রেকর্ড গড়া জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের
বেশ কদিন ধরেই সিলেটে বৃষ্টির দাপট। রান পাহাড় গড়েও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে জেতা হয়নি বাংলাদেশের, বৃষ্টিতে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়। তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডের দিন সকাল থেকেই বৃষ্টি, দুপুরের আগ পর্যন্ত চলে বৃষ্টি-রোদের খেলা। পুরোপুরি পেসারদের অনকূল পরিবেশ। এদিনই কিনা টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি ব্যালবার্নি! আত্মঘাতী হবে জানলে এমন সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই নিতেন না আইরিশ অধিনায়ক।
অবশ্য টসের সময় আশার কথা জানান তিনি, 'প্রথম দুই ওয়ানডেতে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছি, এবার ভিন্ন কিছু করে দেখি ভাগ্য বদলায় কিনা।' বদলাবে কী, উল্টো বিপদ ডেকে এনেছেন তিনি! আগে ব্যাটিং করতে নেমে হাসান মাহমুদের তোপেই দিশেহারা তারা। তাসকিন আহমেদ করলেন আগুনে বোলিং, সঙ্গে থাকলো এবাদত হোসেনের দাপটও। বাংলাদেশের তিন পেসারের বোলিং আগুনে ঝলসে যাওয়া আয়ারল্যান্ডের ইনিংস অল্পতেই শেষ। যা দাপুটে ব্যাটিংয়ে নিমিষেই পাড়ি দিয়ে দলকে রেকর্ড জয় এনে দেন তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাস।
বৃহস্পতিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডকে ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। দাপুটে এই জয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে উইকেটের হিসাবে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়, এর আগে সবচেয়ে বড় জয় ছিল ৯ উইকেটে। এই সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে রানের হিসাবে সবচেয়ে বড় জয় পায় বাংলাদেশ, এবার মিললো উইকেটে। বেশি বল হাতে রেখে জেতার হিসাবেও শাসন করলো তামিম ইকবালের দল।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে আয়ারল্যান্ড। ম্যাচসেরা হাসান, তাসকিন ও এবাদতের বোলিং তোপের মুখে ২৮.১ ওভারে ১০১ রানেই অলআউট হয়ে যায় আইরিশরা। দলটির মাত্র দুজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করেন, বাকিরা উইকেটে গেছেন আর ফিরেছেন। ছোট লক্ষ্য হেসেখেলেই পাড়ি দিয়ে ফেলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ও লিটন। খরচা করেন মাত্র ১৩.১ ওভার, সময় লাগে ৫৯ মিনিট। বেশি বল হাতে রেখে জেতার দিক থেকে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বড় জয়। এদিন ২২১ বল হাতে রেখে জিতেছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বড় ২২৯ বল হাতে রেখে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, ২০০৯ সালে।
পেসারদের দিয়ে আইরিশদের কীভাবে চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ, সেটা তাদের বোলিং সেটআপই বলে দেয়। ২২ ওভারের মধ্যে ৮ উইকেট পড়ে গেলেও তখনও বোলিংয়ে আসেননি সাকিব আল হাসান, শেষ পর্যন্ত বোলিংই করতে হয়নি তাকে। এবারই প্রথম কোনো ওয়ানডেতে প্রতিপক্ষের ১০টি উইকেটই নিলেন বাংলাদেশের পেসাররা। এর আগে ১২ বার ম্যাচে ৮টি করে উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশের পেসাররা।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরু থেকেই চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন তামিম ও লিটন। চোখ ধাঁধানো সব শটে পাওয়ার প্লের ১০ ওভার থেকে ৮১ রান তোলেন তারা, যা বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের চতুর্থ সেরা। এরপর সহজেই দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান তারা। তামিম ৪১ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন। ক্যারিয়ারের নবম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া লিটন ৩৮ বলে ১০টি চারে ৫০ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন।
এর আগে ব্যাটিং করা আইরিশদের ইনিংস শুরুতেই ওলট-পালট করে দেন ম্যাচসেরা হাসান, প্রথম তিন উইকেটই তার শিকার। তরুণ এই পেসারকে উইকেট দিলেও তাসকিনের বিপক্ষে অবশ্য বেশি ভুগতে হয়েছে সফরকারীদের। বাংলাদেশের পেস আক্রমণের নেতা হয়ে ওঠা ডানহাতি এই পেসার প্রথম ৫ ওভারে মাত্র ১১ রানে একটি উইকেট নেন। এবাদতও আইরিশদের ভুগিয়েছেন, তবে তার লাইন-লেংথ গোছানো ছিল না। উইকেটের দেখা মিললেও আইরিশদের খারাপ সময়ের মাঝেও তিনি সবচেয়ে বেশি ৪.৮৩ ইকোনমিতে রান খরচা করেন।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা আয়ারল্যান্ডকে শুরু থেকেই পরীক্ষা দিতে হয় হাসান ও তাসকিনের বিপক্ষে। প্রথম ৪ ওভারে তারা ৪ রান করে। পঞ্চম ওভারেই বেজে ওঠে ভাঙনের সুর। স্টিফেন ডোহেনিকে ফিরিয়ে শুরুটা করেন হাসান। এরপর তার দাপটে ১০ রানের মধ্যেই আরও ২ উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। হাসানের শিকারে পরিণত হয়ে ফিরে যান পল স্টার্লিং ও হ্যারি টেক্টর। ২২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে পথ ভুলে যাওয়া আয়ারল্যান্ডের বিপদ আরও বাড়ান তাসকিন, ফিরিয়ে দেন অধিনায়ক অ্যান্ডি ব্যালবার্নিকে।
এখান থেকে কিছুটা প্রতিরোধ, দল স্বস্তি ফেরানোর জোর চেষ্টা চালান লরক্যান টাকার ও সেরা ইনিংস খেলা কার্টিস ক্যাম্ফার। এই জুটিতে ৪২ রান যোগ করেন তারা। ৩১ বলে ২৮ রান করা টাকারকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন এবাদত। এরপর বাংলাদেশের পেসারদের বিপক্ষে কেবল ক্যাম্ফার লড়তে পেরেছেন। ৪৮ বলে ৪টি চারে ইনিংস সেরা ৩১ রান করেন তিনি।
৮.১ ওভারে ৩১ রান খরচায় ৫টি উইকেট নেন হাসান। জাতীয় দলের হয়ে ৮টি ওয়ানডে খেলা ডানহাতি এই পেসার প্রথমবারের মতো ৫ উইকেটের দেখা পেলেন, এটাই তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। আরও কৃপণ বোলিং করা তাসকিন ১০ ওভারে মাত্র ২৬ রানে ৩টি উইকেট পান। ৬ ওভারে ২৯ রানে ২ উইকেট পান এবাদত। নাসুম আহমেদ ৩ ও মেহেদী হাসান মিরাজ ১ এভার বোলিং করলেও উইকেটের দেখা পাননি।