মেসির স্বপ্নপূরণ নাকি ফ্রান্সের ইতিহাস?
আর মাত্র কিছুক্ষণ, কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালের মহারণে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্স। যারাই জিতুক, এটি হবে তাদের তৃতীয়বারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া।
৩৬ বছরের অপেক্ষা ঘোচাতে মরিয়া আর্জেন্টিনা, লিওনেল মেসির শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচটির উপলক্ষ্যটা এরচেয়ে বড় হতে পারতো না। অপরদিকে ইতিহাস গড়ার হাতছানি বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের সামনে। ইতালি ও ব্রাজিলের পর টানা দুই বিশ্বকাপ জেতা দল হতে পারে ফ্রান্স।
কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হওয়ার আগে জেনে নেওয়া যাক দুই দলের এবারের পারফম্যান্স, ফাইনালের রেকর্ড এবং শক্তিমত্তা সম্পর্কে।
আর্জেন্টিনা
ব্রাজিল কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গেলেও লাতিন আমেরিকার আরেক দল, ট্যাঙ্গো ফুটবলের অনুসারী লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা ঠিকই উঠে গেছে ফাইনালে। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হেরে গিয়েও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই নক-আউট পর্বে উঠে আলবিসেলেস্তেরা।
গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার ফলাফল
সৌদি আরব ২-১ আর্জেন্টিনা
আর্জেন্টিনা ২-০ মেক্সিকো
আর্জেন্টিনা ২-০ পোল্যান্ড
শেষ ষোলো
আর্জেন্টিনা ২-১ অস্ট্রেলিয়া
কোয়ার্টার-ফাইনাল
আর্জেন্টিনা ২-২ নেদারল্যান্ডস (টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে জয়ী আর্জেন্টিনা)
সেমি-ফাইনাল
আর্জেন্টিনা ৩-০ ক্রোয়েশিয়া
বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ফাইনাল রেকর্ড
এর আগে পাঁচবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলে দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্জেন্টিনা, তিনবার হারের যন্ত্রণা সইতে হয়েছে আলবিসেলেস্তেদের/
আর্জেন্টিনার শক্তি
সৌদি আরবের বিপক্ষে হারের পর লিওনেল স্কালোনির দলের রসায়ন নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন জেগেছিল। খেলোয়াড়রা সৌদি আরবকে হালকাভাবে নিয়েছেন কিনা সেই ব্যাপারেও কথা শোনা যাচ্ছিল।
কিন্তু পরের দুই ম্যাচে নিজেদের আসল রূপে ফেরে আলবিসেলেস্তেরা। বিশেষ করে পোল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের ছন্দময় ফুটবল দেখায় আর্জেন্টিনা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও শেষের কিছু সময় ব্যতিত বেশ চোখ জুড়ানো ফুটবলই দেখা গেছে মেসিদের পা থেকে। সেমি-ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে তো পাত্তাই দেয়নি স্কালোনির দল।
লিওনেল মেসি জ্বলে উঠলে প্রতিপক্ষের যে কিছু করার থাকে না সেটি প্রমাণিত। কোয়ার্টার-ফাইনাল ও সেমি-ফাইনালে তার জাদুর ঝলকানি দেখা গেছে, তাই তার পায়ের দিকেই আজো তাকিয়ে থাকবেন স্কালোনি এবং আর্জেন্টিনার ভক্তরা।
ফ্রান্স
১৯৫৮ এবং ১৯৬২ বিশ্বকাপে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর টানা দুইবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি কোনো দল। ফ্রান্সের সামনে এবার সুবর্ণ সুযোগ সেটি অর্জন করার।
বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা ফাইনালে উঠেছে বেশ হেসেখেলেই। গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে শেষ ষোলো নিশ্চিত করে ফেলার পর বেঞ্চের খেলোয়াড়দের নিয়ে শেষ ম্যাচে তিউনিশিয়ার কাছে হারলেও সেটি মোটেও প্রভাব ফেলতে পারেনি।
গ্রুপ পর্বে ফ্রান্সের ফলাফল
ফ্রান্স ৪-১ অস্ট্রেলিয়া
ফ্রান্স ২-১ ডেনমার্ক
ফ্রান্স ০-১ তিউনিশিয়া
শেষ ষোলো
ফ্রান্স ৩-১ পোল্যান্ড
কোয়ার্টার-ফাইনাল
ফ্রান্স ২-১ ইংল্যান্ড
সেমি-ফাইনাল
ফ্রান্স ২-০ মরক্কো
বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সের রেকর্ড
বিশ্বকাপে এবারের আগে তিনবার ফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স, যার মধ্যে দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয় তারা।
ফ্রান্সের শক্তি
শেষ ষোলোর ম্যাচে পোল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে কোয়ার্টার-ফাইনাল নিশ্চিত করে লে ব্লুজরা। সেখানে শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করেন কিলিয়ান এমবাপ্পেরা। সেমি-ফাইনালে কাতার বিশ্বকাপের চমক মরক্কোকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠে লে ব্লুজরা।
ফ্রান্সের প্রতিটি জায়গাতেই যথেষ্ট গোলাবারুদ মজুদ রয়েছে। আছেন একজন কিলিয়ান এমবাপ্পে, কাতার বিশ্বকাপের আলো এখন পর্যন্ত নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন ২৩ বছর বয়সী ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড। ৫ গোল করে গোল্ডেন বুট জেতার লড়াইয়েও আছেন এমবাপ্পে। আর্জেন্টিনার বিপক্ষেও তিনি জ্বলে উঠলে ফ্রান্সের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রাস্তা অনেকটাই সহজ হবে।