বার্লিনের হোটেলের বিশাল অ্যাকুয়াডোম দেড় হাজার মাছসহ যেন বিস্ফোরিত হলো!
বার্লিনের র্যাডিসন ব্লু হোটেলের লবিতে থাকা মিলিয়ন লিটার পানিভর্তি বিশাল অ্যাকুয়ারিয়াম ভেঙে পড়েছে, ভেসে গিয়েছে হোটেলের লবি এবং পার্শ্ববর্তী রাস্তাগুলো। দেড় হাজার মাছের বাসা এই 'অ্যাকুয়াডোম' নামের অ্যাকুয়ারিয়াম বিশ্বের সবচেয়ে বড় সিলিন্ডার আকৃতির অ্যাকুয়ারিয়াম, যার উচ্চতা ৫২ ফুট।
কাঁচ ভেঙে পড়ার সময় দুইজন ব্যক্তি আহত হয়। পুলিশ জানায়, এর ফলে হোটেলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায় প্রায় খালি হয়ে যাওয়া অ্যাকুয়ারিয়াম থেকে লবিতে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
স্থানীয় সময় সকাল ৫:৫০-এর দিকে এ ঘটনা ঘটে। হোটেলের অতিথিদেরকে হোটেল থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
বার্লিনের ফায়ার ব্রিগেডের এক কর্মী জানান যে বেশিরভাগ মাছই মাতা গিয়েছে, বিশেষ করে প্রচণ্ড ঠান্ডায় মাছদের জীবিত উদ্ধার কাজ আরও কঠিন করে দিয়েছে। অ্যাকুয়ারিয়ামটিতে ১০০-রও বেশি প্রজাতির মাছ ছিল/
এছাড়াও ফায়ার ব্রিগেডের কর্মকর্তা জেমস ক্লাইন স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান যে বেশ কিছু জায়গায় পানি জমে থাকায় সেখান থেকে 'কয়েক ডজন' জীবিত মাছ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
র্যাডিসন ব্লু হোটেলের বাইরের দিকে ভাঙাচোরা জিনিস একজায়গায় জড়ো করা হয়েছে, হোটেলের মূল ফটক পানির ধাক্কায় বাইরের দিকে বেঁকে গিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছে।
হোটেলের একজন অতিথি পল মালেৎজকি জানান যে তিনি তার বান্ধবীর সাথে হোটেলের চতুর্থ তলায় অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ প্রচন্ড শব্দ এবং কাপাকাপিতে তার ঘুম ভেনেগে যায়, তিনি দৌড়ে লবিতে গিয়ে দেখতে পান সেখানে পানি ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। পরে তিনিসহ অন্যান্য অতিথিদেরকে পুলিশের সাহায্যে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
বার্লিনের মেয়র ফ্রাঞ্জিস্কা গিফেই হোটেল পরিদর্শন করতে আসেন এবং অ্যাকুয়ারিয়ামের এই ভেঙে পোড়াকে সুনামির সাথে তুলনা করেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে এটা যদি আর এক থেকে দুই ঘণ্টা পর হতো তাহলে আরও ক্ষতি হতে পারতো, কারণ তখন রাস্তায় সাধারণ মানুষের হাঁটাচলা বেড়ে যেত, যাদের অনেকেই হতো বাচ্চারা।
সান্দ্রা ভিজার নামক জার্মান ফেডারেল পার্লামেন্টের এক সদস্য স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান যে, তিনি সেরাতে হোটেলে অবস্থা করছিলেন, এবং 'শক ওয়েভে' জেগে ওঠেন। তিনি বাইরের অবস্থাকে 'ধ্বংসস্তূপ' বলে অ্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন যে মাছগুলোকে বাঁচানো যেত, সেগুলো শীতে জমে মারা গিয়েছে এবং তিনি এক বড় প্যারটফিশকে ঠান্ডায় জমে থাকতে দেখেছেন।
দুই বছর আগে অ্যাকুয়ারিয়ামটিকে আধুনিকায়ন করা হয়। অ্যাকুয়ারিয়ামের ভেতরে স্বচ্ছ কাঁচের লিফট বসানো হয়, যাতে লিফট থেকেই পুরো অ্যাকুয়ারিয়াম দেখা যায়। বেশ কিছু রুমের সাথেও এর যংযোগ দেওয়া হয়, যেখান থেকে অ্যাকুয়ারিয়াম সরাসরি দেখা যাবে, এজন্য আলাদাভাবে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়।
বার্লিনের ফায়ার ব্রিগেড জানায় তারা ১০০ জনেরও বেশি দমকলকর্মীকে পাঠিয়েছিল, কারণ অ্যাকুয়ারিমটি কীভাবে ভেঙে গিয়েছে তা বের করা যায়নি। হোটেলের আশেপাশে কেউ আহত হয়েছে কিনা সেজন্য কুকুরও ব্যবহার করা হয়, তবে সেরকম কাউকে পাওয়া যায়নি।
পুলিশ আশেপাশের রাস্তায় প্রচুর পানি জমে যাওয়ায় সাবধানে গাড়ি চালানোর জন্য সতর্ক হতে বলেছে। এছাড়াও কোনো আক্রমণের জন্যও যে অ্যাকুয়ারিয়ামটি ভাঙেনি সে ব্যাপারে নিশ্চিত করেছে তারা। তবে ধারণা করা হচ্ছে তাপমাত্রা মাইনাস ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যাওয়ায় অ্যাকুয়ারিয়ামের কাঁচে ফাটল ধরেছিল এবং সেখান থেকেই দুর্ঘটনা ঘটে।
বারল্রিনের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি জানায় হোটেলের বাইরে থাকা কার্ল-লিবনেখট স্ট্রিট লোক চয়ালচলের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পানি জমার কারণে। ঐ এলাকায় ট্রাম সার্ভিসও একই কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে।
২০০৩ সালের ডিসেম্বরে অ্যাকুয়াডোম চালু হয় এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় সিলিন্ডার আকৃতির অ্যাকুয়ারিয়াম হিসেবে গিনেজ বিশ্বরেকর্ডসে নাম লেখায় এটি। প্রতিবেদন অনযুয়ায়ী এটি বানাতে তৎকালীন সময়ে ১২.৮ মিলিয়ন ইউরো খরচ হয়েছিল।
সূত্র: বিবিসি