ দেন', বলেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন ও প্যারিস সিটে ইউনিভার্সিটির এই গবেষকরা।
আমরা কেন ঘুমাই?
যদিও বিজ্ঞানীরা একেবারে নিশ্চিত হয়ে কিছু বলেননি, কিন্তু এটা স্পষ্ট যে ঘুম মানুষের মস্তিষ্কে স্মৃতি ধরে রাখতে সাহায্য করে, মন ভালো করে দেয়, মনোযোগী হতে সাহায্য করে এবং বিপাক ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া, ঘুম মস্তিষ্ক থেকে অপ্রয়োজনীয় চিন্তা ঝেড়ে ফেলারও একটি উপায়।
ভালো ঘুমের জন্য কিছু পরামর্শ:
* সারাদিন কাজকর্মের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখা; এর ফলে শরীর ক্লান্ত হয়ে যাবে এবং বিছানায় শুলে তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে। কিন্তু ঘুমের সময় এগিয়ে আসার সাথে সাথে কর্মব্যস্ততা কমিয়ে দিতে হবে।
* দিনের বেলা ঘুমানোর অভ্যাস পরিহার করতে হবে।
* শোবার ঘর যেন আরামদায়ক হয় এবং শান্ত পরিবেশ বজায় থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাতের জন্য আলাদা রুটিন তৈরি করা যেতে পারে।
* শোয়ার সময় স্মার্টফোনে স্ক্রল করা বন্ধ রাখতে হবে।
* ঘুমিয়ে সময় এগিয়ে এলে ক্যাফেইনজাতীয় পানীয় ও অ্যালকোহলসমেত কিছু খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে।
* ঘুম না এলে বিরক্ত হওয়া যাবে না বা জোর করা যাবে না। উঠে গিয়ে অন্য কাজ করা যেতে পারে, যেমন-বই পড়া... এরপর আবার ঘুমে চোখ জড়িয়ে এলে বিছানায় এসে শুয়ে পড়তে হবে।
* রাতে কাজের শিফট থাকলে আগেভাগেই কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিতে হবে যেন সারারাত ক্লান্ত না লাগে।
* ঘুমের ওষুধের নানা নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে এখন খুব কমই ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাই চেষ্টাটা করতে হবে নিজেকেই। খুব বেশি সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞদের সাথে যোগাযোগ করে এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।