ভোক্তা অধিদপ্তরের সভায় মাংস ব্যবসায়ীদের হট্টগোল
একেক জায়গায় একেক দামে গরুর মাংস বিক্রির বিষয়টি সমন্বয়ের জন্য মাংস ব্যবসায়ীদের নিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তর আয়োজিত এক সভায় মাংস বিক্রেতাদের দুই গ্রুপের মধ্যে হট্টগোল বাধে। এ সময় এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে দোষারোপ করে।
ঢাকার বাজারে কোথাও কোথাও কেজিপ্রতি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। অনেকে আবার ৭০০ টাকায়ও বিক্রি করছেন। তাতে ক্রেতারা পড়েছেন বিড়ম্বনায়। বাজারে একেক জায়গায় একেক দামে মাংস বিক্রির বিষয়টি সমন্বয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে নিয়ে মতবিনিময় সভায় বসে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেখানে মাংস ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় হট্টগোল করেছে।
সভার সূত্রে জানা গেছে, গরুর মাংসের দাম কেজিপ্রতি ৬০০ টাকায় বিক্রি করার ফলে গোটা কয়েক ব্যবসায়ীর হাতে বাজার চলে যাচ্ছে। এতে করে পাড়া-মহল্লার অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা করতে পারছেন না। এমন অভিযোগ তুলে মাংস ব্যবসায়ীদের একাংশ সভায় একাধিকবার উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করে। যে সব ব্যবসায়ীরা কমে মাংস বিক্রি করছে তাদের কটাক্ষ করতে থাকে বেশি দামে বিক্রি করা ব্যবসায়ীরা।
শেষ পর্যন্ত ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সভায় সিদ্ধান্ত দেন-আগামী বুধবার বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ) সহ ব্যবসায়ীদের সকল পক্ষ বসে গরুর মাংসের দাম কত হওয়া উচিত সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এরপর সভার সিদ্ধান্ত আগামী রোববারের মধ্যে ভোক্তা অধিদপ্তরে প্রতিবেদন আকারে জমা দেবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) গরুর মাংসের বাজার যাচাই করবে।
সভায় ঢাকার একাংশের মাংস ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগে যারা প্রতিদিন ৫০০ কেজি মাংস বিক্রি করতো, গত কয়েক মাসে তাদের বেচাকেনা ১০০ কেজিতে নেমে আসে। আবার যখন ৭০০ টাকার নিচে নেমেছে, তখন আবার বেচাকেনা ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এছাড়া দেশে লাইভ ওয়েট দিয়ে গরু বিক্রির সংস্কৃতি এখানে এখনো গড়ে ওঠেনি। ফলে অনেক ব্যবসায়ী গরু কিনতেই ঠকে যায়। যে চাপ ক্রেতার ওপরে পড়ে বলে অভিমত দেন অনেকে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, 'একটা জিনিস মানতেই হবে একটা সময় মানুষ যে পরিমাণে গরুর মাংস খেত, দাম বৃদ্ধির ফলে তা কমে এসেছিল। অনেকে মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। দাম কমার ফলে অনেকে এখন মাংস খেতে পারছে। সুতরাং ব্যবসায়ীরা লাভ একটু কম করে হলেও ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখলে ভোক্তা ও ব্যবসায়ী সবাই উপকারভোগী হবে।'
সভায় বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল ইসলাম বলেন, বাজারে মাংসের দুইটা দোকান খোলা থাকলে ২০টা দোকান বন্ধ রয়েছে। ছোট ছোট পান দোকানেও মাংস বিক্রি হতো। সে সব বন্ধ হয়ে গেছে। কোরবানির ধরনে মাংস বিক্রি করে অনেকে হয়তো লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু অনেকে পারছেন না। সবাই যাতে ব্যবসা করতে পারে, আবার ভোক্তারাও কমে পেতে পারে তেমন একটা জায়গায় দামটা নির্ধারণ হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
বিটিটিসি'র উপপরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, কে কোন গ্রেডের মাংস বিক্রি করছে তার সমীক্ষা হওয়া উচিত। এবং সেই অনুসারে দাম নির্ধারণ হতে হবে। কারণ মাংসের মান সবক্ষেত্রে সমান না। তবে এটা মাথায় থাকা উচিত দিনশেষে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে না থাকলে অনেকে মাংস কিনতে চাইবেন না।