টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেবেন না: কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ
নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
অর্থনৈতিক ভারসাম্য আনতে যে পলিসি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়েছে, তার যথার্থ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং জোরদারের পরামর্শ দেন তিনি।
দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও সাংবাদিকদের সঙ্গে বসে পরামর্শ নেওয়ার।
তারই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার একটি বৈঠক করেছেন। বৈঠকের কথোপকথনের বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাহুল হক।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখপাত্র বলেন, 'আমরা অর্থনীতিবিদকে বলেছি সরকারকে ডিভলভিং এর মাধ্যমে ঋণ দেওয়া থেকে আপাতত বিরত থাকবে। আমরা গত বেশ কিছু অকশনে ডিভলভিং করিনি। সরকারকে বলা হয়েছে ব্যাংকগুলো থেকে যে পরিমাণ ঋণ পাওয়া যায় তা নেওয়ার জন্য।'
মুখপাত্র বলেন, 'দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। তাই আমরা অর্থনীতির বিভিন্ন সেক্টরের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেসব পরামর্শ আসবে সে অনুযায়ী আগামী মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হবে।'
'বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা ভালভাবে চলছি। আমরা যে এখনও সংকটের মধ্যে আছি তা সত্য। তবে সেই সংকট নিরসনে চেষ্টা করে যাচ্ছি,' বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, 'অর্থনীতিবিদদের পরামর্শগুলো আমরা সামনের মুদ্রানীতিতে অন্তর্ভুক্ত করবো। আমাদের অর্থনৈতিক সংকট অনেকটা কেটে যাচ্ছে। রিয়েল ইকোনোমির সমস্যাগুলো এখন অনেকটা উত্তরণের পথে।'
মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এরমধ্যে অন্যতম হলো এক্সচেঞ্জ রেট ব্যাপক পরিমাণে ডিভলিউশন হয়েছে যা প্রাইস লেভেলে প্রভাব পড়েছে। এছাড়া সরকারকে ভর্তুকি বাবদ ব্যাপক ঋণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দিতে হয়েছে। অন্যদিকে বিদেশি ফরেইন কারেন্সির সোর্সগুলোর ইন্টারেস্ট রেট অনেক বেড়ে গেছে।'
গত জুন ও জুলাই মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমার পর আগস্ট মাসে তা আবার বেড়েছে। গত মাসে (আগস্ট) মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। এই সময় দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হঠাৎ অনেকটা বেড়ে গেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার উঠেছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে।
সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি ছিল, এ ঋণ বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। রাজস্ব ঘাটতি এবং বিদেশি তহবিল প্রবাহ যথাযথ না থাকায় সরকারকে ব্যাংকিং খাতের উপর নির্ভর করতে হয়।
২০২৩ সালের জুনের শেষে ব্যাংক খাত থেকে মোট ১.২৪ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে উল্লেখিত ১.১৫ লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশি। এই ঋণের ৮০% বা প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশিরভাগ ঋণ দিয়েছে নতুন টাকা ছাপিয়ে।
ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, 'আমাদের ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট নেগেটিভ। যার অন্যতম কারণ হলো উন্নত দেশগুলোতে হাই ইন্টারেস্ট রেট। যার কারণে ইন্টারন্যাশনাল মানি মার্কেট থেকে আমাদের ফরেইন কারেন্সির সাপোর্ট অনেকটা কমে গেছে।'
'ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ওভারনাইট অ্যাডজাস্ট করা সম্ভব নয়। আমরা ট্রেড ব্যালেন্স অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এনেছি আমদানি নিয়ন্ত্রণ, রপ্তানি বৃদ্ধি ও রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে,' বলেন তিনি।