নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি, মশা নিধন ও পরিবেশ উন্নয়নে গুরুত্ব উত্তর সিটির বাজেটে
নতুন অর্থবছরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) বাজেটে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি, মশক নিধন ও পরিবেশ উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়ে এসব খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়িয়েছে উত্তর সিটি।
সোমবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৫৩৬৯.৪৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন উত্তরের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। এসময় তিনি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ২৯৫০.৯৮ কোটি টাকা ঘোষণা করেন।
ঢাকা উত্তর সিটির বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নতুন অর্থবছরে নাগরিক ও বিনোদনমূলক সুবিধাদি রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের থেকে প্রায় ৬৫৮% বৃদ্ধি পেয়েছে।
সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে গত অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ২৮২.১০ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৭০.৭০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৭৩% বেশি।
মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সিটি করপোরেশন চলতি অর্থবছরে ১২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৬৪% বেশি।
এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে বরাদ্দ বেড়েছে ৩৩০%, পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে ১৪২%, কল্যাণমূলক ব্যয়ে ৫৫%, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ৮% বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে।
ঢাকা উত্তরের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বৃক্ষরোপণ খাতে ২০ কোটি টাকা, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ১০ কোটি টাকা, বর্জ্যের সেকেন্ডারী ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণে ১৩ কোটি টাকা এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বাজেট নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, "পরিবেশবান্ধব, নান্দনিক ও সুন্দর সবুজ নগরী গড়ার প্রত্যয়ে সাজানো হয়েছে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট। প্রতিটি খাতে আধুনিকায়ন ও অনলাইনভিত্তিক সেবা প্রদানে জোর দেওয়া হয়েছে। এই বাজেট সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডিএনসিসির অর্থনীতি আরও শক্তিশালী ও বেগবান হবে। নগরবাসীর জন্য বহুমুখী মানসম্মত সেবা নিশ্চিত হবে।"
তিনি আরও বলেন, "ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আমরা বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়েছি। মশক নিয়ন্ত্রণের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার জন্যও বাজেটে বরাদ্দ আছে। আমরা নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি। তবে জনসচেতনতা খুব জরুরী।"
গত অর্থবছরে ঢাকা উত্তরের ইতিহাসে রাজস্ব আয়ে রেকর্ড
২০২২-২৩ অর্থবছরে উত্তর সিটির রাজস্ব আয় হয়েছে ১১৮০.৯০ কোটি টাকা, যা উত্তর সিটির এক বছরে রাজস্ব আয়ের রেকর্ড। রাজস্ব আয়ে সর্বোচ্চ আয় হয়েছে হোল্ডিং, পরিচ্ছন্নতা ও লাইটিং কর থেকে। এ খাতে আয় হয়েছে ৫৫০ কোটি টাকা।
এছাড়া সম্পত্তি হস্তান্তর কর আদায় হয়েছে ৩০০.৮৯ কোটি টাকা, সড়ক খনন ফি আদায় হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা, মোবাইল টাওয়ার কর ১৮.৫০ কোটি টাকা এবং গরুর হাট থেকে আয় হয়েছে ৩২ কোটি টাকা।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয় ১৮৩০.৮৮ কোটি টাকা ধরা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৬৪৯.৯৮ কোটি টাকা বেশি।
মেয়র আতিক বলেন, "ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি- উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সক্ষমতার প্রমাণ। আমি আশা করছি এ বছরে হোল্ডিং ট্যাক্স, বাজারের সালামি, ট্রেড লাইসেন্স ফি, সম্পত্তি হস্তান্তর ও সড়ক খনন ফি বাবদ আয় বৃদ্ধি পাবে।"
মেয়র আরও বলেন, "অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স ফি সংগ্রহের ফলে ইতিমধ্যে রাজস্ব উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং পাবলিক সার্ভিস নিশ্চিত করতে অনলাইনে সেবার পরিসর বৃদ্ধি করা হচ্ছে। রাজস্ব বাড়াতে আরও কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি। স্মার্ট পার্কিং ও রিকশায় কিউআর কোড সম্বলিত নম্বর প্লেট সরবরাহের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।"
মেয়র বলেন, নতুন ওয়ার্ডগুলোতে হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্ট করা হলে ভবিষ্যতে গৃহকর বাবদ রাজস্ব আয় অনেক বেড়ে যাবে।
ডেঙ্গু মোকাবেলায় ১২১.৮৪ কোটি টাকা ব্যয় করবে উত্তর সিটি
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মশা দমনে ১২১.৮৪ কোটি টাকা ব্যয় করতে চায়, যা সিটি কর্পোরেশনের মোট বাজেটের প্রায় ২.৩২ শতাংশ।
এই টাকার মধ্যে বিভিন্ন খাত যেমন- মশার ঔষধ ক্রয়ে ৪৫ কোটি টাকা, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ৩০ কোটি টাকা এবং মশক নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ব্যয় হবে ৩০ কোটি টাকা।
এছাড়া ডেঙ্গু মোকাবেলা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও প্রচারে সিটি কর্পোরেশন ৭.৩৪ কোটি টাকা ব্যয় করতে চায়।
এছাড়াও মশা দমনের অংশ হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসাসহ প্রাথমিক সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মশা নিধন বিষয়ক এক লাখ সচেতনতামূলক বই বিতরণ করবে উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
রোববার (২৩ জুলাই) 'মশার কামড় ক্ষতিকর' শীর্ষক একটি কার্টুন ছবি সমৃদ্ধ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনের কনফারেন্স কক্ষে এ বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
বইটি যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি ডেড কাউন্টিতে শিশুদের মাঝে বিলি করা একটি বইয়ের বঙ্গানুবাদ।
১২ পৃষ্ঠার এই বইয়ে বিভিন্ন কার্টুনসহ সচেতনামূলক বাক্য দেওয়া হয়েছে।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, "আমরা আমাদের ছোটমনিদের জানাতে চাই যে মশার কামড় ক্ষতিকর। তাদেরকে জানাতে পারলে আমরা মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে পারবো।"
এদিকে মশকবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে গবেষণার জন্য সোমবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঢাকা উত্তর একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
এর আওতায় ডেঙ্গু, মশার ঘনত্ব, মশার প্রজাতিসহ মশকবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কীটনাশকের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হবে।