প্রথম ইনিংসের দ্বিগুণ রান করেও বড় ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ
চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের ভাগ্য আগেই লেখা হয়ে গিয়েছিল। সাকিব আল হাসানের দল যে হারতে যাচ্ছে, প্রথম ইনিংসে ব্যর্থতার পরই তা অনুমেয় হয়ে ওঠে। হলোও ঠিক তেমনই। তাই প্রথম ইনিংসের দ্বিগুণের বেশি রান করেও ভারতের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারলো বাংলাদেশ। শেষ দিনের প্রথম সেশনেই ঘরের মাঠের দলটি হার মেনে নেয়।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে ১৮৮ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসেই অনেক এগিয়ে যায় ভারত। তাদের করা ৪০৪ রানের জবাবে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থামে মাত্র ১৫০ রানে। প্রথম ইনিংসেই ২৫৪ রানে এগিয়ে থাকে সফরকারীরা। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ২ উইকেটে ২৫৮ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করলে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৫১৩। যা পাড়ি দিতে নেমে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস থেমেছে ৩২৪ রানে।
সামনে ছিল ৫১৩ রানের বিশাল লক্ষ্য, যা পাড়ি দিতে বাংলাদেশকে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে হতো। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৫ বছরের ইতিহাসে ৪১৮ রানের বেশি রান তাড়া করে জেতার যে রেকর্ড নেই। বাস্তবতা মাথায় রেখে বাংলাদেশও নিশ্চয়ই জয়ের আশা করেনি। যদিও নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে দারুণ উদ্বোধনী জুটি গড়ার পর সেঞ্চুরি করা অভিষিক্ত জাকির হাসান লক্ষ্যে পৌঁছানোর কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা প্রত্যাশা হয়েই থেকে গেল।
বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ৬ উইকেটে ২৭২ রান তুলে চতুর্থ দিনের দিনের খেলা শেষ করে বাংলাদেশ। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ৪০ ও মেহেদী হাসান মিরাজ ৯ রানে অপরাজিত থাকেন। শেষ দিনে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল ২৪১ রান। কিন্তু এদিন লক্ষ্য অনেক দূরে থাকতেই শেষ হয় ঘরের মাঠের দলটির ইনিংস।
এদিন চার উইকেটে বাংলাদেশ যোগ করেছে ৫২ রান। ঝড় তুলে সাকিবই কেবল কিছু রান করেন, ৫২ রানের মধ্যে সাকিবই করেন ৪৪ রান। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ১০৮ বলে ৬টি করে চার ও ছক্কায় ৮৪ রান করেন। মিরাজ করেন ১৩ রান। ভারতের অক্ষর প্যাটেল নেন ৪টি উইকেট। ৩ উইকেট পান কুলদীপ যাদব। আগের ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ায় ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন ভারতের এই চায়নাম্যান বোলার। একটি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ সিরাজ, উমেশ যাদব ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
এর আগে দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণ শুরুই পায় বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতে ১২৪ রান যোগ করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকির হাসান, যা চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা উদ্বোধনী জুটি। এই জুটি গড়ার পথে দুজনই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। শান্ত ১৫৬ বলে ৭টি চারে ৬৭ রান করে থামলেও জাকির এগিয়ে যেতে থাকেন সেঞ্চুরির পথে, শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যে পৌঁছান ২৪ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান।
২২৪ বলে ১৩টি চার ও একটি ছক্কায় ১০০ রানের ইনিংস খেলে ইতিহাসের পাতায় নাম তোলেন জাকির। দলকে পথ দেখানোর মিশনে এমন এক ইনিংস খেলেন, তাতে ৪৭ বছরের পুরনো রেকর্ডে উঠে যায় তার নাম। গড়েন আরেক কীর্তি, টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৫ বছরের দীর্ঘ ইতিহাসে যা আগে ঘটেছে মাত্র একবার।
সেটাও ৪৭ বছর আগের ঘটনা। ১৯৭৫ সালে লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে ১০৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনার লিওনার্ড বাইচান। এতোদিন রেকর্ডটি তার দখলে ছিল। ৪৭ বছর পর এসে তার রেকর্ডে ভাগ বসালেন জাকির। ১৪৫ বছরে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো চতুর্থ ইনিংসে কোনো ওপেনারকে সেঞ্চুরি করতে দেখলো টেস্ট ক্রিকেট।
অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করার দিক থেকে জাকির বাংলাদেশের চতুর্থ ব্যাটসম্যান। তার আগে নিজেদের প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করার নজির গড়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ আশরাফুল ও আবুল হাসান রাজু। ১০ বছর পর বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। তবে বাংলাদেশের প্রথম ওপেনার হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরি করেন জাকির।
বাঁহাতি এই ওপেনারের দিনে পারেননি অন্যরা। ইয়াসির ৫, লিটন ১৯, মুশফিক ২৩ ও সোহান ৩ রান করেন। শেষ দিনে তাইজুল ৪ রান করলেও দুই পেসার এবাদত হোসেন ও খালেদ আহমেদেরে কেউই রানের খাতা খুলতে পারেননি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত প্রথম ইনিংস: ৪০৪
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১৫০
ভারত দ্বিতীয় ইনিংস: ২৫৮/২ (ডি.)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৩২৪ (শান্ত ৬৭, জাকির ১০০, লিটন ১৯, মুশফিক ২৩, সাকিব ৮৪, মিরাজ ১৩; অক্ষর ৪/৭৭, কুলদীপ ৩/৭৩, উমেশ ১/২৭)।
ফল: ভারত ১৮৮ রানে জয়ী।
সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজে ভারত ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
ম্যাচসেরা: কুলদিপ যাদব (ভারত)।