শ্রীলঙ্কায় ভোক্তা মূল্যস্ফীতি নেমেছে ৪.৬ শতাংশে, কমছে খাদ্যের দাম
চলতি বছরের জুলাই মাসে শ্রীলঙ্কার ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ৪.৬ শতাংশে নেমেছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। মূলত খাদ্যপণ্যের দাম কমে আসায় ভোক্তা মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে। সোমবার (২১ আগস্ট) দেশটির পরিসংখ্যান বিভাগ এই তথ্য জানায়।
ন্যাশনাল কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্সে খুচরো মূল্যস্ফীতি হিসেব করা হয় এবং প্রতি ২১ দিনের ব্যবধানে তা প্রকাশ করে। জুন মাসেও দেশটির ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ছিল ১০.৮ শতাংশ।
আদমশুমারি ও পরিসংখ্যান বিভাগ এক বিবৃতিতে জানায়, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় খাদ্যের দাম কমেছে ২.৫ শতাংশ। তবে জুনে খাদ্যের দাম ২.৫ শতাংশ বেশি ছিল।
খাদ্যদ্রব্য ছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম জুলাই মাসে ১০.৯ শতাংশ বেড়েছে। এক বছর আগের তুলনায় জুনে বৃদ্ধি পেয়েছিল ১৮.৩ শতাংশ।
গত জুন থেকে শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আসছে। পরিসংখ্যানগত 'বেস ইফেক্ট' বা ভিত্তিবছর পরিবর্তনের প্রভাবেও মূল্যস্ফীতি আংশিকভাবে কম দেখাচ্ছে। তবে রুপির শক্তিশালী অবস্থান মূল্যস্ফীতি কমায় অবদান রেখেছে। কারণ জ্বালানি ও খাদ্যদ্রব্য আমদানিতে এখন ব্যয় কমেছে।
বেস ইফেক্ট একটি উদাহরণের মাধ্যমে বুঝে নেওয়া যায়। যেমন, মনে করুন ২০২০ সালে পেয়াজের দাম ১০০ টাকা, ২০২১ সালে হলো ১১০ টাকা আর ২০২২ সালে ১২০ টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতি বছর ১০ শতাংশ দাম বাড়লেও ২০২১ সালের মূল্যস্ফীতি দেখাবে ১০ শতাংশ। আর ২০২২ সালে ৯.০৯ শতাংশ।
গত মার্চে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বেলআউট প্যাকেজ প্রাপ্তীর মাধ্যমে বৈদেশিক রিজার্ভ সংকট কাটিয়েছে শ্রীলঙ্কা। রিজার্ভ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসায় সাত দশকে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে দেশটি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৭৩.৭ শতাংশ রেকর্ড করা হয়।
আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকায় জ্বালানি সংকট দেখা দেয়। এসময় লাগামহীন লোডশেডিং দেখেছে শ্রীলঙ্কা। গাড়িতে জ্বালানি নিতে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। বাড়িতে ছিল গ্যাস সংকট। পরিবহন খাত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় স্কুলও বন্ধ রাখা হয়। কাগজ না থাকায় পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়। দেশটির প্রেসিডেন্টকে তখন উৎখাত করা হয়।
বর্তমানে শ্রীলঙ্কা কিছুটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। পর্যটক বাড়তে থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।
ইক্যুইটি রিসার্চ ফার্ম সিএএল-এর চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট উদীশান জোনাস বলেছেন, 'মূলত উচ্চ বেস ইফেক্টের কারণে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের নিচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। চাহিদা বৃদ্ধির মতো কারণে আগামী কয়েক মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার মতো কোনো চাপ আমরা দেখতে পাচ্ছি না।'
তবে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির জন্য বড় সুখবর নেই। ২০২২ সালে দেশটির অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছিল ৭.৮ শতাংশ। আর এ বছরও ২ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।