দক্ষিণ গাজার শরণার্থী শিবির: জাগিয়ে তুলছে নাকবার বেদনাদায়ক অতীতের স্মৃতি
দক্ষিন গাজার বালুময় এক শিল্প এলাকায় বানানো শরণার্থী শিবিরের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটজুড়ে। উত্তর ও পূ্র্ব গাজায় ইসরায়েলের অনবরত বেমাবর্ষণের মধ্যে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি জীবন বাঁচাতে ছুটে এসেছেন এখানে। যাদের জায়গা হয়েছে সারি সারি তাঁবুতে৷
জাতিসংঘের তথ্যমতে, প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি অর্থাৎ গাজার মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই গত দুই সপ্তাহে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
গত বুধবার নিজেদের স্কুলের পাশে আরো একটি ক্যাম্প স্থাপন করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা৷
গাজার শেখ রাদওয়ান থেকে পরিবারের ৫২ সদস্যসহ এই ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী আসমা আল উসতাজ। কথা বলার জন্য এগিয়ে যেতেই আসমা বলেন, আমরা খুবই ক্লান্ত।
তিনি আরো বলেন, গত দুই রাত আমরা খোলা আকাশের নিচে শুয়েছি৷ অবশেষে গতকাল আমাদের তাঁবু দেয় জাতিসংঘ।
আসমা জানান, তার মনে হচ্ছে তিনি ১৯৪৮ সালের ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন৷ যখন ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার জন্য ইহুদী আধাসামরিক বাহিনী প্রায় ৫০০ গ্রাম ও শহর ধ্বংস করে দেয়৷ হাজার হাজার মানুষ এসময় মারা যায় এবং ৭ লাখ ৫০ হাজারে বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়। যে ঘটনা নাকবা নামে পরিচিত৷
আসমা বলেন, এই তাঁবু নির্বাসনের প্রতীক৷ এই তাঁবু ধ্বংস, দমন, নাকবা, গণহত্যার প্রতীক৷ আমরা সহায়তা চাই না৷ আমরা আমাদের অধিকার চাই। আমরা নিরাপত্তা চাই। বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের শিশুদের মতো আমাদের সন্তানদের জন্য সমান অধিকার চাই৷
তাঁবুর ভেতরে মাঝখানে একটি সাদা খুঁটি ছাদ ধরে রেখেছে। মেঝে তারপলিনে ঢাকা৷ কাপড় রাখার জন্য দুই তাঁবুর মাঝখানে দড়ি লাগানো হয়েছে৷ আর কাপড় ধুতে হচ্ছে প্লাস্টিক টিউবে।
১৯ বছর বয়সী ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থী দোহা হামোদা জানান, তার পরিবার আরো ছয়জনের সাথে মিলে এখানে এসেছে৷
দোহা বলেন, মানুষদের বোমার বিষয়ে সতর্ক করা হয়নি। অনেকে ঘরের মধ্যেই মারা গেছে৷
তিনি জানান, এই ক্যাম্পও নিরাপদ নয়৷ কারণ সংলগ্ন এক এলাকাতেও বোমাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
দোহা বলেন, এখানে বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই, ইন্টারনেট নেই। আমরা আমাদের নিজেদের খবরই দেখতে পাই না৷ বিশ্বের অন্যান্য মানুষ আমাদের চেয়ে বেশি খবর জানে আমাদের সম্পর্কে।
উত্তর জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে থাকা ফিদা ইয়াসির জাকুত জানান, বোমাবর্ষণে তার পরিবারের ৬ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে৷
তিন সন্তানের জননী ফিদা বলেন, তার মনে হচ্ছে যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
তিনি বলেন, নাকবার মতই একই দৃশ্য বিদ্যমান৷ তারাও তাঁবুতে দিন কাটিয়েছে, আমরাও কাটাচ্ছি। এটা কোনো জীবন নয়৷ পুরো বিশ্ব জানে আমাদের সাথে কি ঘটছে৷ তাদের কি করুণা হয় না?