পাবলিক স্পিকিং এর দক্ষতা বাড়াতে পারে যে তিনটি অভ্যাস
পাবলিক স্পিকিং বা সরাসরি দর্শক-শ্রোতাদের সামনে দাঁড়িয়ে চমৎকারভাবে কথা বলতে পারার বিষয়ে বহুদিন ধরে যে মিথ বা জনশ্রুতি চলে আসছে তা হলো, এ ধরনের দক্ষতাসম্পন্ন মানুষদের মধ্যে সহজাতভাবেই এই গুণটি রয়েছে। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। সত্যিটা হচ্ছে, তারা যথেষ্ট পরিশ্রম করে নিজেদেরকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। একটা বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখার পেছনে যেমন শ্রম দিতে হয়, তেমনই পাবলিক স্পিকিংও একটি দক্ষতা যা মানুষকে অর্জন করতে হয়। কিন্তু যেকোনো সঙ্গীতশিল্পী বা পারফর্মার আপনাকে বলবে যে, এ বিষয়ে উন্নতি করতে চাইলে নিয়মনিষ্ঠভাবে চর্চা ও অনুশীলন করে যেতে হবে এবং সফলতা অর্জনের মতো মনমানসিকতা থাকতে হবে।
বিশ্বের খ্যাতনামা সব পাবলিক স্পিকাররা ভিন্ন ভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছেন, কিন্তু তবুও তাদের সবার মধ্যে একটি ক্রিটিক্যাল অভ্যাস রয়েছে, তা হলো: তারা উন্নতির করার মতো মনমানসিকতা তৈরি করেছেন।
'আমাকে ভালো করতেই হবে'- এ ধরনের দৃঢ়তা ও মনের জোর আনার মাধ্যমে পাবলিক স্পিকিংয়ে ভালো করা সম্ভব। পাবলিক স্পিকিংয়ে ভালো করার জন্য নিচের ৩টি মানসিক অভ্যাস আয়ত্তে আনতে পারেন:
১. উন্নতি করার মত মনমানসিকতা এবং বদ্ধ মনমানসিকতার মধ্যে পার্থক্য বোঝা
স্ট্যানফোর্ডের মনস্তত্ত্ববিদ ক্যারল ডুয়েক 'গ্রোথ মাইন্ডসেট' ধারণা বিকাশের জন্য সুপরিচিত। একজন ব্যক্তির মধ্যে যদি এই মনমানসিকতা থাকে যে, চর্চা ও অনুশীলন এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের দক্ষতা বাড়ানো যাবে, তাহলে ওই ব্যক্তির সফলতা অর্জনের পথ সহজ হয়ে যায়। কিন্তু বদ্ধ মনমানসিকতার মানুষ ভাবে যে তাদের মধ্যে যতটুকু দক্ষতা আছে তা পরিবর্তনযোগ্য নয়, তারা সবসময় এমনই থাকবে। উন্নতির আকাঙ্ক্ষা ও বিশ্বাস যাদের মধ্যে আছে তারা কাজের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হয় এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে নতুন নতুন বিষয় শিখতেই থাকে।
তাই এরপর যখন আপনি নিজেকে বলতে যাবেন- 'আমি লোকজনের সামনে কথা বলতে গেলে নার্ভাস হয়ে যাই' কিংবা 'আমি ভালো বক্তা নই'; তখন বুঝতে হবে যে আপনি একটা বদ্ধ মনমানসিকতা আঁকড়ে ধরছেন। এর বদলে নিজের চিন্তাগুলো পরিশীলিত করুন, পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করুন। ডুয়েক পরামর্শ দেন, নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলতে গেলে 'তবে' শব্দটি যোগ করতে।
যেমন: "আমার উদ্বিগ্নতা এখনো কাটেনি পুরোপুরি, তবে আমি জানি সময়ের সাথেসাথে এবং অনুশীলন করলে আমি এটা কাটিয়ে উঠতে পারবো।" অথবা,
"আমি আমার পাবলিক স্পিকিং পারফরম্যান্স নিয়ে খুশি নই, তবে আমি দিন দিন চর্চার মাধ্যমে আরও ভালো করছি।"
এই 'তবে' শব্দটি উন্নতির জন্য অনুপ্রাণিত করে। এটা সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়।
২. ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া
মানুষের উন্নতির পথে অন্যতম প্রধান একটি বিষয় হলো, ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া। যারা ভাবে তারা সবকিছু জানে, তারা সাধারণত গড়পরতা বা দুর্বল উপস্থাপক এবং পাবলিক স্পিকার হয়।, কারণ তখন তাদের উন্নতির পথ বন্ধ হয়ে যায়।
তবে হার্ভার্ড ইনস্ট্রাক্টর ও লেখক কারমাইন গ্যালো বলেন, "এতে আমি অবাক হই না, কারণ বিখ্যাত টেড বক্তাদের সঙ্গে দেখা করে আমি মুগ্ধ হয়েছি যে তারা আমাকে প্রশ্ন করেছে বা বলেছেন যে আমার বই পড়েছেন। এরা ক্রমউন্নতির পেছেন ছোটেন, তা থেকেই বোঝা যায় যে কেন তারা পাবলিক স্পিকিংয়ে সেরা।
যদি আপনার মধ্যে উন্নতির চিন্তা থাকে, তাহলে ব্যর্থতা কোনো অযোগ্যতার লক্ষণ নয়- এটা বরং কিছু শেখার সুযোগ। মূল ব্যাপারটা হচ্ছে, ঘটনাটাকে নিজের উন্নতির পথেই একটা পদক্ষেপ হিসেবে দেখা।
৩. ফিডব্যাক নেওয়া
আপনি হয়তো এমন প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন যা আশানুরূপ ফলাফল বয়ে আনতে পারেনি, কিন্তু যাদের 'গ্রোথ মাইন্ডসেট' থাকে, তারা নজর দেয় যে কোন পয়েন্টগুলো তার বলা ভালো হয়েছিল- আর কোথায় কোথায় আরও ভাল করার সুযোগ রয়েছে।
আপনি পাবলিক স্পিকিংয়ে যা পারফর্ম করেছেন তার ফিডব্যাক বা দর্শকদের কেমন লেগেছে তা জানতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, যারা আপনার অনুষ্ঠান দেখেছে সেসব বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করতে পারেন পারফরম্যান্স কেমন লেগেছে, তাদের পরামর্শও নিতে পারেন।
যারা যেকোনো খাতে দক্ষতার প্রমাণ দেয় তারা বিষয়টাকে সহজভাবেই ফুটিয়ে তোলে, সেটা পিয়ানো বাজানো হোক, গলফ খেলা হোক বা পাবলিক স্পিকিং হোক। এর প্রধান কারণই হচ্ছে, তারা চর্চা করে এসেছে, তারা ভুল করেছে এবং ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে, ফিডব্যাক জেনেছে এবং পুনরায় চেষ্টা করেছে।
পুরো বিষয়টাই নির্ভর করে আপনার মনমানসিকতার যে, আপনি কি নিজেকে একই অবস্থানে সীমাবদ্ধ করে রাখবেন নাকি এগিয়ে যেতে নিজেই নিজেকে সাহস যোগাবেন এবং চেষ্টা করে যাবেন উন্নতির জন্য।