একমাসে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশেরও বেশি
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, গত একমাসে দেশে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৫০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে কেজিতে ৬০-৭৫ টাকা হয়েছে।
এক মাস আগে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও গেল ১৯ আগস্ট ভারত তার অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ বাড়াতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজের উপর ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করে, এরপর থেকেই বাড়তে শুরু করেছে এই নিত্যপণ্যের দাম।
এদিকে, আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে দেশি জাতের পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। টিসিবি জানায়, একমাসে দেশি পেঁয়াজের দাম ৩২ শতাংশ বেড়ে কেজিপ্রতি ৬০-৬৫ টাকা থেকে ৮০-৮৫ টাকা হয়েছে। এক বছর আগেও প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ থেকে ৫৫ টাকা।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আবদুল মাজেদ শুক্রবার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, "মানভেদে আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকায় এবং আমদানি করা চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ থেকে ২১০ টাকা কেজিতে।"
এদিন কারওয়ান বাজার, মগবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা কেজিতে। তবে মগবাজার এলাকার গলির কোনো কোনো দোকানে ১০০ টাকা কেজিতেও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ৬৫-৭০ টাকা।
এদিকে লাগামহীন দাম নিয়ন্ত্রণে চীন, মিশর, পাকিস্তান, কাতার, তুরস্ক, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
টিসিবি তথ্য অনুযায়ী, রসুনের দামও এক মাসের ব্যবধানে সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এক বছরের হিসাবে অনেক বেশি বেড়েছে।
একমাসে আমদানিকৃত রসুনের দাম ৯.৫২ শতাংশ বেড়ে বর্তমানে প্রতিকেজি ২২০-২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একমাস আগে দাম ছিল ২০০-২২০ টাকা। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৪০ টাকা কেজি। এর বিপরীতে এক বছর আগে আমদানি করা রসুনের দাম ছিল প্রতিকেজি ১১০-১৩০ টাকা এবং স্থানীয় রসুনের দাম ছিল ৬০-৮০ টাকা।
ডলার সংকট এবং নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কের কারণে আমদানিতে ব্যাঘাত ঘটায় সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে দেশের মসলার বাজারে। আর এতে গত এক বছরে অনেকটাই বেড়েছে মসলার দাম।
গত এক বছরে বেশিরভাগ মসলা পণ্যের দাম ৫০ থেকে ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ১৪০ শতাংশ দাম বেড়ে জিরার কেজি এখন ১,১০০-১,১৮০ টাকা। এক বছর আগে আমাদানি করা আদার দাম ছিল ৮০-১২০ টাকা, এখন তা ১২৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২০০-২৫০ টাকা।
এছাড়া, বৃষ্টির কারণে ঢাকার বাজারগুলোতে পণ্য সরবরাহ কিছুটা কম থাকায় সবজি দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় এবং ধুন্দলের কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আলুর দাম এক বছরের ব্যবধানে ৯০ শতাংশ বেড়েছে বলে টিসিবি'র তথ্যে উঠে এসেছে। এক বছর আগে প্রতিকেজি আলুর দাম ছিল ২৪-৩০ টাকা, এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ৩৬-৪২ টাকা কেজি।
মগবাজার থেকে বজার করেছিলেন মো. রাহাত। তিনি বলেন, "প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো পণ্যর দাম বাড়ছে। গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ কিনেছি ৮০ টাকা কেজি, আজকে সেটা কিনতে হলো ৯০ টাকা কেজি।"
"ব্রয়লার মুরগি কিনতে ইচ্ছে করেছিল, কিন্তু কেজি ১৭০ টাকা। দাম বেশি হওয়ায় কিনি নি। পাঙ্গাস মাছ কিনেছি এক কেজি ১৬০ টাকা দিয়ে। ৪টা ডিমের দাম ৫৫ টাকা, তাই ডিমও কিনলাম না। আগে সপ্তাহে ৪টা করে ডিম কিনতাম। ৩ সদস্যের পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। তেল, চাল, আলু, ডাল প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারের এখন রেশন পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন।"