নিরাপদ ডিজিটাল পেমেন্ট সুবিধা দিতে রিফান্ড ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রেখে নীতিমালা
অনলাইনে পণ্য ও সেবা বিক্রির ডিজিটাল পেমেন্টে গ্রাহক ও প্রতিষ্ঠানের অর্থের নিরাপত্তায় রিফান্ড প্রক্রিয়া ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রেখে নীতিমালা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গ্রাহক ডিজিটাল পেমেন্টে অর্থ পরিশোধের পর অর্ডার বাতিল করলে সর্বোচ্চ তিন দিনের মধ্যে গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে হবে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোন পেমেন্ট সার্ভিস অপারেটর (পিএসও), পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) অথবা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সেবা প্রধানকালে নীতিমালা যথার্থ প্রতিপালন না হলে বাংলাদেশ ব্যাংক লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিলও করতে পারে।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত একাটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়, ডিজিটাল পরিশোধ ব্যবস্থা দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ধরনের কেনাকাটার মূল্য পরিশোধে ব্যবহৃত হচ্ছে ডিজিটাল পেমেন্ট। তাই ডিজিটাল পরিশোধ ব্যবস্থাকে নিরাপদ, কার্যকর, সহজলভ্য করা সহ গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় 'মার্চেন্ট এ্যাকোয়ারিং ও এসক্রো সেবা নীতিমালা, ২০২৩' জারি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মুতাসিম বিল্লাহ সাক্ষরিত ওই সার্কুলার বলা হয়, নীতিমালা অনুযায়ী মার্চেন্ট হবে তিন ধরনের। প্রথমটি ফিজিক্যাল স্টোর ভিত্তিক মার্চেন্ট, দ্বিতীয়টি অনলাইন ভিত্তিক মার্চেন্ট এবং তৃতীয়টি ফিজিক্যাল স্টোর ও অনলাইন উভয়ভিত্তিক মার্চেন্ট।
এসব প্রতিষ্ঠান শ্রেণিভেদে মাসিক ১০ লাখ টাকার কম অথবা বেশি নিজস্ব ওয়েবসাইট, এ্যাপ বা প্লাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করবে।
সার্কুলারে বলা হয়, এ ধরনের ডিজিটাল পেমেন্টের ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষণে পণ্য বিক্রেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নানা ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় পণ্যের মূল্য পরিশোধের পর মার্চেন্ট কর্তৃক গ্রাহককে পণ্য যথাসময়ে সরবরাহ করার জন্য দায়বদ্ধ থাকেন।
অপরদিকে পণ্য প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বা মার্চেন্ট এর পাওনা এসক্রো অর্থাৎ থার্ড পার্টি পেমেন্ট গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট মার্চেন্টের অনুকূলে নিষ্পত্তির জন্য দায়বদ্ধ থাকেন।
এতে আরও বলা হয়, পণ্য ও সেবার মূল্য পরিশোধের পর বিক্রেতা-মার্চেন্ট সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে যথাসময়ে প্রতিশ্রুত পণ্য সরবরাহ করলে ডিজিটাল কমার্স সেবার জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে; যা ডিজিটাল পরিশোধ ব্যবস্থার প্রসারেও ভূমিকা রাখবে।
তবে নীতিমালায় বলা হয়, অনেকেই ডিজিটাল প্লাটফর্মের বৈধ প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করে অবৈধ পণ্য বা সেবা বিক্রি করে প্রতারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। এমন কার্যক্রম রোধে প্রয়োজনীয় নীতি কাঠামো অনুসরণ করা আবশ্যক।
মার্চেন্ট ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও লেনদেনে গ্রাহকের স্বার্থহানিসহ মানি লন্ডারিং ও জালিয়াতির ঝুঁকি থাকে। ফলে, পরিশোধ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (বিকাশ, নগদ, রকেট, ব্যাংক ইত্যাদি) বা মার্চেন্ট এ্যাকোয়ারারকে বেশকিছু তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে।
সেগুলো হলো- মার্চেন্টের নাম, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র, কেওয়াইসি, পারসোনাল রিটেইল অ্যাকাউন্ট, ডিজিটাল বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার, হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন, বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (বিআইএন) (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) সহ বেশকিছু তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
এ্যাকোয়ারার প্রতিষ্ঠান প্রতি অর্থবছর শেষে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সব মার্চেন্টদের ঝুঁকিসমূহ মূল্যায়ন করে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে এবং প্রয়োজনে পরিচালনা পর্ষদ বরাবর উপস্থাপন করবে। ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী মার্চেন্টসমূহকে ৩টি শ্রেণিতে ভাগ করতে হবে। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ মার্চেন্ট, মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ মার্চেন্ট এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ মার্চেন্ট।
এ্যাকোয়ারার প্রতিষ্ঠানগুলো মার্চেন্টের ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়মিত তদারকির মধ্যে রাখবে। যদি কোনো ফিজিক্যাল রেগুলার মার্চেন্টের (যাদের মাসিক লেনদেন ১০ লাখ টাকার বেশি) মাসিক লেনদেন প্রবৃদ্ধি ৪০ শতাংশের বেশি হয় তাহলে তাকে ব্যাখ্যা তলব করতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শন করে উত্তর সন্তোষজনক না হলে তার লেনদেন স্থগিত করতে হবে।
এছাড়াও অনলাইন রেগুলার মার্চেন্ট (যাদের মাসিক লেনদেন ১০ লাখ টাকার বেশি) এর মাসিক লেনদেন প্রবৃদ্ধির হার ৩০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। অনলাইনের মার্কেটপ্লেসের প্রবৃদ্ধি ২৫ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে।