জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণ: ৬ জনের সনদ স্থগিত, ৩ জন সাময়িক বরখাস্ত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ছয় শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত এবং তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকশেষে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
যেসব শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত করা হয়েছে তারা হলেন- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও জাবি ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, একই বিভাগের মুরাদ হোসেন, শাহ পরান, মোস্তফা মনোয়ার সিদ্দিকী ও মো. হাসানুজ্জামান এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সাব্বির হাসান।
মুরাদ, মোস্তফা ও সাব্বিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শাহ পরান ও হাসানুজ্জামান ছাড়া বাকিদেরকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
উপাচার্য বলেন, 'পাশাপাশি ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ ও অস্থায়ী দোকানপাট নিষিদ্ধ করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'অছাত্রদের আবাসিক হল থেকে বের হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হবে। তারা বের না হলে বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
জাবির একদল শিক্ষক-শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারসহ সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। এরপর প্রশাসন এ পদক্ষেপ নিল।
রোববার দুপুর ১২টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা।
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আনিছা পারভীন জলি বলেন, 'জনগণের টাকায় এই বিশ্ববিদ্যালয় চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আজ মানুষ ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমি লজ্জাবোধ করছি।'
এরকম নিপীড়ন যারা করে তারা একটা নির্দিষ্ট দলের মন্তব্য করে এ শিক্ষক বলেন, 'পূর্বে তাদের নামে একাধিক অভিযোগ এলেও প্রশাসন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি।'
একই বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, 'ধর্ষকের কোনো পরিচয় নেই। তার একটাই পরিচয় সে ধর্ষক। আমরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষকদের মদত দিয়ে কোনো প্রশাসন টিকে থাকতে পারবে না, আমরা থাকতে দেব না।'
তিনি জানান, তারা উপাচার্যের কাছে তিনদফা দাবি জানিয়েছেন। সেগুলো হলো: ধর্ষণকারীর বিচার করতে হবে, একঘণ্টার মধ্যে ফৌজদারি মামলা করতে হবে ও মামলার সকল খরচ বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করতে হবে, এবং তিনদিনের মধ্যে ক্যাম্পাসকে বহিরাগত মুক্ত করতে হবে ও অবৈধ ছাত্রদের বের করতে হবে।
প্রসঙ্গত, শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে কৌশলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রলীগ নেতা ও একজন বহিরাগত যুবকের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্তরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত যুবক মামুনুর রশীদ মামুন। তাদের মধ্যে মোস্তাফিজ মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।
অভিযোগ রয়েছে, অপরাধের পর মোস্তাফিজকে পালাতে সহায়তা করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের হাসানুজ্জামান, একই বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের সাগর সিদ্দিক ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান সাগর।
ঘটনার দিন রাতে ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় মোস্তাফিজ ও মামুনুর রশীদকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বাকি চারজনের বিরুদ্ধে মারধর ও আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শনিবার মধ্যরাতে মোস্তাফিজুর রহমান, হাসানুজ্জামান, সাগর সিদ্দিক ও সাব্বির হাসান সাগরকে গ্রেফতার করে আশুলিয়া থানা পুলিশ।
ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস অ্যান্ড ট্রাফিক) আব্দুল্লা হিল কাফি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।'