রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের পরিচালক হতে লাগবে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা
অন্তত ১০ বছরের প্রশাসনিক বা ব্যবস্থাপনা অথবা পেশাগত অভিজ্ঞতা না থাকলে কেউ রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পরিচালক হতে পারবেন না।
এছাড়া, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মোট শেয়ারের বিপরীতে ২০ শতাংশের বেশি ভোটের অধিকারী কোনো কোম্পানির পরিচালক হলে তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জারি করা এক সার্কুলারে এ কথা বলা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) জারিকৃত রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালায় আরও উল্লেখ করা হয়, সরকারের শেয়ার রয়েছে এমন বেসরকারি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও এ নীতিমালা অনুসরণ করা হবে।
নীতিমালাটিতে রাষ্ট্র খাতের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের যোগ্যতা কী হবে, কাদের নিয়োগ দেওয়া যাবে, তা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এর মাধ্যমে ব্যাংকের পর্ষদে ইচ্ছেমতো নিয়োগের সুযোগ কমলো। রাজনৈতিক দল ও দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আগে যেভাবে নিয়োগ দেওয়া হতো, সেই সুযোগও সীমিত হলো।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালকদের এক-তৃতীয়াংশই থাকবেন নারী। এছাড়া পর্ষদে কমপক্ষে একজন করে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ বা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের মতো আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি এবং ব্যাংকার থাকবেন।
কোনো ব্যক্তি কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা বীমা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হলে একই সময়ে তিনি অন্য কোনো ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বহিঃহিসাব নিরীক্ষক, আইন উপদেষ্টা, উপদেষ্টা, পরামর্শক, বেতনভুক্ত কর্মচারী বা অন্য কোনো পদে বর্তমানে বা গত ৫ বছরের মধ্যে দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলে তিনি ওই ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না। অন্য কোনো ব্যাংকের উপদেষ্টা বা পরামর্শক হিসেবে থাকলেও তিনি পরিচালক নিয়োগের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদে অর্থনীতি, ব্যাংকিং, আর্থিক বাজার, মুদ্রানীতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায় শিক্ষা, ব্যবসায় প্রশাসন, কৃষি, শিল্প, আইন, তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন এবং সরকারের বিবেচনায় অভিজ্ঞ ও প্রমাণিত দক্ষতাসম্পন্ন পেশাজীবী নিয়োগ নিশ্চিত করা হবে।
চেয়ারম্যান বা পরিচালক নিয়োগে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে বাছাই কমিটি করার কথা বলা হয়েছে এ নীতিমালায়। কমিটির বাকি সদস্যদের মধ্যে থাকবেন- আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব, অর্থ বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক। আর সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব (কেন্দ্রীয় ব্যাংক)।
চেয়ারম্যান নিয়োগ বা পুনর্নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিতে হবে। আর পরিচালক নিয়োগে বা পুনর্নিয়োগে অনুমোদন নিতে হবে অর্থমন্ত্রীর।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৩ বছর। কোনো পরিচালক টানা ৩ মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না। তবে কোনো পরিচালকের ৩ মেয়াদ শেষে আরও ৩ বছর পার হওয়ার পর তিনি আবারও পরিচালক হওয়ার যোগ্য হবেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, "এমনিতে নীতিমালাটি ভালো হয়েছে। তবে এতে সরকারের বিবেচনায় অভিজ্ঞ ও প্রমাণিত দক্ষতাসম্পন্ন পেশাজীবীকে পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই নিয়মটি থাকার কারণে অনেক অনুপযুক্ত সরকারি দলের সমর্থক বা নেতাকর্মীকে ব্যাংকের নীতিনির্ধারণীর এসব পদে নিয়োগের সুযোগও রয়ে গেছে।"
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে আলাপকালে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, "চেয়ারম্যান বা পরিচালক নিয়োগের নীতিমালায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে বাছাই কমিটি করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া, বাকি সদস্যরাও আমলা। চাকরিতে বহাল থাকা আমলাদের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে কাজ করা কঠিন।"
"তাই বাছাই কমিটিতে সাবেক গভর্নর, অভিজ্ঞ ব্যাংকার বা সাবেক সচিবদের রাখা যেতো। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বা তার প্রতিনিধি কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্বে থাকতে পারতেন। এতে করে বাছাই কমিটির পক্ষে চেয়ারম্যান বা পরিচালক নির্বাচন করা সহজতর হতো।" যোগ করেন তিনি।