বিদ্যুতের বকেয়া ভর্তুকি পরিশোধে আজ থেকে বন্ড ইস্যু করতে যাচ্ছে সরকার
ভর্তুকি বকেয়া থাকার কারণে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (আইপিপি) ও সার আমদানিকারকদের ব্যাংকে জমে যাওয়া বকেয়া নিষ্পত্তির জন্য আজ বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) থেকে স্পেশাল বন্ড ইস্যু করা শুরু করছে সরকার।
২০২৩ সালের জুন থেকে ব্যাংকের মোট ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দায়-দেনা পরিশোধের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় আজ থেকে পর্যায়ক্রমে ৪০টি ব্যাংককে ধাপে ধাপে বন্ড ইস্যু করবে। মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা জানান, এক্ষেত্রে বন্ডের কুপন রেট বা সুদ হার ধরা হয়েছে ৭.৭ শতাংশ, যা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত রেপো রেটের প্রায় সমান।
গত জুন পর্যন্ত সার ও বিদ্যুৎ খাতে বকেয়া ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সার আমদানিকারক ও বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর সরকারি-বেসরকারি ৪০টি ব্যাংকে দেনার পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের ব্যাংক দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর সার আমদানিকারকদের মোট ব্যাংক দেনার পরিমাণ ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের ট্রেজারি এন্ড ডেবট ম্যানেজমেন্ট অনুবিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও আইএফআইসি ব্যাংকের অনুকূলে বৃহস্পতিবার বন্ড ইস্যু করার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আশা করছি, বৃহস্পতিবার বন্ড দুটি ইস্যু করা হবে। কোনো কারণে বৃহস্পতিবার ইস্যু করা না গেলে আগামী সোমবার তা ইস্যু করা হবে।'
ওই কর্মকর্তা জানান, প্রথম দফায় আজ বৃহস্পতিবার সারের বকেয়া ভর্তুকি বাবদ ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বন্ড রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক এবং বেসরকারি খাতের আইএফআইসি ব্যাংকের অনুকূলে ইস্যু করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের নামে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা এবং আইএফআইসি ব্যাংকের অনুকূলে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করা হবে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ব্যংকগুলো এসব বন্ডের বিপরীতে নির্দিষ্ট রেপো হারে সুদ পাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকে নিজেদের ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিএসআর) ও স্ট্যাটুটরি লিকুইডিটি রেশিও (এসএলআর) সংরক্ষণ করতে পারবে। মেয়াদ শেষে সুদসহ অর্থ পরিশোধ করে বন্ডগুলো ফেরত নেবে সরকার। তবে একেক ব্যাংকের বন্ডের মেয়াদ আলাদা আলাদা করা হচ্ছে।
অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, সরকার সাধারণত ২০ বছর মেয়াদি বন্ড ইস্যু করে। কিন্তু ভর্তুকির দেনা মেটাতে স্পেশাল বন্ড ইস্যু করা হচ্ছে, যার মেয়াদ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ঠিক করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে একেক ব্যাংকের অনুকূলে একেক মেয়াদের বন্ড ইস্যু করা হবে। বন্ডগুলোর মেয়াদ ৮ বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে মোট ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল ৪২ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। গত বছর কয়েক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর এ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। ২০২২ সালে বিদ্যুৎ খাতে প্রতি মাসে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি ভর্তুকির প্রয়োজন হতো, এখন তা কমে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকায় নেমেছে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বিদ্যুতের ভর্তুকির পাওনা পরিশোধ করেছে সরকার।
এ উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও সতর্কতার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা
সাবেক অর্থসচিব ড. মোহাম্মদ তারেক টিবিএসকে বলেন, বন্ড ছেড়ে ভর্তুকির দেনা পরিশোধের এই উদ্যোগ আইপিপি ও ব্যাংকের জন্য কিছুটা ভালো হলেও সরকারের ফিসক্যাল ম্যানেজমেন্টের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে। কারণ সরকারকে এই অর্থ সুদসহ পরিশোধ করতে হবে।
'সরকার ব্যাংকগুলোকে এই অর্থ কীভাবে পরিশোধ করবে? এক্ষেত্রে টাকা ছাপানো ছাড়া আর কোনো উপায় আমি দেখছি না। আর টাকা ছাপিয়ে পরিশোধ করা হলে মূল্যস্ফীতির ওপর তার প্রভাব পড়বে,' বলেন তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ উদ্যোগকে 'খুবই ভালো' বলে উল্লেখ করেন বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, 'এতে সরকারের তাৎক্ষণিক অর্থ ঘাটতি কেটে যাবে। ব্যাংক ও আইপিপিগুলোও কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে।'
তবে স্পেশাল বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে আইপিপিগুলোর পুরো বকেয়া পরিশোধ না করে কেবল ব্যাংকের দায় সমন্বয়ের উদ্যোগ যৌক্তিক হবে না বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন (বিআইপিপিএ)-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট ইমরান করিম। তিনি বলেন, বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে আইপিপিগুলোর সম্পূর্ণ বকেয়া বিল পরিশোধ করা হলে ভালো হতো।