পাওয়া গেল প্রথম চুম্বনের প্রমাণ! ৪,৫০০ বছর আগের মাটির ফলক তা-ই বলছে
মানুষ কখন পরস্পরকে চুমু খেতে শুরু করেছিল, কেউ জানেন না। তবে লিখিত রেকর্ডে চুমুর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় মেসোপটেমিয়ায়, সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে। খবর এল পাইস-এর।
এত দিন ধারণা করা হতো, চুম্বনের ইতিহাস এক হাজার বছরের। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ অন্তত সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে চুম্বন শুরু করেছিল।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, ইরাক ও সিরিয়ার (প্রাচীন মেসোপোটেমিয়া এই অঞ্চলে ছিল) কিছু এলাকার মৃৎশিলা থেকে জানা গেছে, মেসোপটেমিয়া সভ্যতার প্রথম দিকের সমাজে চুম্বন প্রচলিত ছিল।
সাড়ে ৪ হাজার বছর আগেও চুমু এখনকার মতোই যৌনতা এবং স্নেহ বা সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে কাজ করত।
গবেষক শেরিল কার্শেনবম-এর 'দ্য সায়েন্স অভ কিসিং' বইয়ে উঠে এসেছে সাড়ে ৩ হাজার বছর আগের ভারতীয় সভ্যতায় চুম্বনের উল্লেখ রয়েছে। সেখান থেকে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের লোকেরা প্রাচীন গ্রিসে এই প্রথা বয়ে নিয়ে যায়।
'অথর্ব বেদ'-এর মতো হিন্দুদের পবিত্র গ্রন্থগুলোতে সরাসরি 'চুম্বন' শব্দটি নেই। তবে কোথাও কোথাও 'ঠোঁটের ঘ্রাণ' নেওয়ার উল্লেখ রয়েছে। আরেক জায়গায়া পাওয়া যায়, 'এক তরুণ উপর্যুপরি আরেক তরুণীর [ঠোঁট] লেহন' করছে। এখানে ঠোঁটের ঘ্রাণ নেওয়া ও ঠোঁট লেহনকে চুমু বলা যায় বলে মত দিয়েছেন কার্শেনবম।
মহাভারতেও ঠোঁট মেলানোর উল্লেখ রয়েছে। তবে বাৎস্যায়নের কামসূত্র-তে চুম্বনের উল্লেখ আরও স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়।
তবে সায়েন্স-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে দুই ড্যানিশ গবেষক বলেছেন, চুম্বনের স্পষ্ট উল্লেখ প্রথম পাওয়া যায় সুমেরীয় সভ্যতার লেখাজোকায়।
এ গবেষণার এক গবেষক অধ্যাপক ট্রোয়েলস পাঙ্ক আরবল বলেন, 'রোমান্টিক-যৌনতাপূর্ণ চুম্বনের প্রথম লিখিত উল্লেখ বা প্রমাণ পাওয়া যায় প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায়, খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় ২,৫০০ বছর আগে।'
দুই ড্যানিশ বিজ্ঞানী বলেন, 'চুম্বনের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় পুরাণের কাহিনিতে, যেখানে দেবতাদের আচরণ ও কাজকর্মের উল্লেখ থাকে।'
আরবল বলেন, 'এই মাটির ট্যাবলেটগুলো হাজার হাজার বছর ধরে টিকে আছে। ট্যাবলেটগুলোতে ঘনিষ্ঠ চুম্বনের স্পষ্ট উদাহরণ রয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, প্রাচীন যুগের মানুষেরা চুম্বন করত।'
তিনি আরও বলেন, 'চুম্বন কোনো একটি সুনির্দিষ্ট অঞ্চলে এককভাবে শুরু হয়েছিল এবং পরবর্তীতে সারা বিশ্বের ছড়িয়ে পড়েছিল, এমনটি ভাবার আর সুযোগ নেই। বরং হাজার হাজার বছর আগের বিভিন্ন সমাজে চুম্বন প্রচলিত ছিল। এটি অতি প্রাচীন সংস্কৃতি।'
চুমু খাওয়ার অভ্যাস মানুষের মৌলিক আচরণ ও অতি প্রাচীন সংস্কৃতি বলে উল্লেখ করেছেন নৃবিজ্ঞানীরা।
আরবল আরও জানান, প্রাচীনকালে চুম্বনের মাধ্যমে হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস-১ নামের এক ধরনের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। এ ভাইরাসের সংক্রমণে ঠান্ডা ঘা তৈরি হতো। মেসোপটেমিয়া সভ্যতার একটি প্রাচীন চিকিৎসা গ্রন্থ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ব্যক্তিগত নথিপত্রে চুম্বনের প্রথম স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায় দ্বিতীয় সহস্রাব্দের শুরুতে।
চুমুর প্রথম উল্লেখ পাওয়া গেছে তথাকথিত বারটন সিলিন্ডারে—এই মিথোলজিক্যাল টেক্সট লেখা হয়েছিল সুমেরীয় ভাষায়, ৪,৩৫০ থেকে ৪,৫০০ বছর আগে।
ওই টেক্সটে আছে:
'সে বহুকাল, বহু রাত, বহু বছর আগের কথা। তুমুল ঝড় হচ্ছিল, হচ্ছিল বজ্রপাত। নিপ্পুর শহরের পবিত্র এলাকায় ঝড়, বজ্রপাত হচ্ছিল। স্বর্গ পৃথিবীর সঙ্গে কথা বলছিল, পৃথিবী কথা বলছিল স্বর্গের সঙ্গে। ওই রাতে এনলিলের বড় বোনের সঙ্গে মিলন হয় নিনহারসাগের। তিনি দেবীকে চুমু খান।'
হিন্দুদের পবিত্র গ্রন্থে ঠোঁট মেলানোর উল্লেখেরও এক হাজার বছর আগের লেখা এটি।
সুমেরীয় ভাষায় লেখা অন্যান্য ট্যাবলেটে আরও নানা ধরনের চুম্বনের কথা এসেছে। সঙ্গমের পর চুমুর কথা এসেছে সুমেরীয় লেখায়।
অন্যদিকে আক্কাদীয়—সুমেরিয়ার উত্তরে স্যতা—ট্যাবলেটে এসেছে বাবা-মা বা পুরোহিতের পায়ে সম্মানসূচক চুমু খাওয়ার কথা। যৌন আকাঙ্ক্ষাপূর্ণ চুমুর কথাও এসেছে অন্যান্য লেখায়।
ড্যানিশ বিজ্ঞানীদের নতুন এই গবেষণায় মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, এখন পর্যন্ত পাওয়া প্রমাণ অনুসারে, বিশ্বের প্রথম চুম্বনের উল্লেখ পাওয়া যায় মেসোপটেমিয়া সভ্যতায়।