বিশ্বকাপে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ, আশা গলফার সিদ্দিকুরের
নিজের খেলা নিয়েই ব্যস্ত সিদ্দিকুর রহমান। ম্যাকাওতে টুর্নামেন্ট খেলে দেশে ফিরেছেন, থাকবেন পাঁচদিন। এরপর ভলভো ওপেনে খেলতে চীনে যাবেন দেশসেরা এই গলফার। পরের কয়েকটি সফর হংকং, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান, সৌদি আরবে। টুর্নামেন্ট থাকলে কয়েক দিন ধরে টানা ১০ ঘণ্টা মাঠেই সময় কাটে তার। এমন ব্যস্ততার মাঝে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ম্যাচ দেখার সময় হয়ে ওঠে না সিদ্দিকুরের। তবুও সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমদের ম্যাচের খবর ঠিকই রাখেন তিনি।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে আলাপচারিতার শুরুতেই এই গলফার বলে নিলেন, 'সত্যি বলতে ক্রিকেট ম্যাচ আমার সেভাবে দেখা হয় না। অনেক লম্বা সময় ধরে হয় বলে আমার জন্য কঠিন হয়ে যায় দেখা। তবে খোঁজ-খবর রাখি। আমার যখন টুর্নামেন্ট থাকে, তখন আমি ছয়দিন মাঠে থাকি ১০ ঘণ্টা করে। টুর্নামেন্ট চলাকালীন খুবই ব্যস্ততা যায়। নিজের লক্ষ্য, পরিকল্পনা, মনোযোগ; এসব নিয়েই থাকতে হয়। তাই কোনোভাবেই সময় বের করতে পারি না। টুর্নামেন্টে থাকলে অনেক সময় স্কোরও দেখতে পারি না। দেশে থাকলে খেলা দেখা বা স্কোর দেখে নিই।
সেমি-ফাইনালে খেলার স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ মিশনে গেছে, তা জানা আছে সিদ্দিকুরের। বাংলাদেশের স্বপ্নের পথ কঠি হয়ে গেছে বলে মনে করেন তিনি, যদিও তার বিশ্বাস, 'এখনও সম্ভব।' সিদ্দিকুরের বলেন, 'যেহেতু চার ম্যাচের তিনটিতেই হেরে গেছে, এখন তো একটু কঠিন সময় পার করতে হবেই। আমার মনে হয়, মাইন্ডসেটটা যদি পরিবর্তন করতে পারে, তাহলে হয়তো সম্ভব। যৌক্তিকভাবে এটা খুবই কঠিন এখন বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু তারপরও বলব, এটা এখনও সম্ভব। মাইন্ড সেট পরিবর্তন করে সেভাবে যদি সামনে এগোতে পারে, এখনও সম্ভব।'
'সাধারণত যেটা হয়, কঠিন সময়ে আমরা (বাংলাদেশ ক্রিকেট দল) সেটা কাটিয়ে উঠতে পারি না। এখানে যদি পরিকল্পনা করে, বিশেষ করে আমি মাইন্ডসেট বা সাইকোলজিক্যাল পরিবর্তনের কথা বলব। আমিও তো খেলি, আমারও এমন কঠিন সময় যায়। এই সময়গুলো কেমন হয়, সেটা আমি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারি। এসব সময়ে শেষ অপশন থাকে আমার মাইন্ড সেট পরিবর্তন করা। তো আমার কাছে মনেহয় এভাবে পরিবর্তন এনে যদি খেলা যায়, কিছু একটাও হতেও পারে। তবে লজিক্যালি, এটা খুবই কঠিন এই মুহূর্তে।' যোগ করেন তিনি।
শেষ চারের পথ কঠিন মনে হলেও বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আশাবাদী সিদ্দিকুর, আর সেটা পরের ম্যাচ দিয়েই। বাংলাদেশ ওয়ানডেতে যেমন দল, সেই অনুযায়ী খেলতে পারলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো খুব কঠিন মনে করেন না তিনি, 'ওয়ানডেতে বাংলাদেশ সব সময় ভালো করে, অনেক ভালো দল। সেই ভালো দলের মতো করে আমরা যদি ম্যাচ খেলতে পারি, তাহলে জেতা অসম্ভব নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার দারুণ দল, খুবই ভালো খেলছে। কিন্তু বাংলাদেশ ওয়ানডেতে যেমন দল, সেভাবে যদি খেলতে পারে; আমি বলব বাংলাদেশও জিততে পারে, জেতা খুব বেশি কঠিন নয়।'
এ পথে প্রত্যাশার চাপ না নেওয়ার পরামর্শ সিদ্দিকুরের, 'পারফরম্যান্স না করতে পারলে চাপ বেড়ে যায়। এই মুহূর্তে প্রত্যাশা রেখে চাপ না বাড়িয়ে যদি ওয়ানডের মতো করে খেলি, তাহলে হয়তো যার যার জায়গা থেকে সেরাটা দিয়ে খেলা যাবে। হার-জিত থাকেই, কিন্তু আমি আমার খেলাটা খেলতে পারছি কিনা, সেটা বড় ব্যাপার। ভালো পারফরম্যান্স করে না জিতলেও সম্মানজনক একটা অবস্থায় থাকা যায়। নিজের পুরোটা দেওয়ার পরও যদি হেরে যায়, তখন কিন্তু মানুষ বুঝতে পারবে। ক্রিকেট বোঝে না, এখন এমন মানুষ নেই। তো সবাই সখন বলবে, লড়াই করে হেরেছে, এটা ঠিক আছে। লড়াই করাটা জরুরি।'
যদিও ঘুরে দাঁড়ানোর মিশনে সাকিব আল হাসানকে ছাড়া সেভাবে লড়াই করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন সিদ্দিকুর, 'ভারতের বিপক্ষে সাকিবের অনুপস্থিতি বাংলাদেশ দলের জন্য বিরাট ক্ষতির ছিল। তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, আমাদের দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানও। তার দলে থাকাটা বাংলাদেশ দলের জন্য অনেক বড় শক্তির জায়গা। তবে দিনশেষে, এটা জীবন ও খেলারই অংশ। খেলোয়াড়দের চোট থাকবে, অনেক ম্যাচ খেলতে পারবে না, এমন হবেই। কিন্তু সাকিবের না থাকায় যে শূন্যতা তৈরি হয়, সেটা তো আর পূরণ হচ্ছে না।'
'জানি না তার চোটের কী অবস্থা। সামনেও যদি সাকিবকে ছাড়া খেলতে হয় বাংলাদেশকে, তাহলে ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তাটা আরও কঠিন হবে আমাদের জন্য। বিশ্বকাপের মতো আসরে জিততে রান করতে হবে, ব্যাটসম্যানরা সেই কাজটি করে থাকেন। আর আমাদের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান সাকিব, সঙ্গে তার বোলিং দলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। তো তিনি যদি না থাকেন, বড় একটা গ্যাপ থেকেই যাবে। কারণ সাকিবের বিকল্প নেই আমাদের।' বলেন বাংলাদেশের এই গলফার।
বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলোর জন্য শুভ কামনা জানিয়ে সিদ্দিকুর আবারও বললেন, ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যে মানের দল, সেভাবে খেলতে পারলে যেকোনো দলকেই হারানো সম্ভব। বললেন, 'বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য সব সময়ই শুভ কামনা। আমাদের দল এটা, আমি সব সময়ই সমর্থন দিই। আমরা আমাদের খেলাটা খেলতে পারলে, যেকোনো দেশকেই হারানো সম্ভব। বাংলাদেশ দলের প্রতি আমার আমার দোয়া ও শুভেচ্ছা রইলো।'