পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ: বগুড়ায় পরিস্থিতি সামলাতে ছোড়া টিয়ারশেলে অসুস্থ শিক্ষার্থীরা
বগুড়ায় পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় শতাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বগুড়ার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়া শহরের ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মোড়ে পুলিশ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সে সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ একাধিক টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
টিয়ারশেলের ধোঁয়া পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিদ্যালয়টির রাস্তার পাশের শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার্থীরা অসুস্থ বোধ করতে শুরু করে।
কয়েকজন শিক্ষার্থী বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসক মো. শফিক আমিন কাজল জানান, 'শিক্ষার্থীরা ধোঁয়ায় বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। অনেকের সাময়িকভাবে শ্বাসকষ্ট হয়েছে।'
চিকিৎসা নেওয়া নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী স্নেহা আক্তার জানায়, 'দুপুরে ক্লাস করছিলাম। হঠাৎ অনেক জোরে জোরে শব্দ হতে থাকে। এরপর ক্লাসের ভেতর ধোঁয়ায় ভরে যায়। তখন চোখ জ্বালা করছিল, নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। পরে ম্যাডাম এসে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসেন।'
৭ম শ্রেণির আফিয়ার মা খাদিজা বেগম জানান তিনি বিদ্যালয় থেকে খবর পেয়ে হাসপাতালে এসেছেন। তিনি বলেন, 'মেয়ে টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে স্যালাইন দিয়ে রেখেছেন চিকিৎসেরা।'
ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস কবির বলেন, 'প্রথমে আমরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমের বাইরে নিয়ে আসি। পরে অবস্থা বেশি খারাপ মনে হলে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের অন্তত এক-দেড়শ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়।'
অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিক চিকিৎসার পর সুস্থ হয়েছে। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ৩২ জন শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে। অনেকের বাবা-মা তাদের সন্তানদেরকে বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে গেছেন বলে জানান শিক্ষক ফেরদৌস কবির।
অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছেন জেলা বিএনপি সভাপতি রেজাউল করিম বাদশাসহ অন্য নেতা-কর্মীরা। পরবর্তীসময়ে সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এক দফা দাবিতে বিএনপির পদযাত্রা মিছিলটিকে সাতমাথা হয়ে দলীয় কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য বাধা দেয় পুলিশ। এতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়লে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ তীব্র হলে টিয়ারশেল এবং পরে রাবার বুলেট ছুড়ে পুলিশ। সংঘর্ষে পুলিশের অন্তত ছয় সদস্য আহত হন।