পিয়ন, দারোয়ানসহ সকল সরকারি চাকরিজীবীকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে হবে
পিয়ন, দারোয়ান কিংবা অফিস সহকারী- চলতি অর্থবছর থেকে সকল কর্মচারীকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। না হলে তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যাবে।
আয়কর আইন, ২০২৩-এর এ বিধান মেনে সকল গণকর্মচারীকে রিটার্ন দাখিল করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের আওতাভুক্ত দপ্তর-অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ই-টিআইএন সংগ্রহ করে রিটার্ন দাখিল করার নির্দেশনা শুরু করেছে।
এতোদিন সকল সরকারি চাকরিজীবীদের রিটার্ন দাখিল করতে হতো না। যাদের মূলবেতন ১৬,০০০ টাকা বা তার বেশি, তাদের জন্য রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক ছিল।
চলতি অর্থবছর নতুন আয়কর আইন করেছে সরকার। তার বিভিন্ন ধারায় সকল গণকর্মচারীর জন্য রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করে বলা হয়েছে, গণকর্মচারীর বেতন ভাতাদি প্রাপ্তিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ জমা দিতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, যেসব কর্মচারীর বেতন করসীমার চেয়ে কম, তাদের কোন কর দিতে হবে না। তবে সবাইকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। আর যাদের বেতন করমুক্ত আয়সীমা অতিক্রম করে, তাদের আয়বর্ষের আনুমানিক মোট আয়ের জন্য প্রযোজ্য করের গড় হারে তার বেতন বিল থেকে উৎসে কর্তন করতে হবে।
এ নির্দেশনা পাওয়ার পর করমুক্ত আয়সীমার চেয়ে কম বেতনভুক্ত কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরণের ভয় কাজ করছে বলে একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। অনেক কর্মচারীর বেতন কম হওয়া সত্ত্বেও নিজের নামে বড় অংকের অর্থ সঞ্চয়পত্র সহ বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ রয়েছে, তাদের উৎকণ্ঠা আরও বেশি।
সকল সরকারি কর্মচারীর জন্য রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করার বিধানকে যৌক্তিক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, অনেক অল্প বেতনধারী কর্মচারীর একাধিক বাড়িসহ বিপুল সম্পদ রয়েছে। তাদের বেতনের বাইরে আরও আয় থাকতে পারে। রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করায় সরকার তার সম্পদের তথ্য পাবে।
এছাড়া এর মধ্য দিয়ে রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা বাড়বে, ট্যাক্স নেটও বাড়বে। যেসব অল্প বেতনধারী কর্মচারীর অন্যান্য আয় ও সম্পদ আছে, সেসব আয় থেকে আয়কর পাওয়া যাবে। এতে রাজস্ব আহরণ বাড়বে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতবছর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১৩,৯৬,৮১৮ জন। এর মধ্যে ১১তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত কর্মচারীর সংখ্যা ১২,১৭,২৬৪ জন।
১১তম থেকে ২০তম গ্রেডের প্রারম্ভিক মূলবেতন ৮২৫০ টাকা থেকে ১৬০০০ টাকা পর্যন্ত, যা করমুক্ত আয়সীমার চেয়ে কম। চলতি অর্থবছর করমুক্ত আয়সীমা ৩.৫০ লাখ টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের দেশের অনেক পিয়নেরও দুই-তিনটা বাড়ি আছে। সরকারি চাকরির বেতন কম হলেও তাদের অন্য ইনকাম থাকতে পারে। এই বিবেচনায় সকল গণকর্মচারীর জন্য রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা যৌক্তিক হয়েছে।"
তিনি বলেন, "কারও একাউন্টে ১০ লাখ বা ২০ লাখ টাকা পেলে যেন তাকে হয়রানি করা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একজন অল্প বেতনের চাকরিজীবীও দীর্ঘদিন অল্প অল্প টাকা জমিয়ে এই পরিমাণ টাকা সঞ্চয় করতে পারেন। তবে কারও অবিশ্বাস্য রকমের সম্পদ থাকলে সেগুলো নিয়ে তদন্ত করা যেতে পারে।"
ট্যাক্স কনসালটেন্ট স্নেহাশিষ বড়ুয়া বলেন, "আইন অনুযায়ী সকল সরকারি চাকরিজীবীকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করে দাখিলের প্রমাণক নিতে হবে। যাদের আয় করযোগ্য আয়সীমার নিচে রয়েছে, তাদেরও রিটার্ন দাখিল করতে হবে।"
সরকারের এই উদ্যোগের ইতিবাচক দিক সম্পর্কে তিনি বলেন, "এতে রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা বাড়বে, ট্যাক্স নেট বাড়বে। অনেকে অল্প টাকা বেতন পেলেও অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাদের সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে হবে। অর্থাৎ, তারা কমপ্লায়েন্সের মধ্যে আসবে, তারা জবাবদিহিতার মধ্যে আসবে।"
"এই আইনের ফলে সকল সরকারি চাকরিজীবী রিটার্ন দাখিলের সময় আইনগতভাবে তাদের সকল সম্পদ দেখাতে বাধ্য। তবে কেউ যদি তার সম্পদ প্রদর্শন করতে না চায়, সেটা ভিন্ন বিষয়", জানান তিনি।
স্নেহাশিষ বড়ুয়া বলেন, অনেক কম শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন সরকারি চাকরিজীবী রয়েছেন, যারা হয়তো নিজের রিটার্ন ফরম নিজে পূরণ করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে অন্যের সহায়তা নিতে কিছু টাকা খরচ করতে হবে, যা তার ওপর আর্থিক চাপ তৈরি করবে। এক্ষেত্রে তারা অনলাইনে ফরম পূরণ করে সাবমিট করলে সেই খরচের চাপ থেকে রেহাই পেতে পারেন।