থাকসিনের সাজার মেয়াদ কমিয়ে ১ বছর করলেন থাই রাজা
থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার সাজার মেয়াদ আট বছর থেকে কমিয়ে এক বছর করা হয়েছে। থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন থাকসিনের সাজা কমিয়েছেন। খবর বিবিসির।
১৫ বছর স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকার পর গত মাসে দেশে ফিরে আসেন থাকসিন সিনাওয়াত্রা। থাইল্যান্ডে ফেরার পর বিমানবন্দরেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, তারপর হৃদযন্ত্রের অসুখের কথা জানানোয় তাকে রাষ্ট্রীয় হাসপাতালের বিলাসবহুল একটি শাখায় স্থানান্তর করা হয়।
থাকসিন এর আগে দাবি করেছিলেন, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে তাকে যে সাজা দেওয়া হয়েছিল তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
২০০৬ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে থাইল্যান্ডের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং কারাগারে যাওয়া এড়াতে এর দুই বছর পরে তিনি দেশত্যাগ করেন।
গত ২২ আগস্ট থাকসিনের প্রত্যাবর্তনকে একটি বড় রাজনৈতিক চুক্তির অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। থাকসিনের দল ফেউ থাই পার্টির থাইল্যান্ডে বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। দলটিকে এক করার উদ্দেশ্যে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করার অভিপ্রায়ে তিনি দেশে ফিরে এসেছিলেন।
আর হয়েছেও তাই। থাকসিন দেশে ফেরার কয়েক ঘণ্টা পরেই ফেউ থাইয়ের নেতৃত্বে একটি নতুন জোট সরকার তাদের প্রার্থী স্রেথা থাভিসিনকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভোট দেয়। এই জোটে থাকসিনের সাবেক সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বীরাও রয়েছেন, যারা কিনা ২০১৪ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানে তার দলকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল।
থাকসিন স্পষ্টতই সেই চুক্তির একটি অংশ হিসেবে ক্ষমার আশা করেছিলেন। আর রাজা ভাজিরালংকর্নও তার আবেদনে দ্রুত সাড়া দিয়েছেন এবং তার আট বছরের সাজা কমিয়ে মাত্র এক বছর করেছেন। এই মুহুর্তে থাকসিনের হাসপাতালেই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজকীয় ক্ষমার অনুরোধের জবাবে শুক্রবার রাজকীয় গ্যাজেটে বলা হয়েছে, সাজার মেয়াদ কমানোর ক্ষেত্রে তার বয়স ও 'অসুস্থতার' কথা বিবেচনা করা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়, থাকসিন দেশ ও জনগণের কল্যাণ করেছেন এবং রাজতন্ত্রের প্রতি তিনি অনুগত।
তবে থাকসিন হয়তো আশা করেছিলেন তার সাজা পুরোপুরি বাতিল করা হবে, শুধু সাজা কমানো নয়।
থাকসিন এই সাজাভোগ করলে তা তার নিজের দলকে প্রভাবিত করার ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে দিবে। কেননা তার দল এখন জোট পরিচালনার চেষ্টা করছে এবং সংসদীয় আসনে প্রায় অর্ধেক তাদের দখলে।
এছাড়াও, বর্তমানে ফেউ থাই পার্টির শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছে থাইল্যান্ডের মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি, যারা সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনে ফেউ থাইকে হারিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ফেউ থাইয়ের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার পরেও মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি সরকার গঠন করতে পারেনি।
তবে দেশে ফিরে সাজা মেনে নেওয়ার মাধ্যমে রক্ষণশীল রয়্যালিস্টদের সঙ্গে ২০ বছরের তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতা মিটিয়েছেন থাকসিন। কিন্তু বিনিময়ে, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার মর্যাদা অনেকটা খর্ব হয়েছে।