কারফিউ অমান্য করে রাজপথ ছাড়েনি যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভকারীরা
টানা দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক হত্যাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন। বর্ণবাদী আন্দোলনের অষ্টম দিন গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিদ্রোহ দমনে সেনা মোতায়েনের হুমকি দেওয়া স্বত্বেও এতটুকু ছন্দপতন হয়নি বিক্ষোভ সমাবেশগুলোয়।
এদিন গোটা যুক্তরাষ্ট্রে কোথাও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হয়েছে, অন্যদিকে কোনো কোনো শহরে চলেছে অবাধ লুটপাট, দাঙ্গা আর পুলিশের সাথে তীব্র সংঘর্ষের ঘটনা। অজ্ঞাত দুষ্কৃতিকারীদের গুলিবর্ষণে পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাও আহত হন।
এরপর অবশ্য পুলিশের সঙ্গে অধিকাংশ স্থানেই সংঘর্ষের তীব্রতা কমে এসেছে বলে জানিয়েছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। পক্ষান্তরে এখন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশ দূর থেকে পাহারা দিচ্ছে পুলিশ সদস্যরা।
প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিকটি জানায়, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে পেনিসেলভেনিয়া; যুক্তরাষ্ট্রের সকল অঙ্গরাজ্যে বিক্ষোভকারীর দল আবারও রাজপথে ফিরে এসেছে। এর আগের দিন পুলিশের সঙ্গে তীব্র উত্তেজনার সময় পার করলেও, এখন পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত। অধিকাংশ মহানগরে কারফিউ জারি করা হলেও তার তোয়াক্কা করেনি জনতা।
গতকালকেই ওয়াশিংটনে বিক্ষোভ চলাকালীন অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত একটি চার্চ পরিদর্শনে যান ট্রাম্পও। এসময় তার চলার পথ থেকে বিক্ষোভকারীদের সরাতে টিয়ার শেল ব্যবহার করে পুলিশ। একইদিন, বিক্ষোভকারী সন্ত্রাসীদের সামরিক বাহিনী দিয়ে দমন করার হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
তার এসব কথাবার্তা এবং কর্মকাণ্ড হিতে-বিপরীত হয়েছে। রাজপথে বাড়ছে জনতার সংখ্যা, অন্যদিকে ট্রাম্পের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন বিরোধী দল থেকে শুরু করে তার নিজ দলের আইনপ্রণেতারাও। সমালোচনা করেছেন গণমাধ্যম বিশ্লেষকসহ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারাও।
এমনকি ট্রাম্পকে নিজের মুখ বাজে কথা বলার চাইতে বন্ধ রাখার পরামর্শ দেন হিউস্টনের পুলিশ প্রধান আর্ট আসিভেদো।
এর আগে গত সোমবারেই ট্রাকভর্তি জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষী সেনাদের ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজের পাশে মোতায়েন করা হয়। সেনারা পার্শ্ববর্তী লাফায়েতে স্কয়ার পার্কে বিক্ষোভকারী আর পুলিশের মাঝে অবস্থান নেয়।
ট্রাম্পের এই শক্তি প্রদর্শন খুব একটা কাজে দেয়নি। গতকাল রাতেও লাফায়েতে পার্কে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করেছেন এক হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী। তারা পার্কের রেলিংগুলো খুলে সেগুলো দিয়ে অস্থায়ী দেওয়ালের মতো নির্মাণ করে পুলিশের মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
এসময় তারা পুলিশের উদ্দেশ্যে নানা রকম বিদ্রুপাত্মক শ্লোগান দেয়। 'তোমরা এখন খাঁচায় বন্দি' এবং 'আমাদের করের টাকায় কি কাজ কর' এই ধরণের স্লোগান দেওয়া হয়।
উভয়পক্ষের শান্তিপূর্ণ মুখোমুখি অবস্থানের ঘটনা অন্যান্য শহরেও দেখা গেছে। এদিন বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে কেউ কেউ সহিংস তৎপরতা চলাতে চাইলে, অন্যরা তাকে বাঁধা দেন।
এক নারী আন্দোলনকারী পুলিশের বিরুদ্ধে পাথর ছুঁড়তে গেলে অন্যরা তাকে বাঁধা দিয়ে বলে, শক্তি নয়-নিজের ভাষাকে ব্যবহার কর।
মার্কিন পুলিশের সংগঠিত বর্ণবাদী নিপীড়নের বিরুদ্ধে করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ জনতা এখন ফুসে উঠেছে। দৈনিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ১৪০টির বেশি প্রধান প্রধান শহরে। গত সপ্তাহে মিনিয়াপোলিসে গলায় হাঁটু চেপে এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে হত্যা করে স্থানীয় পুলিশ। ওই ঘটনা থেকেই আন্দোলনের সূত্রপাত।