৭৮ বছর বয়সে মারা গেলেন 'গুপী গাইন' খ্যাত সংগীতশিল্পী অনুপ ঘোষাল
বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী ও সুরকার অনুপ ঘোষাল ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল (শুক্রবার) ভারতীয় সময় দুপুর দেড়টায় তিনি দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বহুদিন ধরেই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন অনুপ ঘোষাল। শেষ পর্যন্ত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন সত্যজিৎ রায়ের একাধিক সিনেমার এই সংগীতশিল্পী।
হাসপাতাল সূত্রে খবর অনুযায়ী, দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত কারনে অসুস্থ ছিলেন অনুপ ঘোষাল। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, "অনুপ ঘোষালের মৃত্যুতে সঙ্গীতজগতে অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি তার পরিবার, আত্মীয়-পরিজন অনুরাগীদের কাছে আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।" গায়ক অনুপ ঘোষাল তৃণমূল বিধায়কও ছিলেন।
মাত্র ৪ বছর বয়সে মায়ের উৎসাহে অনুপ ঘোষালের সঙ্গীতের দুনিয়ায় তালিম নেওয়া শুরু হয়। তার বয়স যখন মাত্র ১৯ বছর, তখনই তিনি সত্যজিৎ রায়ের নজরে এসেছিলেন। ১৯৬৭-তে মুক্তি পাওয়া 'গুপী গাইন বাঘা বাইন', 'দেখো রে নয়ন মেলে', 'ভূতের রাজা দিল বর', 'ও মন্ত্রী মশাই' এর মতো কালজয়ী গান তার গাওয়া।
এরপর ১৯৮০ সালে মুক্তি পাওয়া 'হীরক রাজার দেশে' সিনেমার 'মোরা দুজনায় রাজার জামাই', 'আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে', 'এসে হীরক দেশে'র মতো গানও অনুপ ঘোষালেরই গাওয়া। এজন্য জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি।
অনুপ ঘোষালের গাওয়া তপন সিনহা পরিচালিত 'সাগিনা মাহাতো' সিনেমার গান এখনও শ্রোতারা ভোলেনি। 'মাসুম' সিনেমার 'তুঝসে নারাজ নেহি জিন্দেগি' গানটি তারই গাওয়া।
শুধু বাংলা ও হিন্দি নয়, বরং একাধিক ভাষায় গান গেয়েছিলেন অনুপ ঘোষাল। ভোজপুরী অসমীয়া ভাষাতেও গায় গেয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, দেবব্রত বিশ্বাসের কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখেছিলেন অনুপ ঘোষাল। তার গাওয়া নজরুলগীতি, শ্যামাসঙ্গীতও প্রশংসিত ছিল। পড়াশোনার ক্ষেত্রে আশুতোষ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ও পিএইচডি করেন এই সংগীতশিল্পী।
জীবনের শেষ দিকে রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গীও ছিলেন অনুপ ঘোষাল। ২০১১ সালে হুগলির উত্তরপাড়া আসন থেকে প্রথমবার প্রার্থী হয়েই জয়লাভ করেন। একই বছরে নজরুল স্মৃতি পুরস্কারও লাভ করেণ তিনি।
তবে অনুপ ঘোষ তারপর আর টিকিট পাননি বা ভোটে দাড়াননি। এরপরে রাজনীতির সঙ্গে তার আর বিশেষ যোগাযোগও ছিল না।