চট্টগ্রামে সাংবাদিককে মারধরের মামলায় ইটভাটার ম্যানেজার গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ইসলামপুর ইউনিয়নের মঘাছড়ি এলাকায় অবৈধ ইট ভাটার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিককে জিম্মি করে মারধরের ঘটনায় করা মামলায় কাঞ্চন কুমার তুরি (৩৬) নামে ইটভাটার ম্যানেজারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১২টার দিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রানীর হাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অভিযুক্ত কাঞ্চন রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জীবন কৃষ্ণ তুরির ছেলে।
রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুব মিলকী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ইটভাটার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিককে জিম্মি ও মারধরের ঘটনায় করা মামলায় কাঞ্চন কুমারকে উপজেলার রানীর হাট এলাকা গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) তাকে আদালতে পাঠানো হবে।"
এর আগে গত রোববার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে রাঙ্গুনিয়ায় অবৈধ ইট ভাটার ছবি তোলায় স্থানীয় ইউপি সদস্য মহিউদ্দীন তালুকদার মোহনসহ ৫-৬ জন পিস্তল ঠেকিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সংবাদ প্রতিনিধি আবু আজাদকে মারধর করে। অস্ত্রের মুখে মোহন ওই সাংবাদিককে গাড়িতে তুলে স্থানীয় মঘাছড়ি বাজারে নিয়েও কয়েক দফা পেটায়। এরপর তার কার্যালয়ে বেঁধে রেখে নির্যাতন করে। তার মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলে এবং মানিব্যাগ ও আইডি কার্ড- সব কেড়ে নিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। মারধরের এক পর্যায়ে মোহনের মোবাইল ফোন দিয়ে আবু আজাদের সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সঙ্গে ফোনে কথাও বলে। এরপর ওই সাংবাদিকের পকেটে মোহন নিজের ভিজিটিং কার্ড ঢুকিয়ে দিয়ে ক্ষমতা থাকলে কিছু করতে বলে হুমকিও দেয়।
সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকালে রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় হতায় চেষ্টা, অপহরণ, টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়া, মারধর এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে বাদি হয়ে মামলা করেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক আবু আজাদ। মামলায় ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মহিউদ্দিন তালুকদার মোহন (৪০), চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী (৫৫), ইট ভাটার ম্যানেজার কামরান (৩০), মোহনের সহযোগী কাঞ্চন তুড়ির (৩০) নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাত আরো ৫-৭ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে অভিযুক্ত করা হয়।
এদিকে আবু আজাদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন- সিইউজে। মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল থেকে এই আলটিমেটাম দেন চট্টগ্রামের সাংবাদিক নেতারা।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সিইউজের সভাপতি তপন চক্রবর্তী বলেন, 'যারা সাংবাদিক আবু আজাদের উপর এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। মূল আসামী গ্রেপ্তার না করে অন্য আসামীকে গ্রেপ্তার করে কোন লাভ নেই। পুলিশ প্রশাসন যদি হামলাকারী ও নির্দেশদাতাকে গ্রেপ্তার না করে ৩ দিন পর আমরা পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করবো।'
সিইউজের সাধারণ সম্পাদক ম. সামসুল ইসলাম বলেন, 'আবু আজাদের উপর যে বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে সেটি পুরো সাংবাদিক সমাজ এবং সাংবাদিকতার ওপর হামলা। এই হামলাকে আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারিনা।'
তিনি আরো বলেন, 'ইউপি মেম্বার মোহন সাংবাদিক আবু আজাদের মাথায় যে অস্ত্র ঠেকিয়েছে অবিলম্বে তা জব্দ করতে হবে। এই হামলার সাথে জড়িত ইউপি চেয়ারম্যান এবং মেম্বার সহ সকলকে যদি গ্রেপ্তার করা না হয় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ রাজপথে থেকে প্রশাসনকে বাধ্য করবে।'
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহ সভাপতি শহিদুল আলম বলেন, 'আমরা যখন লিখতে যাবো তখন আমাদের কপালে অস্ত্র ঠেকানো হবে, বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজ এটি কখনোই মেনে নেবেনা।'
সমাবেশে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ সহ চট্টগ্রামের গণমাধ্যম কর্মীরা এতে অংশ নেয়।