ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: আমনের ক্ষতি নিয়েই শঙ্কা ছিল বেশি
মাত্র এক সপ্তাহ আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন খাদ্য সংকট নিয়ে সবাইকে সতর্ক করেন। 'প্রতি ইঞ্চি জমিকে চাষের আওতায় নিয়ে আসার' আহ্বান জানান তিনি।
বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এ গতকাল সেই আশঙ্কা আরো প্রবল হয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ধারণা অনুযায়ী, দেশের ১৩টি উপকূলীয় জেলায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আশঙ্কা ছিলো। এতে আমন ধানের উৎপাদন ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করা হয়, যা বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট শস্যের ৩৯ শতাংশ। তবে ক্ষতির পরিমাণ কম হতে পারে ধারণা করেছিলেন তারা।
গতকাল ঝুঁকির মধ্যে থাকা কয়েকটি জেলা হলো- সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী এবং ফেনী।
এছাড়া মাছ ও পশু পালনেরও উপরও প্রভাব পড়ার আশঙ্কা ছিল মন্ত্রণালয়ের।
যদিও এসব ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এত আগেই করা যাবে না, তারপরও বরিশাল বিভাগীয় কৃষি অফিসের একাধিক কর্মকর্তা টিবিএসকে জানান, ফ্লাওয়ারিং স্টেজে থাকা ৮-১০ শতাংশ ধান ঝুঁকির মধ্যে ছিল।
এদিকে বরিশাল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হারুন-অর-রশীদ গতকাল টিবিএসকে বলেন, "১ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার হেক্টর জমির ধান ফ্লাওয়ারিং পর্যায়ে রয়েছে। যেটাতে আসলে ক্ষতির শঙ্কার মধ্যে থাকবে।"
"তবে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালিন সবজি লাগানোর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র ১ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি লাগানো হয়েছে। সুতরাং এখানে খুব বেশি সমস্যা হওয়ার সুযোগ নেই," যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, মেহেন্দীগঞ্জ, বাকেরগঞ্জসহ ৪টি উপজেলা রয়েছে যেখানে নিচু জমির পরিমাণ বেশি। এই জমিগুলোও শঙ্কার মধ্যে রয়েছে।
একই অবস্থা অন্য জেলাগুলোতেও। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় গতকাল জানায়, মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে বরগুনার পাথরঘাটা ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া এলাকায়।
বরিশাল বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুল হক গতকাল টিবিএসকে বলেন, "ধান নিয়ে শঙ্কা বেশি। বিশেষ করে ফ্লাওয়ারিং পর্যায়ের যেসব ধান রয়েছে। তবে এর পরিমাণ খুব বেশি না। ঝড় শেষ হলে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি বলা যাবে।"
তিনি জানান, শীতকালিন সবজি কিছু কিছু জায়গায় মাত্র লাগানো শুরু হয়েছে। এজন্য এটা নিয়ে খুব বেশি শঙ্কা নেই।
এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, এ বছর সারাদেশে ৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপন করা হয়েছে। অনাবৃষ্টি, খরা ও বন্যার কারণে যখন দেশব্যাপী আমনের আবাদ শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল তখন নানাভাবে সারাদেশের কৃষকই সেচ পাম্প বসিয়ে হলেও আমন ধান রোপন করেছে। এই অবস্থার মধ্যেই আঘাত হানলো আরো একটি ঘূর্ণিঝড়।
এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় এক জরুরি সভা করে কৃষি বিভাগের কর্তকর্তাদের ছুটি বাতিল করে। সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় কাজ করে যাওয়ার নির্দেশনা দেন কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম।
কৃষি মন্ত্রণালয় তাদের নির্দেশনায় বলে, ৮০ শতাংশ ধান পরিপক্ক হলেই কেটে ফেলতে হবে। ঝড় শেষ হওয়ার পর দ্রুত ক্ষয়ক্ষতি হিসেব করে এবং অবস্থা অনুযায়ী বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়।
উপকূলীয় অঞ্চলে জোয়ারের পানি জমিতে প্রবেশ করলে দ্রুত সেগুলো অপসারণে কৃষকদেরকে পরামর্শ প্রদান করতে বলা হয় সে নির্দেশনায়।
এই বাইরে উপকূলীয় এলাকাগুলোর মাছ চাষ ও পশু পালনও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে বলে জানা গেছে।
বিশেষ করে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেহাটে যেসব মাঝের ঘেড় রয়েছে সেগুলোতে পানি প্রবেশ করলে মাছ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়। এই এলাকাগুলো প্রচুর পরিমাণে মাছের ঘের রয়েছে এবং এসব এলাকা চিংড়ি চাষের জন্য পরিচিত।