৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ চলবে বঙ্গভবনের
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন, বঙ্গভবনের অবকাঠামোগত সমস্যার সমাধান করাসহ বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক ভাবগাম্ভীরর্য এবং মর্যাদা সমুন্নত রাখতে একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার।
৪৬.৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি মার্চ ২০২৩ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ মেয়াদে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা করা হয়েছে।
গত ৬ এপ্রিল পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা ডিপিপি পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে বলেছে।
এ প্রকল্পের আওতায় বঙ্গভবনের অভ্যন্তরে তোশাখানা, দরবার হল, কেবিনেট হল, রান্নাঘর এবং শেল্টার হাউজসহ অন্যান্য স্থানের পূর্ত ও বৈদ্যুতিক আধুনিকায়ন করবে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে পিইসি সভায় গণপূর্ত অধিদপ্তর জানায়, বঙ্গভবনের দরবার হলের মেঝেতে সাধারণ মানের কার্পেট রয়েছে, যা পরিবর্তন করে কার্পেটের বদলে মার্বেল স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বঙ্গভবনে অবস্থিত মানুক হাউজ বা তোশাখানা নামে পরিচিত ভবনটি সংরক্ষণের জন্য ভবনের শক্তিমাত্রা বৃদ্ধিসহ আধুনিক মিউজিয়ামের সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত স্থাপত্য নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে।
এছাড়া, শেল্টার হাউজ স্থাপনাটিকে পূর্বে ষাটের দশকের আদলে নকশা করে সংরক্ষণ করে রাখার নির্দেশনা পাওয়া গেছে।
পিইসি সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কিচেন যুগোপযোগি স্থাপত্য নকশার মাধ্যমে আধুনিকায়ন, তিন তলায় অবস্থিত গেস্ট রুমসহ অন্যান্য অংশের স্যানিটারি পাইপ ফিটিংসের কাজ, বঙ্গভবনে হরিণ পুকুরের পাশে ওয়াকওয়ে এবং বেঞ্চ এর সৌন্দর্য্য বর্ধন, বঙ্গভবনের পূর্বাংশে এবং উত্তরে দানা দিঘি সংলগ্ন এলাকা থেকে ৪ নম্বর গেট পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসনে সুয়ারেজ লাইস নির্মাণ কাজ, ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল কাজ এবং সবুজায়ন কাজগুলো এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
'প্রস্তাবিত কাজগুলো বাস্তবায়িত করা গেলে বঙ্গভবনের অবকাঠামোগত সমস্যাদি সমাধান হবে এবং বঙ্গভবন তার ঐতিহাসিক ভাবগাম্ভীর্য এবং মর্যাদা সমুন্নত রাখতে পারবে'- জানিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
প্রকল্প প্রস্তাব মূল্যায়ন করে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলনে কিছুক্ষেত্রে 'থোক' হিসেবে অর্থ রাখা হয়েছে।
যেমন- গেস্টরুমের আধুনিকায়নে ১.৮০ কোটি টাকা, ফার্নিচার সরবরাহে ১.০৫ কোটি টাকা, তোশাখানার জন্য ড্যাম্প প্রুফিং ও রেট্রোফিটিং ১.৫০ কোটি টাকা, মূল ভবনের ফায়ার প্রোটেকশন ও ডিকেশন সিস্টেমের জন্য ৯৫ লাখ টাকা।
এছাড়া, তোশাখানার ম্যুরাল স্থাপনে ৩০ লাখ টাকা, গুপ্তঘর সংলগ্ন ওয়াকওয়ে নিমার্ণে ৭০ লাখ টাকা, লাইব্রেরি ও অফিস কক্ষগুলোর আধুনিকায়নে ৮০ লাখ টাকা, শিশুদের আধুনিক খেলনার জন্য ৩০ লাখ টাকা, তোশাখানার উপহার সামগ্রীগুলোর রেস্টোরেশনে ৪০ লাখ টাকা, কয়েকটি লন উন্নয়নে ৬৮.৫৬ লাখ টাকা এবং কিছু গাছের গোড়ায় গ্রাউন্ড কভার নির্মাণে ১০ লাখ টাকা 'থোক' হিসেবে রাখা হয়েছে।
এসব ক্ষেত্রে থোক এর পরিবর্তে যথাসম্ভব সংখ্যা বা পরিমাণসহ ডিপিপিতে বিস্তারিত বিভাজন উল্লেখ করতে পরামর্শ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এখন প্রকল্প প্রস্তাবটি পুনর্গঠন করে কমিশনের ডিপিপি পাঠানো হলে এটি অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় পাঠানো হবে।
আর কমিশনের সুপারিশের আলোকে ডিপিপি পুনর্গঠন না করে কমিশনে পাঠানো হলে আবারও পিইসি সভায় তা মূল্যায়ন করা হবে।
গোড়ার দিকে বঙ্গভবন ছিল ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয়ের অস্থায়ী সরকারি বাসভবন এবং এরপরে পূর্ববাংলার গভর্নরের সরকারি বাসস্থান, যা গভর্নর হাউজ নামে পরিচিত ছিল।
বঙ্গভবনের চারপাশে রয়েছে উচ্চ সীমানা প্রাচীর। প্রধান ভবনটি তিন তলা বিশিষ্ট একটি প্রাসাদোপম অট্টালিকা। এই ভবনের চারপাশ সবুজ বৃক্ষরাজি পরিবেষ্টিত।
প্রধান ভবনের নিচতলায় রয়েছে রাষ্ট্রপতির অফিস, রাষ্ট্রপতির সচিব ও সামরিক সচিবদের অফিস, অন্যান্য কর্মকর্তাদের অফিস এবং দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য পৃথক পৃথক কক্ষ।