রাফায় ইসরায়েলি পরিকল্পিত হামলা রুখতে আইসিজেকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান দক্ষিণ আফ্রিকার
গাজা উপত্যকার ঘনবসতিপূর্ণ দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাতে আক্রমণের পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল। এমতাবস্থায় দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে (আইসিজে) উক্ত অঞ্চলে বসবাসকৃত ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষায় অতিরিক্ত জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে।
গতমাসে আইসিজে-তে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলে মামলা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঐ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সৈন্যদের গণহত্যা থেকে বিরত রাখতে ইসরাইলকে দেশটির ক্ষমতার মধ্যে সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
এদিকে ইসরায়েল গাজায় হামলার ক্ষেত্রে গণহত্যার সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। একইসাথে আদালতকে সরাসরি মামলাটি প্রত্যাখ্যান করতে বলেছে।
ইসরায়েলের দাবি, তারা আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করে এবং গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা করার অধিকার রাখে।
গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের আক্রমণের মুখে প্রায় ১০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি রাফাতে আশ্রয় নিয়েছে। সম্প্রতি ইসরায়েল জানায়, তারা রাফাতে স্থল হামলা সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা করছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে ইস্যুকৃত এক বিবৃতিতে দেখা যায়, "গতকাল (সোমবার) আদালতে পাঠানো আবেদনে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার বলেছে যে, রাফাতে নজিরবিহীন সামরিক আক্রমণের ইসরায়েলি ঘোষণায় আমরা উদ্বিগ্ন। এর ফলে আরও বড় আকারের হত্যাকাণ্ড, ক্ষতি ও ধ্বংসযজ্ঞ ঘটবে।"
একইসাথে দক্ষিণ আফ্রিকা মনে করে, ইসরায়েলের এমন পরিকল্পনা গণহত্যা কনভেনশন এবং ২৬ জানুয়ারির আদালতের আদেশ উভয়েরই গুরুতর এবং অপূরণীয় লঙ্ঘন।
দক্ষিণ আফ্রিকার এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইসিজের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে অতীতে আইসিজে কখনও কখনও পরিস্থিতি পরিবর্তনের সাপেক্ষে অতিরিক্ত জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
গাজায় গণহত্যা হয়েছে কি-না, দক্ষিণ আফ্রিকার আনা এই মামলাটির মূল বিষয়ে আদালত এখনও রায় দেয়নি। তবে এটি গাজার ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। একইসাথে আদালত ইসরায়েলকে জ্বালানিসহ অত্যধিক প্রয়োজনীয় মানবিক সাহায্যের অনুমতি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
জোহানেসবার্গ থেকে আল জাজিরার রিপোর্টার ফাহমিদা মিলার বলেন, "আইসিজের মূল আদেশ অনুসরণ করা হবে কি-না তা নিয়ে সবসময় প্রশ্ন রয়েছে। কেননা যখন আদেশ দেওয়া হয়েছিল, তখন পর্যবেক্ষণ এবং বাস্তবায়নের বিষয়ে উদ্বেগ ছিল। এখন পর্যন্ত ইসরায়েলকে কার্যতভাবে পিছিয়ে যেতে দেখিনি।"
ফাহমিদা মিলার আরও বলেন, "ইসরায়েল কয়েক সপ্তাহ আগে দেওয়া আদেশ ইতোমধ্যেই লঙ্ঘন করেছে। তাই দক্ষিণ আফ্রিকা চায়, আদালতকে অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।"
এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদনের দিনই ইসরায়েলি বাহিনী রাফাহতে ১৪টি বাড়ি এবং তিনটি মসজিদে হামলা চালায়। সেখানে কয়েক ডজন লোককে হত্যা করেছিল এবং শত শত বাস্তুচ্যুত পরিবার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে, চলমান গাজা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৮,৪৭৩ জন মানুষ নিহত হয়েছে। যার শতকরা ৭০ ভাগই নারী ও শিশু।
একইসাথে গাজার জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আর মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশেরও বেশি মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে দিন পার করছে।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান