অস্ট্রেলিয়াকে গুঁড়িয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিশাল জয়
বিশ্বকাপ ইতিহাসের রেকর্ড সংগ্রহ গড়ে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে বড় ব্যবধানে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে একই দশা হলো পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ারও। ব্যাটে-বলে শাসন করে অজিদের দুমড়ে-মুচড়ে দেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা তুলে নিলো টানা দ্বিতীয় জয়। টানা দুই হারে কোণঠাসা হয়ে পড়লো অস্ট্রেলিয়া।
বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ১৩৪ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপে রানের হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রোটিয়াদের এটাই সবচেয়ে বড় জয়। ওয়ানডেতে এটা অজিদের বিপক্ষে তাদের চতুর্থ বড় জয়। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাত ম্যাচের তিনটিতে জিতলো দক্ষিণ আফ্রিকা। বাকি চার ম্যাচের তিনটিতে অজিদের জয়, একটি ম্যাচ টাই হয়।
লক্ষ্ণৌর ভারত রত্ন শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী একানা স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে কুইন্টন ডি ককের সেঞ্চুরি, এইডেন মার্করামের হাফ সেঞ্চুরিসহ আরও কয়েকটি ছোট ইনিংসে ৭ উইকেটে ৩১১ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে প্রোটিয়া পেসারদের তোপের মুখে শুরুতেই দিক হারানো অস্ট্রেলিয়া পরে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ৪০.৫ ওভারে ১৭৭ রানে অলআউট হয়ে যায় তারা। অজিদের ইনিংসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ ৪৬, নেই কোনো ছক্কা।
তিনশ ছাড়ানো লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের সামনে ভুগতে থাকেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। এভাবে বেশি পথ পাড়ি দিতে পারেননি তারা। দলীয় ২৭ রানে মার্শ-ওয়ার্নার দুজনই সাজঘরে ফেরেন। মার্শ ১৫ বলে ৭ এবং ওয়ার্নার ২৭ বলে ১৩ রান করেন। মার্কো ইয়ানসেন ও লুঙ্গি এনগিডির দারুণ শুরু এনে দেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেন প্রোটিয়াদের আরেক পেসার কাগিসো রাবাদা।
একে একে স্টিভে স্মিথ, জশ ইংলিস, মার্কাস স্টয়নিসকে ফিরিয়ে দেন ডানহাতি এই পেসার। তোপে তাগেন বাঁহাতি স্পিনার কেশব মহারাজও, তার শিকার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার তোপে পথ ভুলে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া ৭০ রানেই হারায় ৬ উইকেট। বাঁহাতি পেসার মিচেল স্টার্ককে সঙ্গে নিয়ে এখান থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন মার্নাস লাবুশেন, সপ্তম উইকেটে ৬৯ রান যোগ করেন এ দুজন।
স্টার্ক ৫১ বলে ৩টি চারে ২৭ ও লাবুশেন ৭৪ বলে ৩টি চারে ৪৬ রান করেন। শেষ দিকে অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ২১ বলে ৪টি চারে ২২ রান করেন। ১১ রানে অপরাজিত থাকেন অ্যাডাম জাম্পা। অস্ট্রেলিয়ার শেষের ৩ উইকেট নেন প্রোটিয়া স্পিনাররা। রাবাদা ৮ ওভারে ৩৩ রানে ৩টি উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট পান ইয়ানসেন, মহারাজ ও শামসি। একটি উইকেট নেন এনগিডি।
এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে দুপটে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। উদ্বোধনী জুটিতে ১৯.৪ ওভারে ১০৮ রান যোগ করেন ডি কক ও বাভুমা। এ সময় বাভুমা রান তুলতে বেগ পোহালেও দারুণ ছন্দে থাকা ডিড কক শাসন করে খেলতে থাকেন। জুটিতে বাঁহাতি এই ওপেনারের অবদানই বেশি, প্রোটিয়া অধিনায়ক কেবল সঙ্গ দিয়ে গেছেন।
২০তম ওভারে বাভুমার বিদায়ে দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্বোধনী জুটি ভাঙে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলে ক্যাচ তুলে আউট হওয়ার আগে ৫৫ বলে ২টি চার ৩৫ রান করেন ডানহাতি এই ওপেনার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা ভ্যান ডার ডুসেন আজ ইনিংস বড় করতে পারেননি। ডি ককের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৫০ রানের জুটি গড়া ডুসেন ৩০ বলে ২টি চারে ২৬ রান করেন।
আগেরদিন ঝড় তোলা হেনরিক ক্লাসেনের সঙ্গে আরও কিছুটা পথ পাড়ি দেন ডি কক। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের লড়াই থামে ৩৫তম ওভারে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৯তম সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া ডি কক ১০৬ বলে ৮টি চার ও ৫টি ছক্কায় ১০৯ রান করেন। তার বিদায়ের পর দলকে ঠিক পথে রাখেন ৪৪ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৬ রান করা মার্করাম।
কিন্তু মার্করাম আউট হলে দক্ষিণ আফ্রিকার রানের চাকার গতি কমে আসে। উইকেট হারানোর পাশাপাশি সেভাবে রানও তুলতে পারেনি টানা দ্বিতীয় জয়ের লক্ষ্যে থাকা দলটি। ক্লাসেন ২৯, ডেভিড মিলার ১৭ ও মার্কো ইয়ানসেন ২৬ রান করেন। অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক ও ম্যাক্সওয়েল ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান জশ হ্যাজলউড, প্যাট কামিন্স ও অ্যাডাম জাম্পা।