চলন্ত ট্রাক থামিয়ে আখ চুরি! কেন আখ এতো পছন্দ হাতির!
সৃষ্টিজগতের সবচেয়ে বড় স্থলজ প্রাণী হাতি সবসময়ই তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং আচরণে মানুষকে মুগ্ধ করে এসেছে।
হাতির চমকপ্রদ সব বৈশিষ্ট্যের একটি হলো, মানুষের মতো আখপ্রীতি। পছন্দের খাবার থাকতেই পারে, তাতে আর দোষের কী! কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কখনো কখনো হাতিদের এই পছন্দই আখচাষী সম্প্রদায়ের জন্য সমূহ বিপদ বয়ে আনতে পারে।
কেন আখ পছন্দ হাতিদের?
বলা যায়, মানুষের মতো আসলে হাতিদেরও 'সুইট টুথ' রয়েছে যা তাদের সময়ে সময়ে মেটাতে হয়।
এতে তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, হাতিরা উচ্চ চিনিযুক্ত আখ পছন্দ করে। পাশাপাশি এটি এনার্জিরও ভালো উৎস। সহজপাচ্য আর মিষ্টি স্বাদের জন্যই আসলে হাতিদের কাছে আখ এতো আকর্ষণীয়।
বুনো অঞ্চলে হাতিরা অনেক ধরনের উদ্ভিজ্জ সামগ্রী গ্রহণ করলেও আখের মিষ্টতা এবং পুষ্টিগুণ একে হাতিদের পছন্দের আহারে পরিণত করেছে। এজন্যই হাতিদের আখ ক্ষেতে ঢুঁ মারতে বা মানুষের সামনে পড়ে যেতে দেখা যায়। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের চাচোয়েংসাও প্রদেশের একটি ভিডিওতেও দেখা গেছে, রাস্তায় চলন্ত ট্রাক থামিয়ে কীভাবে সেখান থেকে আখ খুঁজে বেড়াচ্ছে এই বিশাল বপুর প্রাণিটি।
তবে হস্তিবর্গের এই আখপ্রীতি অনেক ক্ষেত্রেই ঝামেলার কারণ; বিশেষ করে, যেসব অঞ্চলে তাদের আবাসস্থলের কাছাকাছি আখ চাষ করা হয়।
আখের সাথে হাতির সখ্যতার সম্ভাব্য বিপদ
আখের প্রতি হাতির বিশেষ সখ্যতা প্রাণিটির আবাসস্থলের পাশে থাকা আখ চাষীদের জন্য বিপদের। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের উত্তরপ্রদেশে পাকা আখের ঘ্রাণে বন থেকে হাতির পাল এসে জড়ো হওয়ায় বন বিভাগকে বিশেষ সতর্কতা জারি করতে হয়েছে।
এটি কেবল ফসল ধ্বংসকারীই নয়, কৃষকদের জীবনের জন্যও হুমকিস্বরূপ।
দুই বছর আগের একটি ঘটনার উল্লেখ করা যায়। ক্ষেতে ফসল পাহারা দেওয়ার সময় এক কৃষক হাতির পায়ের নিচে চাপা পড়ে মারা যায় তখন।
হাতির আক্রমণের ভয়ে কৃষকদের তাই প্রায়ই দলবদ্ধভাবে ক্ষেতে যেতে দেখা যায়। হাতি যেন মানুষের আবাসস্থল এবং আখ ক্ষেতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য ইতিমধ্যে উঁচু বেড়া বা পরিখা খননের সুপারিশ করা হয়েছে।
এই অদ্ভুত সুন্দর প্রাণীটির সাধারণ একটি খাদ্যভ্যাস কীভাবে মানুষ আর বুনোপ্রাণীর সংঘাতে রূপ নিতে পারে!
হাতির আখ হরণ
হাতির বুদ্ধিমত্তার অপূর্ব নিদর্শন মেলে ভিডিওটিতে। যে আত্মবিশ্বাসের সাথে চলন্ত ট্রাক থামিয়ে হাতিকে আখ চুরি করতে দেখা যায়, তাতে স্পষ্ট যে, এটাই তার প্রথম অভিযান নয়!
তবে শুধু এটুকু দেখে হাতির প্রখর স্মৃতিশক্তি, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং সামাজিক বুদ্ধিমত্তা বোঝা যায় না।
ভিডিওর হাতিটি যেভাবে আখ বহকারী ট্রাক চিনতে পারে, তাকে থামায় এবং তাতে থাকা আখ লুফে নেয়, তাতে বোঝা যায় যে, চারপাশের মনুষ্য সমাজ সম্পর্কে সে ভালো জ্ঞান রাখে। প্রাণীরা কীভাবে মানুষের পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়, এমনকি নিজের কাজে ব্যবহার করতে পারে এটি তার এক চমৎকার নিদর্শন।
ট্রাক থেকে আখ চুরি করা হাতিটি চাইলে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারতো, ঘটে যেতে পারতো যেকোনো বড় দুর্ঘটনা। কিন্তু বিশালদেহী চারপেয়ে প্রাণীটি সেসব কিছু করে নি।
হাতিদেরও আছে পছন্দের খাদ্যতালিকা!
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় হাতির খাদ্যাভ্যাস নিয়ে নতুন করে আলোচনা হয়েছে। গবেষণাটি বলছে, মানুষের মতো হাতিদেরও পছন্দ বা অপছন্দের খাবার থাকে।
কেনিয়ার গবেষকরা ডিএনএ মেটাবারকোডিং টেকনিক ব্যবহার করে এই বিষয়ে গবেষণা করেছেন। তাদের ফলাফলে উঠে আসে যে, হাতিদের পছন্দের খাবার প্রাপ্যতা, পছন্দ এবং শারীরবৃত্তীয় চাহিদার উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি গর্ভবতী হাতির কথা যার গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে একেক রকম খাবারের ইচ্ছা (ক্রেভিং) এবং পুষ্টির চাহিদা থাকে।
গবেষণা থেকে আরও জানা যায়, একই পালের সব হাতি খাওয়ার সময় একই গাছ বা উদ্ভিদ খায় না, এতে করে সবার জন্যই পর্যাপ্ত গাছপালা পাওয়া যায়।
হাতির খাদ্যাভ্যাসকে স্পষ্টতই জটিল বলা যায়। এই দিকটি বন্যপ্রাণীর সাংখ্যিক বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসংস্থানের প্রয়োজনীয়তাকেও নির্দেশ করে।
প্রাপ্তবয়স্ক একটি হাতিকে প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণে খাবার খেতে হয়, কখনো কখনো তো দিনের ১৬ ঘণ্টা তার খাবার চষে বেড়ানোতেই অতিবাহিত হয়ে যায়। হাতির শুঁড় অত্যন্ত সংবেদনশীল; শুঁড়ের মাধ্যমেই খাবারের খোঁজ করে সে, আঁকড়ে ধরে।
খাবারের জন্য হাতির দীর্ঘ পথ পরিভ্রমণের ক্ষমতা এবং ব্যাপক অনুসন্ধান গোটা বাস্তুতন্ত্রের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই মানুষের প্রয়োজন ও নিরাপত্তার সাথে হাতির প্রকৃতিগত আচরণের ভারসাম্য বজায় রাখাও জরুরি।