রাতারাতি দক্ষিণ কোরিয়ানদের বয়স দুই বছর কমে গেল!
দক্ষিণ কোরিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা 'কোরিয়ান বয়স' গণনা পদ্ধতি বাতিল করে 'আন্তর্জাতিক বয়স' গণনা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। আজ (বুধবার) থেকে দেশটির সমস্ত বিচার বিভাগীয় এবং প্রশাসনিক কাজে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।
বয়স গণনার পদ্ধতি পরিবর্তনের ফলে দেশটির ৫১ মিলিয়ন নাগরিকের বয়স রাতারাতি পরিবর্তন হয়ে গেছে। নতুন আইন অনুযায়ী, দেশটির প্রত্যেকের বয়সই এক কিংবা দুই বছর কমে গিয়েছে।
এতদিন দক্ষিণ কোরিয়ায় বয়স গণনার পদ্ধতি ছিল একটু ভিন্ন ধরণের, যা 'কোরিয়ান বয়স' গণনা পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত। এ পদ্ধতি অনুযায়ী দেশটিতে যখন একটি শিশু জন্মগ্রহণ করে তখন তার বয়স শূন্য থেকে গণনা না করে এক বছর বয়সী হিসেবে গণনা শুরু করা হয়।
তারপর ইংরেজি নববর্ষে, অর্থাৎ জানুয়ারির ১ তারিখে তাদের বয়সের সাথে আরও এক বছর যোগ হতো। এর অর্থ হলো, ডিসেম্বরে জন্ম নেওয়া একটি দক্ষিণ কোরিয়ান শিশু মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দুই বছর বয়সী বলে বিবেচিত হতো!
আবার কখনো কখনো দেশটিতে বয়স গণনার ক্ষেত্রে 'ক্যালেন্ডার বয়স' গণনা পদ্ধতিও ব্যবহার করা হতো। এটি মূলত 'আন্তর্জাতিক বয়স' ও 'কোরিয়ান বয়স' গণনা পদ্ধতির মিশ্রণ।
'ক্যালেন্ডার বয়স' গণনা পদ্ধতি অনুযায়ী একটি শিশু জন্মগ্রহণের পর আন্তর্জাতিক নিয়মের মতোই তার বয়স শূন্য ধরা হয়। কিন্তু জানুয়ারির ১ তারিখ আসলে শিশুটির বয়স 'কোরিয়ার বয়স' পদ্ধতির আদলে ১ বছর ধরে নেওয়া হয়।
উদাহরণস্বরূপ, 'গ্যাঙ্গাম স্টাইল' খ্যাত দক্ষিণ কোরিয়ার গায়ক সাই এর কথাই বলা যাক। বিখ্যাত এ সঙ্গীতশিল্পী ১৯৭৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তার আন্তর্জাতিক বয়স ৪৫ বছর, ক্যালেন্ডার বয়স ৪৬ বছর ও কোরিয়ান বয়স ৪৭ বছর।
গত বছরের মে মাসে ইওন সুক-ইওল দেশটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর বয়স গণনার এ পদ্ধতিটি ঘিরে বিভ্রান্তি সমাধানে গুরুত্ব দেন। তারই অংশ হিসেবে গত ডিসেম্বরে বয়স গণনার পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে সংসদে আইন পাশ করা হয়।
'আন্তর্জাতিক বয়স' গণনার সাথে 'কোরিয়ান বয়স' গণনা পদ্ধতির পার্থক্য থাকার কারণে এতদিন নানা সমস্যার তৈরি হতো। বহু বছরের বিতর্ক ও প্রচেষ্টার পর এবার দেশটি সত্যিকার অর্থেই বয়স গণনার পদ্ধতিতে পরিবর্তন নিয়ে আসলো।
গত সোমবার এক ব্রিফিংয়ে দেশটির আইনমন্ত্রী লি ওয়ান কিউ জানান, বয়স গণনায় আন্তর্জাতিক পদ্ধতি গ্রহণের ফলে বিভিন্ন সামাজিক বিভ্রান্তি এবং বিরোধ কমে আসবে। একইসাথে এতদিন মিশ্র পদ্ধতি ব্যবহারের কারণে যে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হতো, তা অনেকাংশে কমে আসবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন এ আইন প্রণয়নের সাথে আন্তর্জাতিক বয়স ছাড়াও সংশ্লিষ্ট আরও বেশ কয়েকটি বিষয় যুক্ত রয়েছে। যেমন, মাসভেদে বয়স গণনা না করে বরং একজন ব্যক্তি যেই সালে জন্ম নিয়েছেন সেটা অনুযায়ী তার বয়স গণনা করা হবে।
উদাহরণস্বরূপ, নতুন এ আইন অনুযায়ী ১৯৯০ সালের জানুয়ারি ও একই বছরের ডিসেম্বর মাসে জন্ম নেওয়া দুই ব্যক্তির বয়স একই বলে গণ্য করা হবে।
একইসাথে জন্ম সালের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক বয়স ১৯ বছর হলেই ব্যক্তি অ্যালকোহল কেনার অনুমোদন পাবেন।
এমনকি স্কুলে ভর্তি কিংবা সেনাবাহিনীতে যোগদানের ক্ষেত্রেও আইনটি অনুযায়ী 'আন্তর্জাতিক বয়স' পদ্ধতি বিবেচনা করা হবে। তবে আপাতত দেশটির বহু নাগরিক সামাজিক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে বহুদিন ধরে চলে আসা 'কোরিয়ান বয়স' পদ্ধতিই ব্যবহার করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে দেশটির আইন মন্ত্রণালয়ের করা এক জরিপে জানা যায়, দেশটির শতকরা ৮৬ দশমিক ২ ভাগ নাগরিক 'আন্তর্জাতিক বয়স' গণনা পদ্ধতি ব্যবহার করবে বলে জানিয়েছেন।
'কোরিয়ান বয়স' গণনা পদ্ধতি কোরিয়ার জন্য একেবারে অনন্য নয়। চীন, জাপানসহ এ অঞ্চলের অনেক দেশে এক সময় বয়স গণনার এই পদ্ধতি চালু ছিল।
উত্তর কোরিয়া ১৯৮০ সালের দিকে কোরিয়ান পদ্ধতি থেকে আন্তর্জাতিক বয়স গণনা পদ্ধতিতে চলে গেলেও দক্ষিণ কোরিয়ায় এতদিন আগের পদ্ধতিই বহাল ছিল।