১৯৭৫ সালের পর সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতি পাকিস্তানে, ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ
১৯৭৫ সালের পর এ প্রথমবারের মতো জানুয়ারি মাসে পাকিস্তানের মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে সর্বোচ্চ ২৭.৫৫ শতাংশে পৌঁছেছে। এর ফলে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে দেশটির মানুষদের। খবর দ্য ডন-এর।
কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই)-এর মাধ্যমে হিসেব করা এ মুদ্রাস্ফীতি আগের মাসগুলোতে ছিল ২৪.৫ শতাংশ। পাকিস্তানের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়িক সংস্থা আরিফ হাবিব লিমিটেড জানিয়েছে, ১৯৭৫ সালের মে মাসের পর এ প্রথম এটির সিপিআই সর্বোচ্চ ২৭.৭৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে পাকিস্তানের মুদ্রাস্ফীতি ছিল ১৩ শতাংশ। দেশটির ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিক্স (পিবিএস)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে পাকিস্তানের শহুরে ও গ্রামীণ এলাকায় মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যথাক্রমে ২৪.৩৮ ও ৩২.২৬ শতাংশ হয়েছে।
পিবিএসের উপাত্ত অনুযায়ী, পাকিস্তানে গত বছরের তুলনায় পচনশীল খাদ্যদ্রব্যে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে ৬১.৬৩ শতাংশ। এছাড়া বিনোদন ও সংস্কৃতি, অপচনশীল খাদ্যদ্রব্য, পরিবহন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সিপিআই সূচক বেড়েছে যথাক্রমে ৪৪.১৪ শতাংশ, ৪০.৩৪ শতাংশ, ৩৯.১ শতাংশ, ১৮.৭৩ শতাংশ, ১০.৫৮ শতাংশ।
পাকিস্তান সরকারের প্রত্যাশা করেছিল, মুদ্রাস্ফীতি ২৬ শতাংশ হবে। এদিকে দেশটির বাজেটে মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১১.৫ শতাংশ।
মুদ্রাস্ফীতির এ বৃদ্ধির ফলে দেশটির বেতনভুক কর্মজীবী মানুষেরা ভোগান্তির মুখে পড়েছেন। অনেককে একাধিক চাকরি করতে হচ্ছে সাংসারিক ব্যয় মেটানোর জন্য।
গত কয়েকদিনে মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির অবিশ্বাস্য দরপতন ঘটেছে। এছাড়া দেশটিতে জ্বালানির দামও রোববার থেকে বেড়ে গিয়েছে।
জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে দেশটিতে ২৫ ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে, ছয়টির কমেছে এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত থেকেছে।
পাকিস্তানে এখন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে মাইনেবাঁধা কর্মজীবী — সব ধরনের মানুষই দুটো চাকরি করেও ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা উচ্চবিত্ত মানুষ — যারা আগে চার চাকার গাড়ি ব্যবহার করতেন — তারা এখন মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। অনেক মা-বাবা তাদের সন্তানদের আগের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে এনে কম বেতনের স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন।
গত দেড় বছরে দেশটিতে বিদ্যুতের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। মাসিক মাইনের কর্মজীবীদের অনেকের বছরের পর বছর বেতন বাড়েনি।
২৭ বছর বয়সী ফাইজান তার মোটরসাইকেলে রাইড-শেয়ার করেন। তিনি বলেন, 'পিটিআই সরকারের সময় আমরা ৩০০ রুপি দিয়ে দুই লিটার তেল পেতাম। তখন ব্যবসাও ভালো চলছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর থেকে আমরা মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছি।'
লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস-এর সহযোগী অধ্যাপক ড. আলি চিমা বলেন, 'পাকিস্তানে এ পরিমাণ উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এর আগে কখনো এত দীর্ঘ সময় ধরে চলমান ছিল না।'
মুদ্রাস্ফীতি না কমার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পাকিস্তান মুদ্রাস্ফীতিজনিত বৈশ্বিক পণ্যমূল্যের একটি চক্রের মুখে পড়েছে এবং একইসঙ্গে দেশটি বিশ্ববাজারের পণ্য ও তেলের ওপর নির্ভরশীল।