ভুবন শীল: গুলি, মৃত্যু, একটি পরিবারের স্বপ্নভঙ্গ
পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সপ্তম তলায় সিঁড়িতে বসে গত সাতদিনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন রত্না রানী শীল ও তার মেয়ে ভূমিকা চন্দ্র শীল।
সিঁড়ির পাশেই আইসিইউ — সেখানে রত্নার স্বামী তার মাথায় একটি বুলেট নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে রত্নার অপেক্ষার পালা সাঙ্গ হয়।
তার স্বামী ভুবন চন্দ্র শীলকে (৫৫) মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎকেরা।
'তাকে জনসমক্ষে গুলি করা হয়েছে,' রত্না বলেন।
'তাকে বাঁচাতে যতটা পারি চেষ্টা করেছি। শনিবার অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। কিন্তু এখন আমাদের চিরতরে ছেড়ে চলে গেলেন,' দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন তিনি।
পেশায় একজন আইনি পরামর্শক ভুবন ছিলেন তার পরিবারের প্রাথমিক উপার্জনকারী।
তার স্ত্রী রত্না রানী নোয়াখালীর মাইজদীর একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। মেয়ে ভূমিকা সদ্য এসএসসি পাশ করেছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইদ মামুনকে লক্ষ্য করে আরেকদল সন্ত্রাসী গুলি চালালে মোটরসাইকেল আরোহী ভুবনের মাথায় গুলি লাগে।
কথা রাখা হলো না
ভুবন চলে যাওয়ায় রত্না এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। সমস্ত দায়িত্ব এখন তার কাঁধে।
'সামনে দিনগুলো ভীষণ অনিশ্চিত,' রত্না বলেন।
রত্না জানান, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। তার চিকিৎসার জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর ভারতের চেন্নাইয়ে যাওয়ার কথা ছিল তাদের সবাই মিলে।
ভুবন তাকে কথা দিয়েছিলেন, চিকিৎসাশেষে এক সপ্তাহের জন্য তারা ভারতের কয়েকটি তীর্থস্থানে যাবেন।
তারা প্রায় প্রতিদিনই ফোনে এ নিয়ে কথা বলতেন।
ভুবনের মৃত্যুতে রত্নার স্বপ্ন অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে।
'ভুবনের অসুস্থ মা এখনও ছেলের মৃত্যুর খবর জানেন না। তার প্রতি মাসে প্রায় ১০ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। সংসার চালাব কীভাবে?' বলেন রত্না।
তবে আপাতত তার প্রাথমিক চিন্তা তার মেয়ে।
রত্না বলেন, 'মেয়েটা আর তার বাবার হাত ধরে হাঁটতে পারবে না। এ অনুভূতি আমি বোঝাতে পারব না। আর কোনো বাবা যেন সন্তানকে ছেড়ে এত তাড়াতাড়ি চলে না যান।'
স্বামীর হত্যার বিচার দাবি করে তিনি বলেন, 'আমার স্বামীকে কে গুলি করেছে তা আমরা জানি না। আমরা কেবল জানি আমার স্বামী আর নেই। আমি রাষ্ট্রের কাছে খুনিদের ফাঁসি চাই।'
একজন গ্রেপ্তার
মামুনকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালানোর ঘটনায় সোমবার পুরান ঢাকা থেকে মারুফ বিল্লাহ ওরফে হিমেল (৩৮) নামক এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) এসএম আরিফ রায়ান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তদন্তসূত্রে জানা গেছে, মারুফ বিল্লাহ আর মামুন একে অপরের পরিচিত।
তারা একে অপরকে প্রায় ১০–১৫ বছর ধরে চিনতেন। ঘটনার দিন অবস্থান জানতে মামুনকে একাধিকবার ফোন করেন মারুফ। তিনিও হামলার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।