আশুলিয়া, গাজীপুরে ন্যূনতম মজুরির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান শ্রমিকদের, অনেক কারখানায় ছুটি ঘোষণা
পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ড কর্তৃক চূড়ান্তকৃত সাড়ে ১২ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির সিদ্ধান্ত মানছেন না পোশাক শ্রমিকদের একটি বড় অংশ। এর জের ধরে সকালে আশুলিয়ার বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কে বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের নরসিংহপুর ও নিশ্চিন্তপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এসময় কয়েকজন শ্রমিক আহত হওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার এবিএম রশিদুল বারী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরিফ নামে হা-মীম গ্রুপের একজন আহত শ্রমিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সকালে আমরা কারখানায় কাজ করছিলাম। ১০টার দিকে কারখানার বাইরে অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করলে কর্তৃপক্ষ আমাদের ছুটি ঘোষণা করে। পরে কারখানা থেকে বের হওয়ার পথে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের ছোঁড়া ইট এসে আমার মাথায় লাগে।"
এছাড়া আরও কয়েকজন শ্রমিক সামান্য আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
পরে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব টিবিএসকে বলেন, "সকালে নরসিংহপুর এলাকায় হা-মীম গ্রুপের শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে টিয়ার শেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।"
সকাল থেকে ঢাকার আশুলিয়ায় শ্রমিকরা কারখানাগুলোতে প্রবেশ করলেও বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কাজ করেনি।
বাধ্য হয়ে সকাল ৯টার দিকে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের জামগড়া-ছয়তলা এলাকায় অবস্থিত স্টারলিং গ্রুপসহ বেশ কিছু কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।
এছাড়া, আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায়ও কয়েকটি কারখানা ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ছুটি ঘোষণার পর বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সকাল থেকে কিছু কারখানায় শ্রমিকরা প্রবেশ করলেও তারা কাজে যোগ দেননি। কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করে কাজ না করে নিজ থেকে বেরিয়ে যান। আবার কিছু কারখানায় শ্রমিকরা কাজ শুরু করলেও আশেপাশের কারখানা ছুটি দিয়ে দেওয়ায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় তাদের কারখানায়ও ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।
এসময় শ্রমিকরা জানান, মজুরি বোর্ড কর্তৃক চূড়ান্তকৃত ১২৫০০ টাকা ন্যূনতম মজুরির সিদ্ধান্ত তারা মানেন না। তারা মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন করে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানান।
সকাল ৯টার দিকে জামগড়া-ছয়তলা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, একইসাথে কয়েকটি কারখানা ছুটি দেওয়ায় কয়েক হাজার শ্রমিক সড়কে বের হয়ে এলে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সতর্ক অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
কিছু শ্রমিক এসময় সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।
এসময় কিছু শ্রমিক 'আমাদের দাবী মানতে হবে', '২৩ হাজার টাকা মজুরি চাই'সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে নিজ নিজ বাসার দিকে চলে যায়।
উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে এসময় শ্রমিকদের বলতে শোনা যায়, "আপনারাও গুলি করবেন না, আমরাও কোন বিশৃঙ্খলা করবো না।"
কারখানা থেকে বেরিয়ে সুমি নামে স্টারলিং অ্যাপারেলস এর একজন অপারেটর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "শ্রমিকরা কারখানায় এলেও কেউ কাজ করেনি। আমরা সবাই বসে ছিলাম। আমরা ১২৫০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি মানিনা, আমাদের বেতন না বাড়ানো হলে আমরা কাজ করবো না।"
তিনি জানান, শ্রমিকরা কাজ না করায় এবং আশেপাশের বেশ কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করায় তাদের কারখানাও ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
এর আগে সকালে সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় এই অঞ্চলের কারখানাগুলোতে সকালে শান্তিপূর্ণভাবেই শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করে।
এছাড়াও নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ বিভিন্ন কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সকাল থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে টহল দিতে দেখা গেছে বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।
সকাল ১০টা পর্যন্ত আশুলিয়ার কোথাও কোন বিক্ষোভ, সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-০১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, "সকালে ৪/৫টি কারখানার শ্রমিকরা বের হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে, পরিস্থিতি এখনও শান্ত রয়েছে।"
বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, আশুলিয়ায় এএম ডিজাইন, এনভয়, উইন্ডি এবং নেক্সট কালেকশনের (হা-মীম) কারখানা থেকে শ্রমিকরা বের হয়ে আসে।
হা-মীম, স্টার্লিং ক্রিয়েশন, অনন্ত, স্টার্লিং অ্যাপারেলস-এর কাজ বন্ধ রয়েছে।
গাজীপুরের অর্ধশতাধিক কারখানায় ছুটি ঘোষণা
গাজীপুরের কোনাবাড়ী, জরুন, চান্দনা ও ভোগরা এলাকায় ৫০টির বেশি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা এলাকায় সকাল ৯টার দিকে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে শিল্প ও থানা-পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলেও, কিছু সময় পর কোনাবাড়ীর নাওজোর এলাকায় বাইপাস সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন পোশাকশ্রমিকরা।
এসময় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।