চিকিৎসক ও রোগী সেজে পশ্চিম তীরে হাসপাতালে ইসরায়েলি অভিযান, ৩ ফিলিস্তিনি নিহত
চিকিৎসক ও রোগীর ছদ্মবেশে অধিকৃত পশ্চিম তীরের একটি হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের এ অভিযানে তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সকালে এ অভিযান চালানো হয়।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফের দাবি- নিহতদের একজন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন।
আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের এ ধরনের অভিযান আন্তর্জাতিক আইনের একটি বিধি-নিষেধের লঙ্ঘন হতে পারে।
রামাল্লাহর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকালে ইসরায়েলি সৈন্যরা পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে অবস্থিত ইবনে সিনা হাসপাতালে প্রবেশ করে তিন যুবককে গুলি করে। এতে তারা মারা যান।
মন্ত্রণালয় এ অভিযানকে একটি 'অপরাধ এবং গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরের চিকিৎসা পরিষেবার ওপর ইসরায়েল কর্তৃক সংঘটিত 'কয়েক ডজন' অপরাধগুলোর একটি বলে উল্লেখ করেছে।
এদিকে আইডিএফ বলছে, হাসপাতালটিতে 'আত্মগোপনে' থাকা সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের উদ্দেশ্য করে তারা এ অভিযান চালিয়েছে।
এক বিবৃতিতে আইডিএফ জানায়, নিহত মোহাম্মদ জালামনেহ হামাসের সদস্য। তবে তার ভাই মোহাম্মদ ও বাসিল গাজাবি 'নিরপেক্ষ' ছিলেন।
আরও জানানো হয়, জালামনেহর কাছে বন্দুক ছিল। তবে নিহতরা গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছিলেন কি না, সে বিষয়ে আইডিএফ কিছু জানায়নি।
আইডিএফের দাবি- 'জালামনেহ অদূর ভবিষ্যতে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন এবং আত্মগোপনের জায়গা হিসেবে হাসপাতালকে বেছে নিয়েছিলেন।' এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী।
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস নিশ্চিত করেছে যে জালামনেহ গোষ্ঠীটির সদস্য ছিলেন। ইসলামিক জিহাদ নামের আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মোহাম্মদ ও বাসিল গাজাবি এই গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন। বাসিল অসুস্থ ছিলেন। তিনি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালটিতে ভর্তি ছিলেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের মুখপাত্র তাওফিক আল-শোবাকি। তিনি বলেছেন, পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গত অক্টোবর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বাসিল গাজাবি।
হামাস এ ঘটনাকে 'যুদ্ধাপরাধ' হিসেবে উল্লেখ করে 'নীরবে বসে থাকবে না' বলে জানিয়েছে। ইসলামিক জিহাদও এ হামলার উপযুক্ত জবাব দেবে বলে জানিয়েছে।
হাসপাতালে সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা হামালার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। একটি ভিডিওতে কয়েকজন ইসরায়েলি সৈন্যকে হাসপাতালের বারান্দা দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়। তারা চিকিৎসক, সাধারণ মানুষ ও রোগীর ছদ্মবেশে ছিলেন। তাদের হাতে ছিল বন্দুক।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়। জবাবে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। টানা তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ২৬ হাজার ৭০০ জন নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, এই সময়ে পশ্চিম তীরে ৯৪টি শিশুসহ নিহত হয়েছে ৩৬৭ জন ফিলিস্তিনি।