ডি কক-ক্লাসেন ঝড়ে প্রোটিয়াদের রান পাহাড়, জিততে রেকর্ড গড়তে হবে বাংলাদেশকে
২১ ওভারে ১০০, ৩৬ ওভারে ২০০, ৪৪ ওভারে ৩০০; আর শেষের ৬ ওভারে চললো রীতিমতো তাণ্ডব, ৩৬ বলে উঠলো ৮২। প্রথম তিন ধাপেই ব্যাট হাতে শাসন করলেন চোখ ধাঁধানো ব্যাটিংয়ে এবারের বিশ্বকাপে তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া কুইন্টন ডি কক। সঙ্গে থাকলো এইডেন মার্করামের দায়িত্বশীল ব্যাটিং, হেনরিখ ক্লাসেনের দানবীয় ইনিংস ও ডেভিড মিলারের ঝড়। এই চার ব্যাটসম্যানের দাপটের দিনে বিশাল সংগ্রহ গড়লো দক্ষিণ আফ্রিকা।
মঙ্গলবার মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করা দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেটে ৩৮২ রানের বড় সংগ্রহ গড়েছে। ওয়ানডে ও বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই তাদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। এবারের বিশ্বকাপের পাঁচ ম্যাচের মধ্যে চারটিতে আগে ব্যাটিং করে ৩০০'র বেশি রান করলো প্রোটিয়ারা। এর মধ্যে একটি ইনিংস ৪২৮ রানের, যা বিশ্বকাপের ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।
৩৮২ রান পাড়ি দিয়ে জিততে হলে বাংলাদেশকে বিশ্বকাপের রেকর্ড বদলাতে হবে। বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান তাড়া পাকিস্তানের, এবারের আসরেই শ্রীলঙ্কার করা ৩৪৪ রান টপকে জেতে বাবর আজমের দল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড আয়ারল্যান্ডের দখলে, এই বিশ্বকাপের আগে যা ছিল সর্বোচ্চ রান তাড়া। ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের দেওয়া ৩২৮ রানের লক্ষ্য পাড়ি দিয়ে জেতে আইরিশরা।
পরের দুটি সফল রান তাড়া বাংলাদেশের। ২০১৯ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া ৩২২ রানের লক্ষ্য ৩ উইকেটেই পাড়ি দেয় বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের ইতিহাসে তৃতীয় সফল রান তাড়ায় ২০১৫'র আসরে স্কটল্যান্ডের করা ৩১৮ রানের জবাবে ৪ উইকেটে ৩২২ রান করে তারা। ওয়ানডেতে এই দুটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তারা।
রান পাহাড় গড়লেও দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা বলার মতো ছিল না। দলীয় ৩৪ রানের মধ্যেই রিজা হেনড্রিকস ও রাসি ভ্যান ডার ডুসেনকে ফিরিয়ে দেন শরিফুল ইসলাম ও মেহেী হাসান মিরাজ। কিন্তু এই চাপ দলকে বুঝতেই দেননি ডি কক ও মার্করাম। তৃতীয় উইকেটে ১৩১ রানের জুটি গড়ে তোলেন এ দুজন। ৬৯ বলে ৭টি চারে ৬০ রান করা মার্করামকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান।
এতেও দক্ষিণ আফ্রিকার রান তোলার গতিতে ভাটা পড়েনি, বরং গতি আরও বেড়ে যায়। বাংলাদেশের বোলারদের ওপর দিয়ে তাণ্ডব চালান ডি কক ও ক্লাসেন। এই জুটি ৮৭ বলে ১৪২ রান যোগ করে। সেঞ্চুরি পেরিয়ে ডাবল সেঞ্চুরির পথে ছিলেন ডি কক। কিন্তু হাসান মাহমুদের ফুল টসে ছক্কা মারতে গিয়ে সীমানায় ধরা পড়েন বাঁহাতি এই ওপেনার। ফেরার আগে ১৪০ বলে ১৫টি চার ও ৭টি ছক্কায় ১৭৪ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেন তিনি।
বিশ্বকাপে এটাই তার সেরা ইনিংস এবং ওয়ানডের দ্বিতীয় সেরা। ওয়ানডেতে এটা ডি ককের ২০তম সেঞ্চুরি। ডি ককের বিদায়ের পর ক্লাসেন ও মিলার বাংলাদেশের বোলারদের পথ ভুলিয়ে দেন, চলতে থাকে চার-ছক্কার শো। এই জুটি মাত্র ২৫ বলে ৬৫ রান যোগ করে। ৪৯ বলে ২টি চার ও ৮টি ছক্কায় ৯০ রানের দানবীয় ইনিংস খেলেন ক্লাসেন।
মিলার ১৫ বলে একটি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩৫ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। সুবিধা করতে পারেননি বাংলাদেশের কোনো বোলারই। সবচেয়ে বেশি ১১.১৬ ইকোনমিতে ৬ ওভারে ৬৭ রান দেওয়া বাংলাদেশের পেসার হাসান মাহমুদ ২টি উইকেট নেন। সবচেয়ে কম ইকোনমিতে ৪৪ রান খরচায় একটি উইকেট নেন মিরাজ। শরিফুল ও সাকিবও একটি করে উইকেট পান। দুজনই ওভার প্রতি ৭ রানের বেশি করে খরচা করেন।