মামলার কাঠগড়ায় ট্রাম্প- এখন কী হবে? কোন পথে তার ভবিষ্যৎ!
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় পর্নো তারকাকে ঘুষ দেওয়াসহ যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সে ঘটনাগুলো ঘটেছে এখন থেকে প্রায় ৭ বছর আগে।
তবে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়ের ওই ঘটনায় ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করে সম্প্রতি অভিযোগ গঠন করেছেন ম্যানহাটনের গ্র্যান্ড জুরি আদালত। এর ফলে ঘটনার দীর্ঘ ৭ বছর পর এবং আসন্ন ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে আদালতের চক্কর কাটতে হয়েছে সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেকোনো ট্রায়াল (বিচারকার্য) এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতে পারে। অর্থাৎ, এই বিচার ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণার আগে বা পরেও হতে পারে।
এদিকে, ফৌজদারি মামলায় আদালতে আত্মসমার্পণের জন্য স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) নিউইয়র্কে পৌঁছান ডোনাল্ড ট্রাম্প। ম্যানহাটনের ডিস্ট্রিক্ট আদালতে পৌঁছানোর পর তাকে 'গ্রেপ্তার' দেখিয়ে হেফাজতে নেয় সেখানকার পুলিশ।
এরপর আদালতে শুনানি শুরু হলে তার বিরুদ্ধে ৩৪টি অপরাধমূলক অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। তবে সব অভিযোগই অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।
শুনানি শেষে আবার ফ্লোরিডায় নিজের বাসভবনে ফিরে গেছেন তিনি। আগামী ৪ ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন বিচারক জুয়ান মার্চান।
প্রসিকিউটররা জানান, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তারা বিচারের দিন ধার্যের পরিকল্পনা করেছেন; অন্যদিকে, ট্রাম্পের আইনজীবীরা ২০২৪ সালের বসন্তে দিন ধার্যের সুপারিশ করেন।
মামলা ও নির্বাচনি প্রচারণা
মার্কিন ফৌজদারি বিচার বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের প্রথম তিন ত্রৈমাসিকে ম্যানহাটনের ফৌজদারি মামলাগুলোর অভিযুক্তির দিন থেকে চূড়ান্ত রায় পর্যন্ত পৌঁছাতে গড়ে সময় লেগেছে ৯০০ দিনেরও বেশি।
আর বলা বাহুল্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মামলাটি সাধারণ আর দশটি মামলার মতো নয়। তার আইনজীবীরা ইতোমধ্যেই বলেছেন, তারা এই মামলার লড়াই সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে করতে চান।
এদিকে, আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে রিপাবলিকান দল থেকে 'স্টেট-বাই-স্টেট' বা প্রদেশ থেকে প্রার্থী মনোনয়ন করা হবে ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে। এরপর ডেমোক্র্যাটদের মনোনীত প্রার্থীর মুখোমুখি হতে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত প্রার্থীকে মনোনীত করবে রিপাবলিকান। তিনিই অংশ নেবেন নির্বাচনে।
ট্রাম্প যদি নির্বাচিতও হন, তবুও নিজেকে রাষ্ট্রীয় অভিযোগ থেকে ক্ষমা করার এখতিয়ার থাকবে না তার। কিন্তু রাষ্ট্রীয় অভিযোগের জন্য একজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বা প্রেসিডেন্টকে বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়টি অনেকটা অজানা আইনি জালে জড়িয়ে যাওয়ার মতোই হবে বলে জানানো হয়েছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে।
এ বিষয়ে ম্যানহাটনের সাবেক প্রসিকিউটর ক্যারেন ফ্রিডম্যান অ্যাগ্নিফিলো বলেন, 'এটি এতটাই নজিরবিহীন যে, এ ব্যাপারে আমার পক্ষে কিছু বলা কঠিন। আমি মনে করি, বিষয়টি খুবই জটিল।"
মামলা নিয়ে ট্রাম্পের যত অভিযোগ!
একজন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, টেলিভিশন সেলিব্রিটি এবং পরবর্তীতে রাজনীতিবিদ হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখনই আইনী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন, তখনই অবলম্বন করেছেন পাল্টা আক্রমনাত্মক কৌশল; সেইসঙ্গে মামলার ইস্যুতে কাল বিলম্বও করেছেন।
ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তার অভিযোগ, ম্যানহাটনের জেলা অ্যাটর্নি ও ডেমোক্র্যাট অ্যালভিন ব্র্যাগ নিজের রাজনৈতিক লাভের জন্যই তাকে টার্গেট করেছেন।
এছাড়া, বিচারক জুয়ান মার্চানের বিরুদ্ধেও আভিযোগ এনেছেন ট্রাম্প। বলেছেন, গত বছর এক ফৌজদারি ট্যাক্স-জালিয়াতির বিচারের তদারকির সময় তার কোম্পানির বিরুদ্ধে অন্যায় আচরণ করেছিলেন বিচারক মার্চান।
মঙ্গলবার শুনানিকালে ট্রাম্প বলেছেন, মামলাটি ডেমোক্র্যাটদের আস্তানা ম্যানহাটন থেকে সরিয়ে নিউইয়র্ক সিটির রক্ষণশীল জায়গা স্টেটেন আইল্যান্ডে স্থানান্তর করা উচিত।
তবে মামলার বিচারকার্য থেকে বিচারক মার্চানকে সরাতে হলে ট্রাম্পের আইনজীবীদেরকে বিচারকের অযোগ্যতা (এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে) প্রমাণ করতে হবে। তাদেরকে প্রস্তাব দাখিল করতে হবে, কেন মার্চান মামলাটি পরিচালনা করার যোগ্যতা রাখেন না; কাজটি নিঃসন্দেহে ট্রাম্পের আইনজীবীদের জন্য কঠিন। এ বিষয়ে ম্যানহাটনের সাবেক সহকারী জেলা অ্যাটর্নি মার্ক স্কোল বলেছেন, ভিত্তিহীন বিষয়টিকে অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করা হবে।
ঠিক একইভাবে স্থান পরিবর্তনের যেকোনো অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করা হবে বলে উল্লেখ করেছেন সাবেক এই অ্যাটর্নি।
এভাবে আরও নানান ইস্যুতে ট্রাম্প বিচারকার্যে বিলম্ব ঘটানোর চেষ্টা করতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে; মামলার অনেক কিছু নিয়েই করতে পারেন চ্যালেঞ্জ। যদিও বিচার চলাকালে নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো আইনি বাধার মুখে পড়বেন না অভিযুক্ত ট্রাম্প, তবে প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার বিষয়টি ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণায় নিঃসন্দেহে প্রভাব ফেলবে।