পাঁচ হাজার বছরের পথ পাড়ি: ওষ্ঠ রং করা থেকে লিপস্টিক
গুহাবাসী নারী হয়তো প্রথম অনুভব করতে পারে, জাম খেয়ে রঙিন হয়ে ওঠা তার অধরদ্বয়ের কারণে তার প্রতি গুহাবাসী মুষলধারী পুরুষের নজর ঘন ঘন পড়ছে! আর এ দেখেই হয়তো নারীরা ঠোঁট রাঙানোর তৎপরতায় মেতে ওঠে। এভাবে নানা রঞ্জক প্রয়োগে অধর রঙিন করে তোলার পথ ধরে আবিষ্কৃত হলো আধুনিক কালের ওষ্ঠরঞ্জক—লিপস্টিক। লিপস্টিকের ব্যবহার কীভাবে চালু হলো, সে কথা তুলে ধরেন মেগ রাগাস ও কারেন কোজলোস্কি। ১৯৯৮-এ প্রকাশিত বই 'রিড মাই লিপস: কালচারাল হিস্টোরি অব লিপস্টিক'-এ তুলে ধরা হয় এই কাহিনি।
ওষ্ঠ রাঙানোর নল বা লিপস্টিক বিটির (বিফোর টিউব) কথা:
ঠোঁট রাঙানোর আদিমতম নমুনা বা প্রসাধনদানির আলামত পাওয়া গেছে, (ইরাকের) উরের কাছাকাছি পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো সুমেরীয় সমাধিতে। মিসরে ওষ্ঠ রাঙানোর প্রথার বিবরণ রয়েছে প্যাপিরাসের গোটানো পুঁথিতে। এতে মিসরীয় তরুণীর এক হাতে আয়না, অপর হাতে ঠোঁট রাঙানোর চিত্র আঁকা আছে। খ্রিষ্টীয় যুগের প্রথম দিকে নারী-পুরুষ উভয়ই ঠোঁট রাঙাত। এ ছাড়া প্রসাধন করা এবং ঠোঁট রাঙানোকে সে যুগের খ্রিষ্টান পত্নী নিজ নৈতিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে মান্য করত। পতির স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনায় এ প্রথা মানা হতো। চতুর্থ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে গ্রিক নারীরাও ঠোঁটে রং দিতেন। রঞ্জক প্রস্তুতে সিঁদুর, সাগর শৈবাল এবং মালবেরির মতো উদ্ভিজ্জাত উপাদান ব্যবহার করত। দ্বিতীয় শতাব্দীতে ঠোঁট রাঙানোর রং পছন্দ করতে গিয়ে সাহসের পরিচয় দিতেন ফিলিস্তিনি দুহিতারা। উজ্জ্বল লাল-কমলা রং থেকে পর্যায়ক্রমে গাঢ় বেগুনি পর্যন্ত নানা বর্ণ ব্যবহার করতে দ্বিধা করত না ফিলিস্তিনি নারীরা।
মধ্যযুগে ঠোঁট রাঙানো দেখেই নারীর সামাজিক অবস্থান বোঝা যেত। ১৯০০ দশক পর্যন্ত এ ধারা চলেছে। ষষ্ট শতকে স্পেনে নিচু শ্রেণি এবং বারাঙ্গনারাই কেবল ঠোঁট রাঙাত। বিত্তশালী নারীরা উগ্র প্রসাধন থেকে দূরে থাকত। কিন্তু ১৩ শতকে এসে প্রথা এবং আচার-আচরণ পুরোই পাল্টে গেল। সর্বশ্রেণির নারী সে সময়ে ওষ্ঠ রাঙাতে শুরু করে। তুসকানের সমাজে বিত্তশালী নারীরা উজ্জ্বল গোলাপি রং ব্যবহার করত। অন্যেরা ব্যবহার করতে মেটে লাল রং। এ সময় ভরা বা বড় ধাঁচের মুখমণ্ডলের কদর ছিল। ফরাসি এক কবি টসটসে এবং লোহিত রঞ্জকের চেয়েও রক্তিমাভ অধরদ্বয়ের প্রশংসা করেছেন। চসারের দ্য কোর্ট অব লাভেও এমন অধরের প্রশংসাবাক্য রয়েছে। অধরকে দৃষ্টিগ্রাহ্য করার আয়োজনকে তুঙ্গে নিয়ে যায় জাপানি রমণীকুল। তারা প্রেমিকের নজর টানার জন্য নিচের ঠোঁটকে সোনালি রঙে রঞ্জিত করে তুলত। ইতালিতে রেনেসাঁ যুগে সৌন্দর্যের নতুন সংজ্ঞা তৈরি করল মানুষ। 'সুন্দরী রমণী নিয়ে আলাপচারিতা' নামে বইটি লেখা হয় ১৫৪০ খ্রিষ্টাব্দে। সে যুগের নামকরা লেখক ফায়ারেনজুওলার লেখা বইটিতে সুন্দর হওয়ার শর্ত হিসেবে মুখমণ্ডলকে ছোট হতে হবে বলে দাবি করা হয়। ওষ্ঠদ্বয়কে মধ্যম আকারের হতে হবে। থাকতে হবে লালের ছটা। হাসলে ওপরের পাটির ৫ থেকে ৬-এর বেশি দাঁত দেখা যাবে না। ইংল্যান্ডের রানি প্রথম এলিজাবেথের যুগে লালচে ঠোঁটকেই প্রচলিত রেওয়াজ হিসেবে গণ্য করা হতো। (খোদ রানিরও পছন্দ ছিল আরবীয় আঠা, আন্ডার সাদা অংশ এবং ডুমুরের দুধসহযোগে এক জাতের কীট থেকে তৈরি লাল রঞ্জক।)
অন্যদিকে প্যারিসের রাস্তাঘাটে ঘুরতে গিয়ে নানদের রাঙানো ঠোঁট নজর এড়াত না। এ সময়ে প্রসাধন চল দিনে দিনে বাড়তে থাকে। কাজেই কাউকে না কাউকেই প্রসাধন বানানোর কাজে এগিয়ে আসা সে সময়ের একান্ত দাবি হয়ে ওঠে। কোনো কোনো প্রকাশনী সৌন্দর্যবর্ধক মিশ্রণ তৈরির প্রণালি এবং নির্দেশনা প্রকাশ করতে থাকে। লিপস্টিক বলতে আজকের দিনে যে জিনিস দেখতে পাই, তার গণ-উৎপাদন ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দের আগে শুরু হয়নি। লিপস্টিকের ধাতব নলটির আবিষ্কারক মার্কিন মরিস লেভি। এরপরের কয়েক দশক ধরে ঠোঁট রাঙানোর নতুন নতুন সৌন্দর্য মিশ্রণ তৈরির পদ্ধতি বের হতেই থাকে।
সপ্তদশ শতকে এসে পুরোহিত এবং নীতিবাগীশদের সমালোচনার মুখে পড়ে ওষ্ঠ রাঙানোর প্রসাধন তৎপরতা। তাদের বক্তব্য, এভাবে রং মেখে ঈশ্বরের সবচেয়ে দামি উপহারের প্রকৃতি বদলে দেওয়া হচ্ছে। সমালোচনার তোড়ে থেমে বা দমে যায়নি অধর রাঙানোর প্রক্রিয়া। 'চেরির মতো টকটকে লাল ওষ্ঠদ্বয়'কে সেকালে 'সৌন্দর্যের মাপকাঠি' হিসেবে ধরা হতো। সে 'মাপকাঠি' অর্জনে রমণীকুলের চেষ্টাকে এসব সমালোচনা স্তব্ধ করে দিতে পারেনি। 'নিজ স্ত্রী বেছে নেবেন কীভাবে' নামের অজ্ঞাতনামা লেখকের বইতে এই মাপকাঠির কথা বলা হয়েছে। কবি রবার্ট হেররিকের ভাষায়, (পছন্দের রমণীর অধরদ্বয় হতে হবে) 'রুবির মতো টকটকে লাল।'
স্ত্রীদের ঠোঁট রাঙানোর কাজে নৈতিকতার তর্ক তুলে কোনো বাধা দেয়নি সে যুগের স্বামীকুল। পাপ নয়; বরং একে স্ত্রীকুলের একধরনের দুষ্ট অবকাশ বিনোদন হিসেবেই মেনে নিয়েছেন তারা। সুন্দরী নারীর বর্ণনায় স্যার জন সাকলিং লেখেন, তার ওষ্ঠদ্বয় টকটকে লাল। এ রং প্রাকৃতিক নাকি প্রসাধনচর্চিত, তা নিয়ে মাথা ঘামাননি তিনি।
শয়তানের 'লেবেঞ্চুষ!'
সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি ঠোঁটে রং দেওয়ার প্রবণতাকে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য প্রথা হিসেবে মেনে নিল সমাজ। তবে এর বিরুদ্ধবাদীরাও তখন একেবারে মিইয়ে যায়নি, তৎপর ছিল। ইংরেজ ধর্মযাজক এবং লেখক টমাস হল ১৬৫৩-এ 'দ্য লোথসামনেস অব লং হেয়ার' নামের পুস্তকে প্রসাধনীর বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠে। রং লাগানোকে তিনি শয়তানের কর্ম বলে দাবি করে। ঠোঁটে তুলির আঁচড় দেয় যেসব রমণী, তারা অন্যকে প্রলুব্ধ করার প্রয়াসে মাতে বলেও অভিযোগ তোলেন এ ধর্মযাজক। প্রচণ্ড অহংবোধের তাড়নায় এমন তৎপরতায় নামে, বিশ্বাস ব্যক্ত করে তিনি।
প্রলুব্ধ করার কাজে লিপস্টিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রথম হয়তো মুখ খোলেন টমাস হল। কিন্তু প্রলুব্ধ করার সরঞ্জাম হিসেবে লিপস্টিক ব্যবহারের ধারণাটি বারবার ঘুরেফিরে এসেছে। লিপস্টিক ব্যবহার করে পুরুষকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে প্ররোচিত করলে কোনো নারীর বিরুদ্ধে ডাইনিতন্ত্র প্রয়োগের অভিযোগ আনা যেতে পারে। কোনো ধর্মযাজক নয় বরং ১৭৭০ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সংসদ এমন আইন প্রণয়ন করে। ডেটিং বা ভাব বিনিময়কে বিবাহের পথে পরিচালিত করতে প্রসাধনীর আশ্রয় নেওয়া হলে পরিণামে সে বিয়ে বাতিল করা হতে পারে। এমন আইন করা হয় পেনসিলভানিয়ায়। এমনকি ১৯৯৬-এ মালয়েশিয়ার সরকার কুয়ালালামপুরে লিপস্টিকের অতিরিক্ত প্রয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এতে বলা হয় যে, এ কর্মের ফলে অবৈধ যৌনতার পথে ধাবিত হওয়ার পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে।
কড়া প্রসাধনী
ফরাসি বিপ্লবের সময়ে দরবারের নারীরা কড়া প্রসাধনী ব্যবহার করত। তাদের চেহারা 'নকশা আঁকা চিনামাটির পাত্রে'র রূপ নিত। অন্যদিকে সেকালের নগরবধূরা প্রসাধন প্রয়োগের বেলায় যত দূর সম্ভব স্বাভাবিকতা বজায় রাখার চেষ্টায়ই করত। এদিকে লন্ডনে 'সান্ধ্যরমণীকুল' ঠোঁট রাঙাতে কার্পণ্য করত না। স্যার হেনরি বিউমন্ট ইংরেজ ললনার ঠোঁটের প্রশংসা করতে গিয়ে প্রাণবন্ত লালিমার উল্লেখ করে। লালিমার এ ছোপ বিধিদত্ত নয়, অর্জন করতে হতো। ব্র্যান্ডি দিয়ে ঠোঁট প্রক্ষালনসহ গোলাপের রং এবং নানাবিধ উপাদান প্রয়োগের দরকার হতো। ১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, ফরাসি নারীরা বছরে প্রায় ২০ লাখ পাত্র রুজ মাখত।
থিতিয়ে যাওয়ার দিনগুলো
রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন জেঁকে বসার দিনগুলোতে ওষ্ঠ রঞ্জনে প্রকাশ্য ভাটার টান লাগে। উনিশ শতকের বেশির ভাগ সময়জুড়েই প্রসাধনীর কড়া ব্যবহার সমাজ মেনে নেয়নি। ওষ্ঠ রঞ্জনপ্রক্রিয়ার ওপর প্রকাশ্য বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেওয়া হলো। কিন্তু অন্দরমহলে মহিলাদের সৌন্দর্যচর্চার ধারাবাহিকতায় এর গুরুত্ব বজায়ই রইল। ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে অভিজাত শ্রেণি বা সুবিধাভোগী শ্রেণির হাতে গোনা কিছু পরিবার প্যারিস থেকে গেরলাইনের তৈরি ঠোঁট রঞ্জক মলম বা পমেট কেনার সুবিধা পেত। ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে গেরলাইন প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সফল ওষ্ঠরঞ্জক বিপণন করে। জাম্বুরাজাতীয় ফলের নির্যাসের সাথে মাখন এবং মোম মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই রঞ্জক মলম। এদিকে বিধিনিষেধে জর্জরিত ভিক্টোরিয়া শাসনাধীন নারীকুলও ঠোঁট রাঙাবার নতুন পথ পেয়ে যায়। গোলাপি রঙের মোড়কের কাগজ বা ক্রেপ পেপার ঠোঁটে ঘষে অধরদ্বয়কে রাঙিয়ে তোলে তারা।
ওষ্ঠ রঞ্জন নিয়ে বাদানুবাদ চলার মধ্যেই প্রসাধন নির্মাণ এবং বিতরণ তৎপরতাও বাড়তে থাকে। রঞ্জনপ্রক্রিয়ার বিরোধিতাকারীদের দুটো দল ছিল। একদল নারীস্বাস্থ্যের কথা ভেবে রঞ্জকে ব্যবহৃত সিসা বা এই জাতীয় উপাদানের স্বাস্থ্যহানিকর দিকের ওপর জোর দিত। এসব ঠোঁটের নরম ত্বকের প্রকৃতি বদলে দিত। ঠোঁট খরখরে হয়ে যেত। চুমো দেওয়ার পর অনেক শিশুই সে রকম নারীর উদ্দেশে বলে উঠত, তোমার ঠোঁট খুব রুক্ষ, কাঁটার মতো মনে খোঁচা দিচ্ছে! অন্য দল মনে করত, এভাবে রঞ্জক ব্যবহার করে নারী তার সম্পর্কে ভুল ভাবমূর্তিই কেবল তুলে ধরে।
পরিবর্তনের হাওয়া
১৮৬০-এর দশকে এসে প্রসাধন এবং ঠোঁট রাঙানো নিয়ে সাবেক ভাবনাগুলোর চিরবিদায় ঘটে। এ সময়ে জার্মান কিশোরী চার্লেস মেয়ার চালু করেন নাটকের কাজে ব্যবহার যোগ্য প্রসাধন, ঠোঁটের ক্রেয়ন। এ ছাড়া ফরাসিরা ঠোঁটরঞ্জক রাখার জন্য প্রসাধনকক্ষে যে তাক বসানোর কথা বলছিল, তা-ও ব্যাপকভাবে গ্রহণ করা হতে থাকে। এ আহ্বান জানানো হয়েছিল ১৮৩৯-এ প্রকাশিত 'দ্য টয়লেট: এ ড্রেসিং টেবিল কম্প্যানিয়ন' নামের বইতে। ঠোঁটকে রাঙিয়ে তুলতে যাদের দ্বিধা ছিল, তারা এবার নীরবে সব সংশয়ের ইতি টানলেন।
১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে বিপুল পরিমাণে প্রসাধনসামগ্রীর তালিকা প্রকাশ করে সিয়ার্স রোবুক। এতে চিবুক এবং ঠোঁট রাঙানোর উপাদানের বিবরণ দিয়ে বলা হয়, এগুলো মোটেও ক্ষতিকারক নয়। সে সময় উপাদানের দাম ছিল ৫০ সেন্ট। চলতি বছরের হিসাবে এর দাম ১৮.৫৪ ডলার দাঁড়াবে বলেই জানাল ইন্টারনেট। এ হিসাবে বলা হয়েছে, ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে ১ ডলারের ক্রয়ক্ষমতা ছিল চলতি বাজারদর অনুযায়ী ৩৭.০৮ ডলারের সমপরিমাণ।
ওষ্ঠ রঞ্জকের বিশ্বজয়
সব দিন সমান যায় না। বিংশ শতাব্দীর সূচনা থেকেই ঠোঁট রাঙানো বা প্রসাধনীর প্রতি উদার মনোভাব গ্রহণ করা শুরু হলো। প্রযুক্তির বিকাশ, সৃজনশীল বিপণন ধারা এবং বিজ্ঞাপনের মনোলোভা কলাকৌশলের গুণে প্রসাধনের জগৎ তুঙ্গে উঠে গেল। প্রাচীন মিসরের পর এই প্রথম প্রসাধনকে সামাজিক ও নৈতিক দিক থেকে সর্বজনীনভাবে মেনে নেওয়া হলো। ১৯০০ দশকে প্রকাশিত এক কাউন্টেসের 'সৌন্দর্য' গ্রন্থে ঠোঁট স্ট্রবেরির মতো লাল হবে বলে বর্ণনা করা হলো। তবে এ বর্ণ-বিভূতি কোনো রঞ্জক ব্যবহার করে নয়। বরং নীরোগ জীবনব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে হবে। লালিমা ফুটিয়ে তুলতে বা টসটসে করতে ঠোঁটে হালকাভাবে কামড়ানো বা এলাচির গরম আরক পানের চল ছিল। এ বইতে সেসব অভ্যাসের বিরোধিতাই করা হয়।
প্রথম মহাযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত কৃত্রিমভাবে ঠোঁট রাঙানোর বদলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তা অর্জনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হতো। ১৯০৪-এ ভোগ সাময়িকীতে ওষ্ঠে ব্যবহারের সুগন্ধির বিষয়টি তুলে ধরা হয়। দাবি করা হলো, ০.২৫ ডলার মূল্যের উপাদান ঠোঁটদ্বয়কে কেবল দেখতে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর করে তুলবে না, বরং ঠোঁটকে খসখসে হওয়ার হাত থেকেও রক্ষা করবে।
সৌন্দর্য-পণ্যের বাণিজ্য রমরমা হতে শুরু করে ১৯০০ দশকের সূচনায়। জনমনে লিপস্টিক ধীরে ধীরে নিজ আসন গেড়ে বসতে থাকে একই সাথে। জনচাহিদা মেটাতে নিজেই লিপস্টিক এবং রুজ বাজারে ছাড়েন হেলেনা রুবিনস্টাইন। প্রথম বিউটি পার্লার খুললেন এলিজাবেথ আর্ডেন। এতে দেওয়া হতে থাকে হেয়ার ড্রেসিং থেকে শুরু করে প্রসাধন পর্যন্ত নানা সৌন্দর্যসেবা। নিজ নিজ সৌন্দর্যশিল্প খাতে এদের মতোই আরও অনেকেই নেতৃত্ব দেওয়ার পর্যায়ে চলে যায়। সৌন্দর্যের আদব-লেহাজ বা শিষ্টাচারবিষয়ক এক লেখক জানালেন যে হালকা খাবারের পর খাবার টেবিলেই বসে প্রকাশ্য ঠোঁটে রং বোলানো যাবে। তবে ভোজসভায় এটি গ্রহণীয় হবে না। এ সময়ে নারীদের হাতব্যাগে জায়গা করে নেওয়ার উপযোগী ওষ্ঠ রাঙানোর উপাদান, ভ্রু আঁকার পেন্সিল, পাউডার পাফসহ প্রসাধন উপকরণ থাকত।
১৯০০ থেকে ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে প্রসাধন পণ্যের বিক্রি ১০০ ভাগ বৃদ্ধি পায়। এভরিবডিজ ম্যাগাজিন জানায়, ১৯১৫ সালে এক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই দেড় কোটি ডলার মূল্যের প্রসাধন উপকরণ বিক্রি হয়েছে। কোনো কোনো প্রসাধনী উপকরণে বিষাক্ত উপাদান থাকত। তারপরও বিক্রির কমতি ছিল না। এর মধ্যে লিপস্টিকেই সবচেয়ে বেশি সন্দেহজনক উপাদান থাকত। এভরিবডিজ সাময়িকী আরও জানায়, এসবের নির্মাতা ছিল পুরুষ। নারী খদ্দেরদের কাছে বিষাক্ত পণ্য বিক্রি করার এবং তাদের ধোঁকা দেওয়া বন্ধের কোনো আইন তখনো ছিল না। মার্কিন কংগ্রেস ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ফেডারেল খাদ্য, ওষুধ এবং প্রসাধন বিধি অনুমোদন করে। উল্লেখযোগ্য এ আইনে পণ্যের নিরাপত্তা ও মান নিশ্চিত করার বিষয় উল্লেখ করা হয়।
চলচ্চিত্রে কুশীলবদের ব্যবহারোপযোগী প্রসাধনী ১৯১৪-এ প্রথম তৈরি করে ম্যাক্স ফ্যাক্টর। বলা হয়, এই প্রসাধনী দিয়ে লিপস্টিকের বিরুদ্ধে মার্কিনদের আগের ধারণা বদলে দিতে সহায়তা করে অভিনেত্রীরা। ১৯২৮-এ ম্যাক্স ফ্যাক্টরই তৈরি করে লিপ গ্লস। এটি বানানো হয়েছিল চলচ্চিত্রের অভিনেত্রীদের লক্ষ্য রেখে। তবে লিপস্টিকে ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখার জন্য ঠোঁট জিব দিয়ে হালকাভাবে চাটার বা ভেজানোর দরকার পড়ত। লিপ গ্লস আসার পর সে তাগিদ আর রইল না।
১৯২৩-এ এসে উদ্ভাবনী পন্থায় একই বাক্সে বন্দী করা হলো রুজ, পাউডার ও লিপস্টিককে। আর এসবই করা হলো অল্প পরিসরে। ফলে ক্রেতাদের টানা গেল। ক্রেতাকে অধিক হারে টানা মানেই হলো উৎপাদনের খরচা কমে যাওয়া। একই সাথে দামও কমল প্রসাধনীর। দাম কমার পেছনে আরেকটা কারণ হলো, এ সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চেইন শপের আবির্ভাব ঘটে। লিপস্টিক ব্যবহারকে কেবল ভালো বলেই মেনে নেওয়াই হলো না; বরং জাঁকালো গণপ্রথার রূপও নিল তা। ১৯২৪-এর মধ্যে, আন্দাজ করা হয়, ৫ কোটি মার্কিন ললনা লিপস্টিক ব্যবহার করছেন। বিজ্ঞাপন ব্যয়ে খাদ্য কোম্পানির পরই জায়গা করে নিল প্রসাধন নির্মাতারা।
১৯২০ দশকের মাঝামাঝি বাজারে এল অমোচনীয় লিপস্টিক। প্যারিসের কোম্পানি লেসকোন্দিউ 'তুসি' নামে অনপনেয় লিপস্টিক ছাড়ল। এতে আরও যোগ করা হলো খোশবু। ইংল্যান্ড এ পদ্ধতির সাথে তাল মেলাতে চেষ্টা করল। লন্ডনভিত্তিক প্রাইমরোজ হাউস 'যথার্থ অনপেনেয়' লিপস্টিকের বিজ্ঞাপন দিল। কিন্তু সত্যিকার অমোচনীয় লিপিস্টিক ১৯৪০-এর আগে বাজারে আসেনি। এখানেও ট্রু-কালার নামে লিপস্টিক ছেড়ে বাজার মাত করল ম্যাক্স ফ্যাক্টর। এটি কেবল দীর্ঘস্থায়ীই নয়, বরং লাগানোর পর ঠোঁট চুলকায় না। রংও বদলায় না। থাকেও দীর্ঘ সময়।
১৯২৯-এ ম্যাক্স ফ্যাক্টর নিয়ে এল লিপ ব্রাশ। জরিপের ভিত্তিতে কোম্পানি জানতে পেল যে ফ্যাশন-সচেতন মার্কিন নারীর অন্তত দুটি লিপস্টিক রয়েছে। একটি দিনের জন্য, অন্যটি সন্ধ্যার পরে ব্যবহারের জন্য। ১৯৩০-এ এক বিজ্ঞাপনী সংস্থা হিসাব দিল, মার্কিন নারীরা প্রতিবছর তিন হাজার মাইল লিপস্টিক ব্যবহার করে। ১৯৩৩-এ ভোগ বলল, লিপস্টিক হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রসাধন উপকরণ।
ক্যাস্টার অয়েল এবং পেট্রলজাত জেলি দুর্লভ হয়ে ওঠায় লিপস্টিক উৎপাদনের সামান্য হলেও বিপত্তি ঘটাল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। এ সময়ে রেভলনের রসায়নবিদ শুনতে পেল টেনিসাসের একটি গুদামভর্তি ক্যাস্টর অয়েল রয়েছে। পুরো গুদামের সব তেল কেনার আগে ৪০টি গ্যালনের প্রতিটি খুলে চেখে দেখলেন তিনি। এতে ফিরতি পথের পুরো সময় তাকে টয়লেটেই কাটাতে হয়েছে।
যুদ্ধের সময় নৈতিক মনোবল ধরে রাখার কাজে লিপস্টিকের গুরুত্বের কথা বুঝতে পারে রেভলন এবং ফ্যাশন সাময়িকী ভোগ। যুদ্ধের প্রয়োজনকে সামনে রেখে ধাতব নল বাদ দিতে হলো। এর বদলে লিপস্টিকের জন্য প্রথমে ব্যবহার করা হলো প্লাস্টিক, পরে কাগজ। বাকি কোম্পানিও একই পথে হাঁটা শুরু করল। এদিকে জার্মানিতে প্রসাধনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন হিটলার। সাথে সাথে জার্মান ললনারা কাজে যোগ দিতে অস্বীকার করল।
মহাযুদ্ধের ঘনঘটার মধ্যে লিপস্টিকের প্রতি ললানাকুলের টান আরও লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। নারীর আকর্ষণকে পুঁজি করে লন্ডনের গালা ১৯৪৮-এ চালু করে লিপ লাইন। ফুরিয়ে গেলে আবার ভর্তি করার ব্যবস্থা ছিল নানা বর্ণের এই লিপ লাইন। রিমেল নিয়ে এল লিপ প্যালেট। এতে দেওয়া হতো আয়না ও ব্রাশ। গায়া নিয়ে এল প্রচলিত লিপস্টিকের চেয়েও দ্বিগুণ বড় গ্র্যান্ডি নামের লিপস্টিক। এলিজাবেথ অর্ডেনের সারপ্রাইজ লিপস্টিক আটলান্টিকের উভয় পারের নারীদের মন—সত্যিকার অর্থে ঠোঁট জয় করল।
চলছে চলবে
১৯৫৭ সালে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গামী তরুণীদের ওপর এক জরিপে উঠে আসে যে ৯৯.৭ শতাংশই লিপস্টিক ব্যবহার করছে। এর আগে ১৯৫২ সালে রেভলন ফায়ার অ্যান্ড আইস নামে বিজ্ঞাপনী অভিযান শুরু করে। এটাই ছিল সে যুগে প্রসাধনীর সর্ববৃহৎ বিজ্ঞাপনী অভিযান। ১৯৫৮-এ টাইম সাময়িকীতে ম্যাক্স ফ্যাক্টর বলল, খামারে কাজ না করলে লিপস্টিকহীন যেকোনো নারী জনসমক্ষে নিজেকে বিবস্ত্র হিসেবে অনুভব করে।
লিপস্টিক না দেওয়া মানে সমাজচ্যুত হওয়া—এমন এক ধারণারও সৃষ্টি হলো। এদিকে মনাকোর রাজপুত্র রাইনিয়েরারে সাথে হলিউডের গ্রেস ক্যালি বা রাজপুত্র আলি খানের সাথে রিটা হেওয়ার্থের মতো রাজকীয় বিয়ে প্রসাধন চর্চার প্রতি রমণীকুলের ঝোঁক আরও বাড়িয়ে তুলল। ১৯৫৩ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেকের সময় ইউরোপ এবং আমেরিকা মহাদেশের নারীদের কাছে রানির অভিষেকে গোলাপি রং জনপ্রিয়তা পেল। সময়োপযোগী লিপস্টিক তৈরির জন্য প্রসাধনী কোম্পানিগুলো ফ্যাশন ডিজাইনারদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখল। এ পালে জোর হাওয়া দিল ভোগ সাময়িকী। প্রতি ঋতুর উপযোগী রং তুলে ধরে সাময়িকীটি এর উপযুক্ত রং মিলিয়ে প্রসাধনী তৈরির জন্য কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানাতে থাকল।
এ দশকের মাঝামাঝি এসে পাশার দান আবার উল্টে গেল। চলচ্চিত্রের অভিনেত্রীরা পাশের বাসার মেয়েটির মতো সহজ-সরল এবং সাদামাটা হতে থাকল। যতটা সম্ভব স্বাভাবিক হতে চাইল। বেছে নিতে শুরু করল প্রায় পাণ্ডুর ওষ্ঠদ্বয়। ১৯৫৭-এর কুইনস সাময়িকীতে জোয়ান প্রাইস নির্দেশনা দিলেন, লিপস্টিককে কড়াভাবে ফুটিয়ে তোলা যাবে না।
এক বছরের মাথায় ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ফের ফিরে এল উজ্জ্বল লিপস্টিক। ভোগও বলল, লিপস্টিক হতে হবে যথার্থ লাল, কমলা, গোলাপি-কমলা। ম্যাক্স ফ্যাক্টর তৈরি করা শুরু করল গোলাপি ও কমলার উজ্জ্বল নজরকাড়া রঙের লিপস্টিক। কমলাও নয়, গোলাপিও নয়; ম্যাক্স ফ্যাক্টরের অতি উজ্জ্বল বর্ণবিভূতির মোহে বন্দী হয়ে গেল গোটা প্যারিস। হেলেনা রুবিস্টাইন আনল সব সময়ে ব্যবহারযোগ্য লিপস্টিক বেড অব রোজেজ। গালা তার প্রসাধনীতে টাইটানিয়াম ব্যবহার শুরু করে। মানুষ সত্যিই চকচকে এবং সাদাটে ঠোঁটের ভক্ত বনে যায়। এতে একটি নারীসুলভ স্পর্শ ছিল। এই ধারা পরবর্তী দশককেও মোহিত করে রাখে।
১৯৬০-এর দশকে লিপস্টিকের প্রতি আরও খোলামেলা মনোভাব গড়ে ওঠে। ১৯৫০-এর দশকের চিত্রকলার স্টাইলে ওষ্ঠ রাঙানোর নতুন ধারার সৃষ্টি হয়। এ ধারায় উদ্দীপ্ত 'তারুণ্যের-কম্পন'বা 'ইউথকোয়াক' বয়ে যায় লন্ডনে। ফ্যাশনজগতের অন্যতম ব্যক্তিত্ব মেরি কোয়ান্ট মিনি স্কার্ট প্রবর্তন করেন। উঁচু বুট এবং তারুণ্যের বর্ণচ্ছটায় ভরপুর প্রসাধনীও নিয়ে আসেন তিনি। ১৯৬৬ সালে এসে গালার জন্য নিজস্ব প্রসাধনী ধারাকে চালু করেন তিনি। নিজ স্মৃতিকথায় তিনি বলেন, ফ্যাশনের পুরোনো কালের প্রসাধনের দিন ফুরিয়ে গেছে। লিপস্টিককে হতে হবে সাবটেল এবং গ্লোসি।
'নিজের মতো চলো' ফ্যাশন ধারাবাহিকতার পথ ধরে লিপস্টিক লাগানোর প্রবণতায় বিপ্লব ঘটে যায়। সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত ব্রিজিত বার্দ্রো, জিন শ্রিম্পটন ও টুইগি নিজেদের তুলে ধরলেন নাটকীয়ভাবে লাগানো লিপস্টিকের মাধ্যমে। ১৯৬৪-এ জেমস বন্ডের গোল্ডফিঙ্গার চলচ্চিত্রের প্রভাবে লিপস্টিকে ধাতব ছোঁয়া লাগল। এ সময় সোনা, ব্রোঞ্জ এবং রুপাভিত্তিক লিপস্টিক বাজারে ছাড়ল হেলেনা রুবিনস্টাইন। এদিকে ইংল্যান্ডে এ সময় অভ্যুদয় ঘটল চেলসি কন্যাদের। ফ্যাশনজগৎকে সাহসিক প্রান্তে ঠেলে দিল তারা। ঐতিহ্যগত শৈলীর সীমানাকে অতিক্রমও করতে দ্বিধা ছিল না তাদের। তাদের ঠোঁটে উঠল সাদা লিপস্টিক। লিপস্টিক নিয়ে এ পর্যন্ত সব ভাবনা এবং চিন্তাকে দূরে ঠেলে দিল তারা।
১৯৭০-এর পুরো দশক ধরেই এ চল বজায় থাকল। চিত্রাঙ্কনের নানা প্রযুক্তিকে পরীক্ষা করে দেখতে দ্বিধা করল না নারীরা। চোখের রঙের সাথে বা পোশাকের সাথে মিল রেখে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাল তারা। রেভলন সময়ের সাথে পাল্লা দিতেই আনল সাদাটে ধরনের লিপস্টিক। ১৭ শেডে ভরপুর এসব লিপস্টিকের স্ট্রং অব পালর্স, স্যামন আইস এবং জিনজার গ্লেয়ের মতো নামকরণ করা হলো। ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে কালো লিপস্টিকও জনপ্রিয়তা পায়। নৈরাজ্যবাদে বিশ্বাসী পাংক আন্দোলন এই লিপস্টিককে জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
আকর্ষণীয় রমণীর সেরা প্রশংসা হিসেবে সুশ্রী এবং সুন্দরী শব্দদ্বয়ের বদলে ব্যবহৃত হবে উত্তেজনাপূর্ণ। হারপারস বাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন কথাই বলেন ফ্যাশন সাংবাদিক ইউজেনিয়া শেফার্ড। তিনি আরও বলেন, উত্তেজনা মানে আরও হবে আন্দোলন, গোলযোগ, অশান্তি এবং আজকের চেতনা।
১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে লিপস্টিক নিয়ে বিপরীতধর্মী আন্দোলন চলে। প্রথমে সাহসী প্রসাধনী এবং টসটসে ওষ্ঠের প্রকাশ ঘটানোর দিকে মন দেওয়া হয়। কিন্তু দশকের শেষে ঠোঁট রাঙানোর ধারাবাহিকতা তার বৃত্ত পূর্ণ করে। আবার ফিরে আসে স্বাভাবিকতার দিকে।
১৯৯০-এর দশকের এগিয়ে চলার মধ্য দিয়ে নীল, রুপালি, সোনালি ও হলুদ লিপস্টিকের দেখা মেলে। বাজারে আসে দীর্ঘ সময় ঠোঁটে টিকে থাকার মতো লিপস্টিক।
হারপারস বাজারের সৌন্দর্য এবং ফ্যাশন পরিচালক অ্যানেমারি আইভারসনের মনে করেন, লিপস্টিক ব্যবহার নৈমিত্তিক হয়ে উঠেছে। ব্যবহারেও এসেছে নমনীয়তা। একক ধারা অনুসরণের যুগ ফুরিয়ে গেছে। লিপস্টিক লাগানোর ক্ষেত্রে এসেছে বৈচিত্র্য। নারী যা পছন্দ করবে, তা-ই পরবে। নতুন সহস্রাব্দ উন্মোচিত হওয়ার সাথে সাথে লিপস্টিক এমনই এক যুগে চলে এসেছে। এখানে নিখুঁত বলে কোনো কিছু নেই বা এমন কোনো সংজ্ঞা নেই। কেবল ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ এবং নিজস্বশৈলী এবং স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে, বাকি সব গৌণ। পশ্চিমের লিপস্টিকের নানা বির্বতনের সঙ্গী হয়েছে এ অঞ্চলের নারীরাও। বিংশশতক ও একবিংশে তো লিপস্টিক নারীর সাজের অতি অপরিহার্য অনুষঙ্গই।