ডেইলি স্টারের সাংবাদিকের বাসা থেকে পড়ে গৃহকর্মীর মৃত্যুর তদন্ত-বিচার চায় হিউম্যান রাইটস ফোরাম
ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার-এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারের বাসা থেকে পড়ে এক কিশোরী গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সংগঠনটি ভুক্তভোগী পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানায়।
এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার একটি আদালত মোহাম্মদপুরে নিজ বাড়িতে প্রীতি উরাং নামক কিশোরী গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারের জামিন নামঞ্জুর করে তাদেরকে কারাগারে পাঠান।
এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধ এবং গৃহকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এইচআরএফবি গৃহকর্মী হিসেবে শিশুদের ব্যবহার বন্ধ করা এবং এ ব্যাপারে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এছাড়া গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন এবং এ নীতির আলোকে গৃহকর্মীদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়নের আহ্বানও জানিয়েছে এটি।
সংগঠনটি গৃহকর্মীদের কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করা এবং গৃহকর্মীদের নিবন্ধন জোরদার করার জন্য রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো থেকে সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথাও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে।
এর আগে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় ওই সাংবাদিকসহ তার পরিবারের তিন সদস্যকে আটক করে পুলিশ।
পরদিন বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (মোহাম্মদপুর জোন) আজিজুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, নিহত মেয়ের বাবা লোকেশ উরাং বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় পেনাল কোডের ৩০৪(ক) ধারায় মামলা করেছেন।
পেনাল কোডের ওই ধারা অনুযায়ী, কারও বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত কারণে যদি কেউ মারা যান বা আহত হন, তাহলে বিচারে অভিযুক্ত ব্যক্তির সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
৬ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বাসার সাহায্যকারী ১৫ বছর বয়সি প্রীতি উরাং নয় তলা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। পরে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
ঘটনার পর পুলিশ সাংবাদিকের দুই সন্তানসহ পরিবারের চার সদস্যকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোহাম্মদপুর থানায় নিয়ে যায়। পরদিন দুই সন্তানকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মামলার এজাহারে লোকেশ উরাং বলেন, আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে বছর দুয়েক আগে প্রীতিকে ওই বাসায় কাজে দেন তিনি। এই সময়ে তিনিও মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি, মেয়েকেও বাসার মালিক পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেননি। লোকেশ মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বাড়ির মালিকের সঙ্গে মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলার ওপর নির্ভর করতেন।
বাদী লোকেশ উরাং জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোড এলাকার ২/৭ নম্বর অ্যাপার্টমেন্টের অষ্টম তলা থেকে ফ্ল্যাটের ড্রয়িংরুমের জানালায় সেফটি বার না থাকায় প্রীতি পড়ে যায়। তিনি আরও বলেন, গত বছর ৪ আগস্ট অনুরূপ আরেকটি ঘটনায় জানালা থেকে পড়ে গিয়ে আরও একজন গৃহকর্মী গুরুতর আহত হয়েছিল।
লোকেশ বারবার এ ধরনের দুর্ঘটনার জন্য বাড়ির মালিক ও বাসিন্দাদের অবহেলা এবং অসতর্কতাকে দায়ী করেছেন। এছাড়া এ ধরনের ঘটনার মূল কারণ হিসেবে জানালায় সেফটি বার না থাকার বিষয়টি জোর দিয়ে উল্লেখ করেছেন তিনি।
এছাড়া মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতদের তাদের জানালায় সেফটি বারের অনুপস্থিতি এবং এ ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তির প্রকৃতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা সন্তোষজনক কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
এর আগে গত বছরের ৬ আগস্ট সৈয়দ আশফাকুল হকের বাড়ির বারান্দা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন আরেক গৃহকর্মী ফেরদৌসী। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় আহত ওই গৃহকর্মীর মা জোসনা বেগম বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর সৈয়দ আশফাকুল হক, তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকার ও আসমা আক্তার নামে আরেকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।