বিরোধের জেরে ওমান উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করল ইরান
বিরোধের জেরে তুরস্কগামী ইরাকি অপরিশোধিত তেল বহনকারী একটি মার্কিন ট্যাংকার জব্দ করেছে ইরান। ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, আদালতের আদেশের বরাত দিয়ে ওমান উপসাগরে অভিযান চালিয়েছে ইরানি নৌবাহিনী।
গত বছর ইরানের একটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল (বৃহস্পতিবার) মার্কিন ওই তেল ট্যাংকারটি জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
ইরানের বার্তা সংস্থা ফার্স জানায়, গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইরানের তেল চুরির অভিযোগের পর ইরানের নৌবাহিনী সেন্ট নিকোলাস ট্যাংকারটি জব্দ করেছে। জাহাজটিতে ১৮ জন ফিলিপিনো নাগরিক এবং একজন গ্রীক নাগরিকসহ ১৯ জন ক্রু ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তুর্কি তেল শোধনাগার তুপ্রাস জাহাজটি ভাড়া করেছিল।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের এমন পদক্ষেপের নিন্দা করেছে। এটিকে 'অবৈধ জব্দ' হিসাবে চিহ্নিত জাহাজ এবং ক্রুদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত হুথিদের লোহিত সাগরে জাহাজে ধারাবাহিক হামলার মধ্যে এ ঘটনা ঘটল। হুথি বিদ্রোহীরা দাবি, গাজায় ইসরায়েলের হামলার জবাবে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতেই এসব হামলা চালানো হয়েছে।
লোহিত সাগরে জাহাজের ওপর ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের সাম্প্রতিক হামলা ওই এলাকায় টহলরত মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক হামলার উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে গত বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে হুথি গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে ভোটাভুটির পর এই ঝুঁকি আরও বেড়েছে।
তবে হুথিরা আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে বাব আল-মান্দাব প্রণালিতে অবস্থান করলেও গতকালের ঘটনাটি ওমান ও ইরানের মধ্যবর্তী হরমুজ প্রণালির কাছাকাছি ঘটেছে।
ব্রিটিশ সামুদ্রিক নিরাপত্তাবিষয়ক সংস্থা 'অ্যামব্রে' জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে ওমানের সোহার থেকে প্রায় ৫০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের পতাকাবাহী সেন্ট নিকোলাসে বেশ কয়েকজন সশস্ত্র ব্যক্তি আরোহণ করে জাহাজটি জব্দ করে। পরে ইরানের বন্দর-ই-জাস্কের দিকে রওনা দেয় তারা।
বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের চালান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান 'ট্যাংকার ট্র্যাকারস' জানিয়েছে, ঘটনায় জড়িত ট্যাঙ্কারটি পূর্বে 'সুয়েজ রাজন' নামে পরিচিত ছিল, যেটি ইরাকি তেল বহন করছিল।
অ্যামব্রে জানিয়েছে, সেন্ট নিকোলাস নামের জাহাজটির আইনি জটিলতার ইতিহাস রয়েছে। ট্যাংকারটি এর আগে নিষেধাজ্ঞাযুক্ত ইরানি তেল পরিবহনের জন্য মামলা এবং জরিমানার মুখোমুখি হয়েছিল। যার ফলে মার্কিন কর্তৃপক্ষ ১০ লাখ ব্যারেল তেল বাজেয়াপ্ত করেছিল।
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ইউকে মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস (ইউকেএমটিও) জানিয়েছে, ঘটনাটি ওমান ও ইরানের মধ্যবর্তী জলসীমায় ঘটেছে। জাহাজের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপক জাহাজের ক্যাপ্টেনের পাশাপাশি 'ফোনে অজানা কণ্ঠস্বর' শুনেছেন।
এছাড়া অ্যামব্রে জানিয়েছে, জাহাজে ওঠার সময় জড়িত ব্যক্তিরা নজরদারি (সিসি) ক্যামেরা ঢেকে রেখেছিলেন। ট্যাঙ্কারটি বন্দর-ই-জাস্কের দিকে তার গতিপথ পরিবর্তন করে এবং এর ট্র্যাকিং সিস্টেমটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ওমান উপসাগর, ওমান এবং ইরানের মধ্যে অবস্থিত জ্বালানি তেল পরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। তবে পথটি বছরের পর বছর ধরে বেশ কয়েকটি ছিনতাই এবং হামলার সাক্ষী হয়েছে, যার পেছনে প্রায়শই ইরান জড়িত থাকে বলে অভিযোগ করা হয়।
ইরানের পারমাণবিক চুক্তি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে এই অঞ্চলে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে ইরান এবং মধ্যপ্রাচ্যে সমুদ্রে টহলরত মার্কিন নৌবাহিনীর পঞ্চম নৌবহরের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।
২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইরানের তেলবাহী কার্গো জব্দ করে আসছে। অন্যদিকে ইরান তাদের সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনী ব্যবহার করে জাহাজ জব্দ করেছে, যা বিশ্বব্যাপী জাহাজ চলাচলকে হুমকির মুখে ফেলেছে।