কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রতিবাদে হোয়াইট হাউসের সামনেও বিক্ষোভ
যুক্তরাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কৃষ্ণাঙ্গদের নিগ্রহ-নির্যাতন নতুন কোনো বিষয় নয়। দেশটির এই বর্ণ বিভেদ দীর্ঘদিন ধরেই এক বড় সামাজিক সমস্যা। এই সমস্যাকে কেন্দ্র করে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়েছে সম্প্রতি মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে জর্জ ফ্লয়েড নামক এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে পুলিশি নির্যাতনে হত্যার ঘটনায়।
এরপর থেকেই গোটা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে পুলিশি সহিংসতার বিরুদ্ধে তুমুল বিক্ষোভ চলছে। অগ্নিকাণ্ড এবং লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে এসব কিছু কেন্দ্র করে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশি অ্যাকশনের প্রেক্ষিতে এই ধরনের ঘটনা ঘটে।
'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার'সহ যুক্তরাষ্ট্রের নানা মানবাধিকার গোষ্ঠী এই আন্দোলনের সমর্থনে রাজপথে নেমেছে। রোববার হোয়াইট হাউজের নিকটবর্তী একটি উদ্যানেও অনুষ্ঠিত হয়েছে বিক্ষোভ।
এদিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি প্রধান শহরে দাঙ্গা ও সহিংসতা বন্ধে কারফিউ জারি করা হয়। এর মাঝেই বিক্ষোভকারীদের 'দেশি সন্ত্রাসী' বলে উল্লেখ করে ট্রাম্প প্রশাসন। এরপরে রোববার রাতে হোয়াইট হাউসের পার্শ্ববর্তী ওই পার্কে বিক্ষোভকারীরা সমবেত হয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের বর্ণবাদী বিশেষণে ক্ষুদ্ধ বিক্ষোভকারীরা এদিন পুলিশের সঙ্গে আরও বেশি মুখোমুখি সংঘর্ষেও লিপ্ত হয়। এসময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাসের শেল, মরিচের গুড়োর স্প্রে এবং শব্দ ও আলোর বিস্ফোরণে চোখ ও কানে তালা লাগিয়ে দিতে সক্ষম 'ফ্ল্যাশ ব্যাং' গ্রেনেড ব্যবহার করে। পুলিশি বাঁধার মুখে বিক্ষুদ্ধ জনতা এসময় বেশকিছু স্থানীয় সম্পত্তিতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
চলমান বিক্ষোভের মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের নানা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর এবং রাজনৈতিক নেতারা বিক্ষোভকারীদের রাজপথের সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে, গঠনমূলক লিফলেট বিলির মাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভের দিকটি তুলে ধরার পরামর্শ দেন তারা। পরিস্থিতি শান্ত হতেই পারত, কিন্তু এর মাঝেই আন্দোলনকারীদের 'সন্ত্রাসী' আখ্যা দিয়ে ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
এর আগে প্রশাসনকে দিয়ে সব 'ঠান্ডা' করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। টুইট করে হিংস্র কুকুর লেলিয়ে দেওয়ার কথাও বলেছেন। শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ খুনের ঘটনায় দেশজুড়ে বিক্ষোভের আগুন তবু জ্বলছে। করোনা-ত্রাসের আবহেও শিকেয় উঠেছে লকডাউন। নির্বিচার হত্যার বিচারের দাবিতে উত্তাল জনপথ।
পরিস্থিতি সামলাতে অন্তত আটটি প্রদেশে নেমেছে 'ন্যাশনাল গার্ড'। রোববার সন্ধ্যার পর থেকে ঘটনাস্থল মিনিয়াপোলিসের প্রায় সব রাস্তা বন্ধ করে আকাশে চক্কর কাটে একাধিক সেনা-কপ্টার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এই প্রথমবার মিনেসোটা প্রদেশে ন্যাশনাল গার্ডের পুরো বাহিনীই এখন রাস্তায়।