নতুন আঙ্গিকে অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপ
কাতার বিশ্বকাপের উত্তেজনায় গোটা বিশ্ব ফুটবলে বুঁদ হয়ে আছে। আর চলতি এ বিশ্বকাপের মাঝেই আলোচনায় আসছে মার্কিন যুক্তরাজ্য, কানাডা ও মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত হওয়ার অপেক্ষায় থাকা পরবর্তী বিশ্বকাপ। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে যে, ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপ হবে বর্তমান বিশ্বকাপের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে। ফিফার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরবর্তী বিশ্বকাপে বাড়বে দল সংখ্যা, পরিবর্তিত হতে পারে গ্রুপ পর্বে দল ও ম্যাচ বিন্যাসের বহুদিনের নীতি। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
বর্তমানে ফুটবল বিশ্বকাপের প্রতিটি আসরে অংশ নেয় সর্বমোট ৩২ টি দল। কিন্তু পরবর্তী বিশ্বকাপে দল সংখা ৩২ থেকে বৃদ্ধি করে ৪৮-এ উন্নীত করার বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত করেছে ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। তবে বহু ফুটবল বিশেষজ্ঞ ও দর্শকদের মতামত এই যে, একযোগে প্রায় ১৬ টি দল বিশ্বকাপে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হলে বিশ্বকাপে খেলার মান কমবে, সৃষ্টি হবে বেশ কিছু জটিলতার।
কিন্তু দলের সংখ্যা ৪৮ করা হলে বিশ্বকাপ তার জৌলুশ হারাবে বলে মনে করেন না আর্সেনালের প্রাক্তন কোচ ও ফিফার গ্লোবাল ফুটবলের প্রধান আর্সেন ওয়েঙ্গার। ১৬ টি নতুন দল যুক্ত করার বিষয়ে ওয়েঙ্গার বলেন, "২০২৬ সালের বিশ্বকাপে আমরা আরও ১৬ টি দুর্দান্ত দলকে দেখতে পাব। প্রতিযোগী দলের সংখ্যা বাড়লে অনেক দেশই আগ্রহী হবে। তারা নিজেদের ঘরোয়া ফুটবলের মান বাড়ানোর চেষ্টা করবে। অনেকেই চাইবে ফুটবলের বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের মেলে ধরতে। আখেরে ফুটবলেরই সার্বিক উন্নতি হবে।"
অন্যদিকে বর্তমানে বিশ্বকাপে প্রতিটি গ্রুপে চারটি দল নিয়ে মোট আটটি গ্রুপে অনুষ্ঠিত হয় গ্রুপ পর্বের খেলা। কিন্তু বিপত্তি বাঁধবে যখন ৩২ এর বদলে আসরটিতে ৪৮ টি দল হবে। তখন নিঃসন্দেহে বিশ্বকাপে গ্রুপ সংখ্যা, প্রতি গ্রুপে দল সংখ্যা এবং প্রতিটি দলের গ্রুপ পর্বের ম্যাচ সংখায় ফিফাকে আনতে হবে পরিবর্তন।
দলের সংখ্যা বাড়ানো হলে গ্রুপ পর্বের পরিবর্তন সম্পর্কেও নিজের অভিমত প্রকাশ করেছেন আর্সেন ওয়েঙ্গার। তিনি বলেন, "এখনও ঠিক হয়নি কোন ফরম্যাটে খেলা হবে। তিন দলের ১৬টি গ্রুপ বা চার দলের ১২টি গ্রুপ হতে পারে। অথবা চার দলের ১২টি গ্রুপ করে দু'টি অর্ধে ভাগ করে দেওয়া হতে পারে। সেটা আমি ঠিক করতে পারি না। ফিফা কাউন্সিল ঠিক করবে। আশা করি পরের বছরই জানিয়ে দেওয়া হবে।"
প্রতিটি গ্রুপে তিনটি দল করে মোট ১৬ টি গ্রুপে ভাগ করে ফিফা পরবর্তী বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত করার কথা ভেবেছিল। সেক্ষেত্রে প্রতিটি গ্রুপ থেকে তিনটি দলের মধ্যে দুইটি দল পরবর্তী রাউন্ডে ওঠার সুযোগ পাবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে খুব সামান্য ব্যবধানেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পরতে পারে কোনো যোগ্য দল। চলতি বিশ্বকাপে জার্মানি, বেলজিয়ামের মত দল গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ যাওয়ার পর সে শঙ্কা যেন আরও বেড়েছে।
এছাড়াও বর্তমানে প্রতিটি গ্রুপে চারটি দল থাকায় একই গ্রুপের প্রতিটি দলের খেলা একই সময়ে অনুষ্ঠিত করা হয়। এক্ষেত্রে অন্য দলগুলোর পয়েন্ট দেখে নিজেদের সুবিধামতো খেলতে পারেনা দলগুলো। যার ফলে খেলা হয় আরও শ্বাসরুদ্ধকর, আরও প্রতিযোগিতাপূর্ণ। কিন্তু প্রতিটি গ্রুপে তিনটি দল থাকলে ঐ গ্রুপে প্রতিটি দলের শেষ ম্যাচটি একই সময়ে অনুষ্ঠিত করা সম্ভব নয়। এতে করে নির্দিষ্ট দুই দলের পক্ষে পয়েন্ট অনুযায়ী নিজেদের সুবিধামতো খেলার মতো অসুবিধা তৈরি হতে পারে।
চার বছর পর পর গোটা বিশ্ব ফুটবল বিশ্বকাপের উত্তেজনায় শামিল হয়। ফুটবল বিশ্বকাপের ব্যপকতা ও জনপ্রিয়তার কারণে আসরটিকে 'গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ' বলা হয়। আর তাই বিশ্বকাপে আরও বেশি দেশের অংশগ্রহণ হয়তো বিশকাপকে আরও বেশি জনপ্রিয় করবে। কিন্তু এক্ষেত্রে পরবর্তী বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত করার আগে ফিফাকে অবশ্যই বেশ কিছু জটিল সমস্যার সমাধান করতে হবে।