মুশফিকের আবেদনে বিসিবির ‘না’
করোনাভাইরাসের কাছে সবাই অসহায়। ঘরবন্দি হয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই। দীর্ঘ সময় ধরে বন্দি অবস্থায় থেকে প্রায় সবাই বিরক্ত হয়ে উঠেছেন। খেলোয়াড়দের জন্য এই বিরক্তির পরিমাণ আরও বেশি। সারা বছর তাদের সময় কাটে মাঠে। কিন্তু গত আড়াই মাস ধরে মাঠে যাওয়া হচ্ছে না।
কবে শেষ হবে এই অবস্থা? একটাই প্রশ্ন এখন তাদের মনে। বাকি সব খেলার মতো ক্রিকেটও বন্ধ আছে দীর্ঘ সময় ধরে। ক্রিকেটাররা বাড়িতেই ফিটনেস নিয়ে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। মুশফিকুর রহিম রোজার মধ্যেও ফিটনেস নিয়ে একইভাবে কাজ করে গেছেন।
যদিও এই ফিটনেসের কাজ করে মন ভরছে না মুশফিকের। মাঠে ফিরতে ব্যাকুল হয়ে উঠছেন জাতীয় দলের অভিজ্ঞ এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। সবুজ গালিজার বুকে ব্যাট হাতে অনুশীলন না করলে মন শান্ত হচ্ছে না তার।
এ কারণে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে একক অনুশীলন করতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে আবেদন করেছিলেন অনুশীলনে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করা মুশফিক। কিন্তু মুশফিকের এই আবেদনে সাড়া দেয়নি বিসিবি।
পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে মুশফিককে একক অনুশীলনের অনুমতি দেয়নি বিসিবি। নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার আগে অনুশীলনের অনুমতি দেওয়ার বিপক্ষে বিসিবি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এবং মাঠে ফেরার মতো পরিবেশ তৈরি হলে ক্রিকেটারদের অনুশীলনের ব্যবস্থা করার ব্যাপারে ভাববে বিসিবি।
এ নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'এ বিষয়ে মুশফিকের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। যখন সবকিছু স্বাভাবিক হবে, প্রস্তুত হবে, তখন সে অনুশীলন করতে পারবে। একক অনুশীলনের অনুমতি দিলেও সেটা একক থাকে না। নেট বোলার থেকে শুরু করে মাঠ ও উইকেট তৈরি করার মানুষ মানুষ দরকার হবে এখানে। যা ঝুঁকির হয়ে যায়। এ কারণে এমন সিদ্ধান্ত। অনুমতি দেওয়া না দেওয়ার ব্যাপার নয়।'
সহসাই যে অনুশীলনের সুযোগ হচ্ছে না ক্রিকেটারদের, সেটাও জানালেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী, 'আমাদের দেশের পরিস্থিতি কিন্তু স্বাভাবিক নয়। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সেদিক থেকে আমরা মনে করি অনুশীলন বা এই জাতীয় কাজ করার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি। পরিস্থিতি আমাদের অনুকূলে নেই। আমাদের মনে হচ্ছে আরেকটু পরে শুরু করলে ভালো হবে।'
অনুশীলন নিয়ে না ভাবলেও প্রস্তুতি আছে জানিয়ে নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'একটা সময়ে গিয়ে শুরু তো করতেই হবে। সেটা মাথায় রেখে প্রস্তুত থাকা উচিত। আমাদের সেই প্রস্তুতি আছে। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে জীবাণুমুক্তকরণসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে অনুশীলনের সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড।'
মুশফিকও অবস্থা বুঝতে পারছেন। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'অনেকদিন এভাবে চলে গেল। তাই নিজের মতো করে অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু বিসিবি থেকে বলার পর আমিও বুঝতে পেরেছি। এ ছাড়া মিরপুরে অনুশীলন করে আবার বাসায় ফেরা, আমার পরিবারের জন্য সেটা ঝুঁকির হবে। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।'
মে মাসের শুরু দিকে তামিম ইকবালের সঙ্গে ইনস্টাগ্রাম লাইভে মুশফিক বলেছিলেন, 'ব্যাটিং করাটা মিস করছি অনেক। বাসায় ব্যাট আছে, প্রতিদিন ব্যাট ধরি। এসএসের আমার নতুন ব্যাটগুলো খুব কান্না করছে। কবে যে ব্যাটিং করব।' এর পরদিন তামিমের সঙ্গেই লাইভে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বলেন, 'এভাবে আর কয়েকদিন গেলে মুশফিক মারাই যাবে।' সেখানে আড়াই মাস ধরে ব্যাটিং করতে পারছেন না মুশফিক। যা তার জন্য এক প্রকার শাস্তির মতোই।
খেলা কিংবা অনুশীলন; সবখানেই একটু বেশি সিরিয়াস মুডে দেখা মেলে মুশফিকের। খেলা-অনুশীলন না থাকলেও মুশফিক একই মেজাজে থাকেন। অনুশীলনে সবচেয়ে বেশি সময় কাটান তিনি। আনুষ্ঠানিক ছুটির মধ্যেও মিরপুরে মুশফিককে অনুশীলনে দেখা যায়। এ ছাড়া নেটে সবচেয়ে বেশি ব্যাটিং করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।