সরকার বাসের ভাড়া নির্ধারণ করেন মালিকদের ‘প্রেসক্রিপশন’ অনুযায়ী: যাত্রী কল্যাণ সমিতি
সরকার পরিবহন মালিকদের 'প্রেসক্রিপশন' অনুযায়ী বাস ও গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ করেন বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, আন্তর্জাতিক ক্রেতা ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী বাস ভাড়া নির্ধারণ কমিটিতে বাস মালিকদের সংখ্যা অনুপাতে যাত্রী বা ভোক্তা প্রতিনিধি রাখার বিধান আছে। কিন্তু নতুন সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী, বাস ভাড়া নির্ধারণ কমিটিতে মালিক-শ্রমিক-সরকার মিলেই ভাড়া নির্ধারণ করছে। এতে যাত্রী ও ভোক্তাদের কোন অংশগ্রহণ থাকে না। যাত্রীদের কল্যাণের কথা বিবেচনা করা হয় না।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে যাত্রী অধিকার দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত 'সড়ক পরিবহন আইনে যাত্রীদের অধিকার চাই' শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় যাত্রী কল্যাণ সমিতি এ অভিযোগ করে।
যাত্রী তথা জনস্বার্থে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ সংশোধনপূর্বক বাস ও গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ কমিটিতে বাস মালিকদের সংখ্যানুপাতে যাত্রী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার বিধান সংযুক্ত করার দাবি জানান যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
তিনি আরও বলেন, "যাত্রী সাধারণ অসহায় হয়ে পড়েছে। সরকারী শক্তিতে বলিয়ান হয়ে পরিবহন মালিকেরা ইচ্ছেমত পরিবহন চালাতে গিয়ে এ সেক্টরে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা ব্যাপক হারে বাড়ছে। সরকার চেষ্টা করেও এই সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছে।"
তার অভিযোগ, নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবি ওঠে। কিন্তু সংশোধনীতে যাত্রী বা ভোক্তার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়নি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংগঠনটির উপদেষ্টা সংসদ সদস্য লুৎফুন্নেসা খান বলেন, "এ বাস মালিক কারা আমরা সবাই জানি। রাজনীতিবিদরাই বাসের মালিক। তারা যাত্রীদের দুংখ কষ্ট নিয়ে মাথা ঘামাতে চান বলে মনে হয় না।"
তিনি বলেন, "রাজধানীতে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে লক্কড়-ঝক্কড় বাসে অস্বাভাবিক ভোগান্তি পোহাচ্ছে নগরবাসী। চলছে ভাড়া নৈরাজ্য আর ড্রাইভারদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দুই নম্বর। তারা কিভাবে পায়? এখানে দুর্নীতি আছে। এখানে মালিকপক্ষ দায়ী। যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে আইনি সুরক্ষা প্রয়োজন অথচ সড়ক পরিবহন আইনে যাত্রীস্বার্থ চরমভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে।"
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, "আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ যাত্রী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বারবার দাবি তুলছি। ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করছি। অথচ সরকার সড়ক পরিবহন আইনে যাত্রী সাধারণের মতামত ও অংশগ্রহণের সুযোগ রাখেনি।"
যাত্রী কল্যাণ সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান তাওহিদুল হক লিটনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. মহসিন, মনজুর হোসেন ইসা, সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্না প্রমুখ।