ফ্রি সিমের ফাঁদে ফেলে তথ্য চুরি, নিবন্ধিত সিম যাচ্ছে অপরাধীদের হাতে
বিনামূল্যে মোবাইল ফোনের সিম দেয়ার আশ্বাস দিয়ে সাধারণ মানুষের তথ্য চুরি করছে টেলিটকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। ফাঁদে ফেলে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। পরবর্তীতে এসব তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে টেলিটকের সিম। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রেজিস্ট্রেশন করা এসব সিম তুলে দেয়া হচ্ছে অপরাধীদের হাতে।
২০১৮ সালে বগুড়া সদর থানায় মো. শিপন নামের এক ভুক্তভোগীর দায়ের করা প্রতারণা মামলা তদন্ত নেমে টেলিটকের সিরাজগঞ্জ জেলার প্রমোটরসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র পরিদর্শক মো. শিপাত হোসন দি বিজনেস স্ট্যার্ন্ডাডকে বলেন, এই চক্রের সদস্য আব্দুল ওয়াহেদ বিনামূল্যে সিম দেয়ার কথা বলে এক পরিবারের আট সদস্যের থেকে ১০০ ফিঙ্গার প্রিন্ট ও জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে যায়। কিছুদিন পরে রবির অচল (সক্রিয় নয়) এমন আটটি সিম তাদের দেয়া হয়।
তিনি বলেন, আব্দুল ওয়াহেদ ফ্রি সিম দেয়ার কথা বলে, শিপনের স্ত্রী মোছা. সান্তনা বেগমের কাছ থেকে ১৫ বার , বাবা ইছমাইল হোসেনের ১০ বার, মা মোছা, রাশিদা বেগমের ১৫ বার, ভাই সজলের ৯ বার, আছমাউলের ১২, ভাবি জাহিনুর বেগমরে ১৪ বার, সাজুর স্ত্রীর ১৪ বার ও আছমাউলের স্ত্রীর ১২ বারসহ মোট ১০০ বার ফিঙ্গার নেয়।
পরবর্তীতে তাদের রবির আটটি অচল সিম দেয়া হয়। প্রতারিত হয়েছে বিষয়টি বুঝতে পেরে বাদী হয়ে থানায় মামলা করে শিপন।
সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ থেকে চক্রের সদস্য বেলাল হোসেন বিপ্লবকে গ্রেফতার করে সিআইডি। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। আদালত ও মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, টেলিটকের সিরাজগঞ্জ প্রমোটর আব্দুল বাছেতের নেতৃত্বে একটি চক্র গ্রামে ঘুরে ঘুরে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও জাতীয় পরিচয় পত্রসহ যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে। এসব তথ্য সংগ্রহের পর সিরাজগঞ্জে টেলিটকের ডিস্ট্রিবিউটর অফিসে বসে রেজিস্ট্রেশন করা হতো সিম ।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই প্রতারণার সঙ্গে টেলিটকের উচ্চপর্যায়ের অনেকে জড়িত রয়েছে। তদন্তে সিরাজগঞ্জ জেলার প্রমোটরসহ অনেকের নাম উঠে এসেছে। তাদের বিষয়ে অধিকতর তদন্ত চলছে।
সূত্রটি আরও বলেন, রেজিস্ট্রেশন করা এসব সিম তারা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে অপরাধীদের হাতে তুলে নিচ্ছে।
প্রতিটি সিম তিন’শ থেকে পাঁচ শত টাকায় বিক্রি করে চক্রটি। বেশিরভাগ সিম ব্যবহৃত হয় ভিওআইপি ব্যবসায়। পাশাপাশি এসব সিম ব্যবহার করে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণা, অপহরণ করে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে ।
আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে চক্রের সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, আমি পড়াশুনার পাশাপাশি টেলিটকের ডিস্ট্রিবিউটর অফিসে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতাম। জানুয়ারি মাসে অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আব্দুল বাছেত আমাকে বলে কিছু রিটেইলার (দোকানদার) ছবি, ভোটার আইডি ও পেপারস মিসিং আছে। অফিসের অর্ডার আছে এগুলো আপলোড করতে হবে। তার কথা মতো আমি এগুলো ডি এম এস (ডিস্ট্রিবিউশন ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেমে) আপলোড দেই।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আব্দুল বাছেতের নির্দেশে এই অপরাধ হয়েছে। স্বীকাররোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও তার নাম এসেছে। তথ্য –যাচাই বাছাই করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি চক্রের বাকী সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।