মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশেষ ইনক্রিমেন্ট দেওয়া জরুরি: সিপিডি
মূল্যস্ফীতির প্রভাব থেকে সীমিত আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে সরকারি-বেসরকারিখাতে চাকরিরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জরুরিভিত্তিতে একটি 'বিশেষ ইনক্রিমেন্ট' দেওয়া জরুরি বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সিপিডি'র সুপারিশমালা তুলে ধরার সময় সোমবার (২৭ মার্চ) এ কথা বলেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম।
তিনি বলেন, "মূল্যস্ফীতির কারণে নির্ধারিত আয়ের মানুষ, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। তাদের জন্য ইমিডিয়েটলি একটা স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট দেওয়া দরকার।"
সিডিপির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন জানান, নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২৫% এর বেশি, যা সরকারের প্রকাশিত গড় মূল্যস্ফীতির তথ্য দিয়ে বোঝা যায় না।
তিনি বলেন, "বর্তমানে ঢাকা শহরে চার সদস্যের একটি পরিবারের মাছ-মাংস ছাড়া (কম্প্রোমাইজ ডায়েট) মাসিক খাবার ব্যয় ৭,১৩১ টাকা আর মাছ-মাংসসহ রেগুলার ডায়েটের ব্যয় ২২,৬৬৪ টাকা।"
এ প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন শিল্পখাতের শ্রমিকদের মজুরিতে ৫% ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার পাশাপাশি নতুন মজুরি কাঠামো গঠন করার সুপারিশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের তুলনায় বাংলাদেশে চিনির দাম বেশি। এছাড়া দেশে চালের দাম ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের চেয়ে বেশি, যদিও বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং বেশ অল্প পরিমাণে চাল আমদানি করে।
সিপিডি বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিদ্যমান গুরুতর চাপ মোকাবেলার যে প্রয়োজনীয়তা তার উপর জোর দেওয়া উচিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী পণ্যমূল্য বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব এবং করোনা মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারের ধীরগতির কারণে দেশের অর্থনীতি ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
রাজস্ব মোবিলাইজেশনে নেতিবাচক বৃদ্ধি, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ধীরগতিতে বাস্তবায়ন, ঘাটতি অর্থায়নের কারণে ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরতা বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আকাশচুম্বী দাম, ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতির অবনতি, বাহ্যিক খাতের ভারসাম্যের অবনতি এবং রাষ্ট্রীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সহ বেশ কিছু উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তুলে ধরেন ডা. ফাহমিদা খাতুন।
সিপিডি এর বিশ্লেষণে বলে, "বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নীতিনির্ধারকদের প্রয়োজনীয় নীতি গ্রহণের সুযোগও সীমিত হয়ে গেছে।"
এই প্রেক্ষাপটে সিপিডি সুপারিশ করেছে, নির্দিষ্ট আয় এবং নিম্ন আয়ের মানুষের চাহিদা পূরণের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা উচিত।
সিপিডি আরো বলে, পরবর্তী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের সময় বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করা উচিত সবার আগে।
সিপিডি আরও সুপারিশ করেছে, ২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে বর্তমানের বাস্তবতা বিবেচনা করা উচিত, উপলব্ধ নীতির বিকল্প নিয়ে প্রয়োজনীয় মূল্যায়ন করা উচিত এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
"নীতিগতভাবে ভুল পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে আরেকটি নির্বাচনী বছরে আরো বেশি অস্থিরতা তৈরি হওয়া আসলে অযৌক্তিক," বলেছে সিপিডি।