এখনও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পান না ৩৪% গ্রাহক: সমীক্ষা
দেশের শতভাগ এলাকা বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসলেও এখনো ৩৪ শতাংশ গ্রাহক নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পান না। এছাড়া, সংযোগ নিতে ঘুষ দেওয়া, উচ্চ বিলসহ বিদুৎ সেবা নিয়ে অসন্তুষ্টি রয়েছে গ্রাহকদের মধ্যে।
গুণগত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে পাওয়ার সেলের পরিচালিত 'কাস্টমার স্যাটিস্ফ্যাকশন সার্ভে উইথ রেকমেন্ডেশন অফ কোয়ালিটি পাওয়ার সাপ্লাই ইনক্লুডিং এসএআইডিআই/এসএআইএসআই'– শীর্ষক গ্রাহক সন্তুষ্টি জরিপে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে উপস্থাপিত জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ফলাফলে বলা হয়, নতুন বিদ্যুৎ-সংযোগ পেতে সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রায় ৮ শতাংশ গ্রাহক। তবে ৯০ শতাংশ গ্রাহক অতিরিক্ত টাকা ছাড়াই সংযোগ পেয়েছেন।
জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে অনলাইনের মাধ্যমে বা মোবাইলে সেবার ব্যবহার বাড়ছে গ্রাহকদের মধ্যে। এ প্রক্রিয়ায় বিল পরিশোধে ৯৯ শতাংশ গ্রাহক সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
এছাড়া, বিদ্যুৎ সেবা নিয়ে বিতরণ সংস্থার কাছে ফোনে বা সরাসরি গিয়ে নিয়মিত অভিযোগ করেন গ্রাহকেরা। এরমধ্যে প্রায় ৬৪ শতাংশ গ্রাহক অভিযোগ করেন বিদ্যুৎবিভ্রাট নিয়ে। আর ৩৪ শতাংশ গ্রাহক লোডশেডিং নিয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সমাধান পাওয়ার ক্ষেত্রে ৮৪ শতাংশ গ্রাহক সন্তুষ্ট।
এতে বলা হয়, আগে দিনে ১০-১২ বার লোডশেডিং হলেও এখন ১-২ বারে নেমে এসেছে। অভিযোগ কেন্দ্র আরও বেশি আধুনিক করা উচিত। ২৪ ঘণ্টা সেবার ব্যবস্থা করতে হবে। পোস্ট পেইড মিটার গ্রাহকদের দ্রুত প্রিপেইড মিটার সরবরাহ করা দরকার।
জরিপ উপস্থাপনের পর বিদ্যুৎ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, "জরিপ পরিচালনার সময়টাতে লোডশেডিং কম ছিল। জুলাই-আগস্টে লোডশেডিং বেশি হয়েছে। এটা হয়েছে মূলত জ্বালানিসংকটের কারণে। গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চাওয়ার দাবি ন্যায্য। এটি নিশ্চিত করা হবে।"
পাওয়ার সেলের ব্যবস্থাপনায় সমীক্ষা কার্যক্রমের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মাইক্রো ইন্ডাস্ট্রিস ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড সার্ভিসেস (এমআইডিএএস), বাংলাদেশ জরিপটি পরিচালনা করে।
১৫,২৪৫ গ্রাহকের ওপর জরিপটি করা হয়েছে।
জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৯১ শতাংশ গ্রাহক আবাসিক খাতের। বাকিরা শিল্প, বাণিজ্যিক ও কৃষিসেচ খাতের। এরমধ্যে দেশের ছয় বিতরণ সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি), নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি পিএলসি (নেসকো) ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) গ্রাহক আছেন।
চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, রংপুর, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় গত মার্চ থেকে মে পর্যন্ত সময়ে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
সমীক্ষায় গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে আধুনিক ও ওয়ান স্টপ ডিজিটাল সার্ভিস সেন্টার করা, লজিস্টিক সাপোর্ট বৃদ্ধি, অনলাইন বিলিং সিস্টেম, প্রিপেইড মিটারের সংখ্যা বাড়ানো, দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন লোকবল বাড়ানো, তদারকি সভা নিয়মিত করা, মেরামত কার্যক্রম সম্পর্কে গ্রাহকদের পূর্বেই অবহিত করাসহ নানান বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়।